শম্পালী মৌলিক: তাঁদের দেখা গেল রাজকুঠুরিতে বসে একমনে টাকা গুণতে। হাতে একগোছা পুরনো নোট। রাজামশাই একমনে গুনছেন- ‘দু’শো পঁচানব্বই, দু’শো ছিয়ানব্বই, দু’শো সাতানব্বই…’। রানিমা এসে হাতে তালি দিয়ে যোগ দিলেন– ‘তিনশো’! রাজা তখন লাঞ্চের কথা ভাবছেন। কিন্তু রানির মুখে থানকুনি পাতার ঝোল আর শশার রায়তা জাতীয় মেনু শুনে মুখ ভেটকে গেল তাঁর। মশা মারতে শুরু করলেন চরম পারফেকশন নিয়ে! তো তাঁরা কারা?
তাঁদের শেষবার একত্রে দেখা গিয়েছিল ‘আরোহণ’ ছবিতে। প্রায় আট থেকে দশ বছর পরে সেই জুটি আবারও ফিরে এল। কোন জুটি? ‘ঝিন্দের বন্দি’, ‘অশনি সংকেত’ বা হাল আমলের ‘দেবীপক্ষ’ ছবির সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়-সন্ধ্যা রায় জুটির কথা হচ্ছে। তাঁরা ফিরে এলেন ‘উইন্ডোজ’ প্রযোজিত অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের ‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’ ছবিতে। হরিণগড়ের রাজদম্পতির ভূমিকায় এবার তাঁদের পাওয়া যাবে। গত শনিবার বারুইপুর রাজবাড়িতে ছিল তাঁদের প্রথম দিনের শুটিং। লাঞ্চের পর থেকেই শুটিং ফ্লোর জমজমাট। একজন ‘চারুলতা’র অমল। অন্যজন ‘ঠগিনী’র নায়িকা। তিনি এখন এমপিও বটে! শুটিং ফ্লোরে সংখ্যায় পুলিশ কিছু কম ছিল না। এদিন আবার পরিচারিকাকে (অভিনয়: খ্যাদা) সঙ্গে নিয়ে খালি পায়ে রানিমার (সন্ধ্যা রায়) ঘুঁটে দেওয়ার দৃশ্যও তোলা হল। সে এক কাণ্ড!
[ফের সত্যের সন্ধানে ‘সোনাদা’, আসছে ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’র সিক্যুয়েল]
শুটিং-এর মাঝে ক্ষণিকের জন্য মুখোমুখি পাওয়া গেল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে। অনায়াসে বলে দিলেন- ‘‘না আমি ‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’ পড়িনি। তবে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের লেখা আমার ভাল লাগে। আর সন্ধ্যা রায়ের কথা যদি বলেন, একসঙ্গে আমরা বহু ছবি করেছি। অন্তত দশটা তো বটেই। শেষ ছবি ছিল ‘আরোহণ’। আবার স্ক্রিন শেয়ার করাতে কী বলব? আমাদের ফিল্মে সবই হয়। যখন যা আসে করতে হয়, এই আর কী! উনি মাঝে প্রায় দশ বছর ছবি করেননি। কিন্তু আমি তো কাজ থামিয়ে রাখিনি। করেই চলেছি। খুব বেশি যে আকর্ষণের জায়গা থেকে এই ছবিটা করতে রাজি হয়েছি এমন নয়। এটাই তো আমার পেশা। অপেক্ষাকৃত একজন ভাল লেখকের গল্প থেকে যখন এই ছবিটা হচ্ছে নিশ্চয়ই এর ভিতরে ভাল বিষয়বস্তু থাকবে।”
পরিচালক অনিন্দ্য বলছিলেন, ‘আমার একটু টেনশন ছিল এত বড় মাপের অ্যাক্টর সব।’ শুটিং ফ্লোরেই দেখা গেল মনোজ (সোহম মৈত্র) আর সরোজ (পূরব শীল আচার্য) ঘুরে বেড়াচ্ছে। আজ ওদের শট নেই। এই পূরব হল শ্রীকান্ত আচার্যর ছেলে। যার অভিনয়ে হাতেখড়ি হচ্ছে এই ছবিতে। আর হরিণগড়ের হারিয়ে যাওয়া রাজপুত্র অর্থাৎ কন্দর্পনারায়ণের ভূমিকায় থাকছে চমক। আবির চট্টোপাধ্যায় অভিনয় করছেন এই চরিত্রে। গোয়েন্দা বরদাচরণ হয়েছেন ব্রাত্য বসু। দজ্জাল পিসিমার ভূমিকায় সোহাগ সেন। আর ডাকাত সর্দার শিলাজিৎ। তিনি আবার এই ছবির মিউজিকও করছেন। ইন্টারেস্টিং দু’টি চরিত্রে পাওয়া যাবে রজতাভ দত্ত এবং অপরাজিতা আঢ্যকেও।
[খাবারের স্বাদে মানবচরিত্রের রহস্য ফাঁস করল প্রতীমের ‘মির্চি মালিনি’]
বহুকাল বাদে এই ছবিটা করতে রাজি হওয়ার কারণ জানতে চাওয়ায় সন্ধ্যা রায় বললেন, ‘অনেকদিন ছবি করিনি। নানা লোক অ্যাপ্রোচ করেছেন। কিন্তু শিল্পী সত্তা তো মরে না! অভিনয় করার ইচ্ছে জাগেই, যতই অন্য কাজ করি। অনেককে না করেছি। কিন্তু এই ছবিটায় যেহেতু আমার অল্প দিনের কাজ, তার ওপর বাচ্চাদের নিয়ে গল্প তাই ইচ্ছে হল করতে। শিশুদের এন্টারটেন করার মতন তেমন ছবি হয় না আজকাল। সেই গ্রাউন্ডেই আমি ভেবেছি এই ছবিটা করার কথা।’ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বহুদিন পর আবার- সেই প্রসঙ্গ তুলতেই অভিনেত্রী বললেন, ‘এটাও একটা পয়েন্ট বটে। ওর সঙ্গে অনেক কাজ করেছি। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আরও একটা ছবি হোক না। মানুষ দেখুক আমাদের। আমরা একইসঙ্গে অভিনয় করি। অভিনয় করার তো একটা তৃপ্তি আছে। সেখান থেকে আমার মনে হয়েছে। এই ছবিটা করলে মন্দ হয় না। আমরা বিগত পঞ্চাশ বছর ধরে ফিল্মে বিভিন্ন চরিত্র একসঙ্গে কাজ করেছি। এসব ছবির মাধ্যমে মানুষ আমাদের গ্রহণ করেছে। এবং মানুষ চাইছে যে আবার আমাদের দেখবে। প্রচুর চিঠি, ফোন পাই। দেখা হলেই লোকে বলে, তাই আরও মনে হয়েছে শেষ প্রান্তে এসে আরেকটা কাজ হোক না! আর অনিন্দ্যর নাম শুনেছিলাম কিন্তু আগে পরিচয় ছিল না। ওর লেখা পড়েছি, ভাল লাগে।’
[মায়ের শাড়ি পরে জাতীয় পুরস্কার নিতে গেলেন শ্রীদেবীর মেয়ে জাহ্নবী]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.