গৌতম ভট্টাচার্য: দ্বিতীয়বার বাংলার সংগীতজীবনে একই ঘটনা ! প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে চাঁদ সওদাগরের মনসা পুজোর মতো বাঁ হাতে নিয়মরক্ষার দান দেওয়া হচ্ছিল বাংলার আরও এক প্রবাদপ্রতিম সঙ্গীত শিল্পীকে। এবং ৮৭ সালে তিনি হেমন্ত মুখোপাধ্যায় যা করেছিলেন ,তাই করলেন গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। অত্যন্ত অপমানিত এবং অসম্মানিত বোধ করে ফিরিয়ে দিলেন পদ্মশ্রী।
মঙ্গলবার শেষ বিকেলে কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের পক্ষ থেকে সন্ধ্যা মুখোপ্যাধ্যায়কে ফোনে যোগাযোগ করা হয়। কিংবদন্তি শিল্পী ইদানীং খুব অসুস্থ। দিনচারেক আগে টয়লেটে পড়ে গেছিলেন। সামান্য সর্দিকাশিও হয়েছে। সব মিলিয়ে এই নব্বই বছরে শরীর নিয়ে এত জেরবার যে ফোন ধরছেন না। তবু দিল্লী থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের জরুরি ফোন বলায় কোনও রকমে ধরেন । তাঁকে হিন্দিতে বলা হয় আমরা আগামীকাল আপনাকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করতে চাই। আপনি কি নেবেন ? তাহলে অন্যান্য পুরস্কারপ্রাপকদের সঙ্গে আগামিকাল সকালের মধ্যে আপনার নামও ঘোষণা করা হবে ?
সন্ধ্যা প্রথমটা থমকে যান। এই ভঙ্গিতে যে পদ্ম খেতাব দেওয়া হতে পারে তিনি ভাবতেই পারেননি। তারপর তাঁর মনে হয় এতবছর ধরে সংগীতের জন্য এতো কন্ট্রিবিউশনের পর পদ্মশ্রী ? তাঁর সমসাময়িকেরা যেখানে যোগ্য কারণেই কেউ ভারতরত্ন, কেউ পদ্মবিভূষণ, নিদেনপক্ষে পদ্মভূষণ, সেখানে তিনি কিনা পদ্মশ্রী যে সম্মানে মুম্বই সঙ্গীত জগতের অনেকেই ভূষিত। তাঁর আরও খারাপ লাগে শেষমুহূর্তে এমন অফারের ধরনে।সিনিয়রিটি এবং কন্ট্রিবিউশনের কোনও তোয়াক্কা না করে যে ভঙ্গিতে তাঁকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। দ্রুত জানিয়ে দেন এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছেন। দিল্লির আমলাকে বলেন , “মেরা দিল নাহি চাহতা হায়। আর একটা কথা জেনে রাখুন। আমার শ্রোতারাই আমার পুরস্কার।”
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে যাঁরা চেনেন ,তাঁরা জানেন তিনি মাটির মানুষ। সংবাদ প্রতিদিন থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করলে শিল্পী অন্ত্যন্ত অভিমানী এবং কিছু পরে স্বভাববিরুদ্ধ রাগত ভঙ্গিতে বললেন,”এরা কী মনে করে বলুন তো আমার নব্বই বছরে এসে এভাবে অপমান করবে ? শেষ মুহূর্তে এসে এভাবে প্রস্তাব দিচ্ছে পদ্ম পুরস্কারের। তাছাড়া আমি ভারতবর্ষে সেই বিরল গায়কদের একজন যে অসংখ্য বাণিজ্যিক ছবির গান শুধু গায়নি অনেক ক্লাসিক্যাল রেকর্ড করেছে। অ্যালবাম বার করেছে বিভিন্ন ধরণের গানের। আমি একজন ক্লাসিক্যাল শিল্পীও। উস্তাদ গুলাম আলি খানের কাছে গান শিখেছি। উস্তাদ আমির খানের কাছে
তালিম নিয়েছি। একজন নামী ক্ল্যাসিক্যাল শিল্পীকে দেখান যাকে এই ভাবে পদ্মশ্রী দিয়ে অসম্মান করা হয়েছে ? “
গলা ধরে আসছিল শিল্পীর কথা বলতে বলতে। বোঝাই যাচ্ছিল তিনি অসুস্থ। তার ওপর পদ্ম খেতাব ঘিরে এই ভঙ্গিতে ফোনে খুব উৎপীড়িত। ফোন রাখার আগে শুধু বললেন,”বাংলার মানুষ আশা করি বুঝবে কোন যন্ত্রণা থেকে পদ্ম খেতাব ফিরিয়ে দিলাম। সত্যি আমার এসব খেতাবের দরকার নেই। জীবনের প্রান্তে এসে ওদের এতগুলো বছরের বুক ভরা ভালোবাসাই আমার পুরস্কার।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.