অভিজিৎ ভট্টাচার্য: যখন সবাই স্টেটাস সিম্বল হিসাবে মারুতি এস্টিম চড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তখন আর ডি বর্মন তাঁর পুরনো ফিয়াট চালিয়েই স্টুডিওয় আসতেন। গাড়িতে কখনও ওঁর পাশে বসে দেখেছি সিগন্যালে কোনও ভিখারি এসে দাঁড়ালে পকেটে হাত দিয়ে যা উঠত উনি সেটাই দিয়ে দিতেন। তখনকার দিনে পঞ্চাশ টাকা মানে এখনকার পাঁচ হাজার টাকা, সেই পঞ্চাশ টাকাও আমি ভিখারিকে দিতে দেখেছি। ওঁর মনটা ছিল রাজার মতো। কিন্তু যখন ওঁর কাছে কোনও কাজ ছিল না, সেই সময়টাও আমি দেখেছি। গানের জগতে যাকে কেউ চেনে না তার জন্য কাজ করতে হয়েছে ওঁকে। অনেককে ফোনে রিকোয়েস্ট করেছেন ওই ক্যাসেটে কাজ করার জন্য।
যেদিন আমি প্রথম স্টুডিওয় রেকর্ডিংয়ে যাই উনি এমনভাবে আমার সঙ্গে কথা বলতে শুরু করলেন যে আমি ভয় বা টেনশন কিছুই বুঝতে পারিনি। কাজটা এত সুন্দরভাবে হয়েছিল যে, আমি বুঝতেই পারিনি আমি এত বড় মাপের একজন মানুষের সঙ্গে কাজ করলাম। উনি ভাল কাজটা ঠিক বার করে নিতেন। কখনও বলতেন না এটা ঠিক হয়নি। যেমনই গাই না কেন বলতেন দারুণ হয়েছে। শুধু একটা ছোট্ট ইনপুট দিয়ে দিতেন। যেমন রান্নায় নুন কম হলে বলতেন দারুণ হয়েছে, শুধু আর একটু নুন দিলেই ফাটাফাটি হবে। আমাকে অনেকেই বলেন, অভিজিতের একটা অ্যাটিটিউড আছে, খুব নাক উঁচু। আমি বলব তাঁরা ঠিক বলেন। আমিই একমাত্র সিঙ্গার যাকে আর ডি বর্মন ইন্ট্রোডিউস করেছেন, তার তো অ্যাটিটিউড থাকবেই। আমি কার সাথে কাজ করেছি, সেটা তাদের ভাবতে হবে। আমার কাজের স্টাইল তো ওঁর মতোই রয়্যাল হবে।
[ বর্ষবরণের পার্টিতে এক্সপেরিমেন্টাল রান্না ভুলেও করবেন না, কেন জানেন? ]
আর ডি বর্মনের মিউজিক ইলিশ মাছের মতো। যার অন্য কোনও মশলা লাগে না। এখন সবাই সেটাকে তাদের মতো রান্না করে পরিবেশন করছে। কেউ ভাপে বানাচ্ছে, কেউ গরম মশলা দিয়ে করছে। আর ডি বর্মন যা মিউজিক করে গেছেন তাই দিয়ে এখন অনেকে করে খাচ্ছে। খুব কষ্ট হয় যখন দেখি ওঁর মিউজিক নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট হচ্ছে। সোনাকে লোহার কোটিং দিয়ে পরিবেশন করা হচ্ছে। যারা এই গান শুনছে আমি বলব তাদের দোষ অনেক বেশি। আমিও আর ডি বর্মনের গান গেয়ে স্কুলের ফিস দিয়েছি। কিন্তু যারা ওঁর সম্পর্কে কিছুই জানে না তারাও ওঁর গান নিয়ে কাজ করছে। আর ডি বর্মনের মিউজিক ছিল বলেই আজও মিউজিক বেঁচে আছে।
আর ডি বর্মনের উত্তরসূরি হিসাবে আমি কাউকে দেখতে পাই না। আর ডি বর্মন একজনই।
অনুলিখন: শ্যামশ্রী সাহা
[ স্ত্রীর সঙ্গে সময় কাটানো নাকি শুটিং, বর্ষশেষে কী প্ল্যান আয়ুষ্মানের? ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.