সোম রায়, অমৃতসর: সানি দেওল। ১৭ তম লোকসভা ভোটে পাঞ্জাবের সবথেকে হাই প্রোফাইল প্রার্থী। দিল্লির মসনদে পাঞ্জাব থেকে যেতে পারেন মাত্র ১৩ জন সাংসদ। সেই লড়াইয়ে এবার অংশ নিয়েছেন মোট ২৭৮ জন প্রার্থী। তার মধ্যে জনপ্রিয়তার নিরিখে সানি দেওলের ধারেকাছে শুধু কিরণ অনুপম খের (বিজেপি) ও পবন বনশল (কংগ্রেস)। তবে এই দু’জনই লড়ছেন চণ্ডীগড় থেকে। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হওয়ায় এই কেন্দ্র পাঞ্জাবের মধ্যে পড়ে না।
গুরদাসপুরের যা ইতিহাস, তাতে সেলিব্রিটি প্রার্থী না-হলে এখানে জিততে পারে না বিজেপি। এই তত্ত্বে ভর করেই সানি দেওলকে প্রার্থী করা। যাঁর প্রচারে সেলফি তুলতে দেখা যাচ্ছে কংগ্রেস সমর্থকদেরও। তাঁদের বক্তব্য, ‘বিজেপি প্রার্থী পরে, আগে তো আমাদের সান্নি পাজি।’ আপাতত এখানে সানি দেওলকে প্রার্থী করার ছকে একশো শতাংশ সফল বিজেপি। তবে গুরদাসপুরে যাই হোক, তাঁর গ্রামের ছবিটা একেবারেই অন্য। এমনটাই দাবি করলেন অমৃতসরের কংগ্রেস মেয়র করমজিৎ সিং সান্ধু রিন্টু।
একদিকে চলছে অমৃতসর কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী গুরজিৎ সিং আউজলার প্রচার। অন্যদিকে রিয়ালটো চকের পার্টি অফিসে বসে বেসক্যাম্প চালাচ্ছেন মেয়র করমজিৎ। সকাল থেকেই প্রচণ্ড ব্যস্ত। একের পর এক ফোন। তার মাঝেই সানি দেওল প্রসঙ্গ উঠতে ব্যঙ্গের হাসি হাসলেন করমজিৎ। বললেন, “আমাদের কাছে সানি কোনও ফ্যাক্টর নয়। উলটে ওকে প্রার্থী করে আমাদের সুবিধাই হয়েছে। এমনিতেই ওখানে দু’বছর আগের বাই ইলেকশনে আমরা প্রায় দু’লাখ ভোটে জিতেছিলাম। এবার তা বাড়বে আরও। বরং সানিকে প্রার্থী করে ওর গ্রামের এলাকা ফতেহগড় সাহিব কেন্দ্রে আমাদের সুবিধা হল।”
কিন্তু কীভাবে? এক কর্মীকে ইশারা করে ডেকে বললেন ডাঙ্গোঁ গ্রামের সরপঞ্চ (পঞ্চায়েত প্রধান)-কে ফোনে ধরতে। ফোনের উলটোদিক থেকে অমৃতপাল সিং ববি যা বললেন, তাতে চোখ কপালে উঠে যেতে পারে। “যাঁরা নিজেদের গ্রামকে ভুলে যান, তাঁরা পাঞ্জাবের খেয়াল কীভাবে রাখবেন?” বলছিলেন দেওল পরিবারের গ্রামের প্রধান।
[ আরও পড়ুন: হাতিয়ার উন্নয়ন, নুসরতকে ভোটদানের আরজি অভিনেতা সোহমের ]
একের পর এক তোপ উড়ে এল দেওল পরিবারের বিরুদ্ধে। গ্রামের কোনও উন্নয়নের আবেদনে সাহায্য না করা। গ্রামকে ভুলে যাওয়া। ‘বহিরাগত’ আখ্যা দেওয়া। বাদ গেল না কোনওটাই। বলছিলেন, “২০১৩ সালে ধরম পাজির কাছে মুম্বই গিয়েছিলাম। ওঁকে দিওয়ালিতে গ্রামে আসার নেমতন্ন করতে। উনি এলেন। গ্রামে ওদের আড়াই একরের উপর জমি পড়ে আছে। ওখানে একটা স্টেডিয়াম বানানোর প্রস্তাব দিই। রাজি হননি। তিন বছর বাদে এক আত্মীয়কে ওই জমি বেচে দেন।” আরও জুড়লেন, “তিন বছর বয়সে মা-বাবার সঙ্গে উনি গ্রাম ছাড়েন। তারপর ওই ২০১৩ সালে একবার এসেছিলেন। ওর ছেলেরা তো কখনও গ্রামে পা-ই দেয়নি।”
সানির ভাই ববি দেওলের অন্ধ ভক্ত ছিলেন অমৃতপাল। নিজের ‘পিণ্ড’-এর ছেলের নামে রেখেছিলেন নিজের ডাক নাম। কিন্তু এখন দেওল পরিবারের উপর বিরক্ত তাঁরা। অমৃতপালের বক্তব্য অনুযায়ী তাঁদের ডাঙ্গোঁ গ্রামে মোট ১৯০০ ভোটার আছে। বললেন, “আগেরবার আমরা আম আদমি পার্টিকে ভোট দিয়েছি। এবার সবাই মিলে ঠিক করেছি কংগ্রেসকে দেব।”
[ আরও পড়ুন: ‘আগে জানলে প্রার্থী হতে দিতাম না’, পুত্র সানিকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ বাবার ]
এরই মাঝে গতকাল গুরদাসপুরে সানি দেওলের গাড়ির চাকা বার্স্ট করে। তার গাড়ি-সহ অন্য তিনটি গাড়ির মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। তবে কেউই আহত হননি। অবশ্য এর জেরে ফতেহগড় চুরেইনের প্রচার বাতিল করেন সানি পাজি। একদিকে নিজের গ্রাম তাঁর সম্পর্কে বিমুখ, অন্যদিকে গাড়ি দুর্ঘটনা- সবমিলিয়ে খুব একটা সুখে যে তিনি নেই, তা বলাই বাহুল্য!
ভোট-বৈতরণী পার করতে সেলিব্রিটি তাস ফেলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাফল্য আসে। এক্ষেত্রেও হয়তো গুরদাসপুরে ফুটবে পদ্ম। কিন্তু কাজটা কি মাখনে ছুরি চালানোর মতো সহজ হবে? না কি বেশ খাটতে হবে ‘সান্নি পাজি’-কে। সাইড এফেক্ট হিসাবে ফতেহগড় সাহিবে কি সুবিধা পেয়ে যাবে কংগ্রেস? উত্তর পেতে অপেক্ষা আর মাত্র কয়েক দিনের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.