কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এসে এমনই ইচ্ছে প্রকাশ করলেন সুজিত সরকার। তাঁর পরের পিরিয়ড ড্রামা ফিল্মে ইরফান খানকে কাস্ট করতে চান। মুখোমুখি বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আপনার ছবি ‘অক্টোবর’-এর স্ক্রিনিং হয়ে গেল। কেমন ফিডব্যাক পেলেন?
সুজিত: খুব ভাল ফিডব্যাক পেয়েছি। অনেকেই আমাকে মেসেজ করেছে। অনেকেরই মনে করেছে ইট’স আ ম্যাচিওর ফিল্ম ফর মি। আর কোনও ফেস্টিভ্যালে নিজের ছবি দেখানো হলে খুবই আনন্দ হয়। এটা অনেকটা ছোট বাচ্চাদের যেমন আনন্দ হয় তেমন!
এবার কোনও ছবি দেখলেন?
সুজিত: না সুযোগ পাইনি। ফিলিপ চয়েসের ছবি দেখার ইচ্ছে ছিল। ‘পথের পাঁচালী’-র রেস্টোর্ড ভার্সনটাও দেখার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু সময় পেলাম না।
কলকাতা আন্তর্জাতিক ফিল্মোৎসব নিয়ে আপনার কী মতামত?
সুজিত: আমি ২০০৫-এর ফেস্টিভ্যাল অ্যাটেন্ড করেছি। ২০১২-তে পার্টিসিপেট করেছি। আমার যেটা সবথেকে বেশি করে মনে হয়, দিস ইজ দ্য মোস্ট ফ্রেন্ডলিয়েস্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। ভেরি ভেরি ওয়ার্ম। সবাই মিলে ছবি দেখার একটা আনন্দ আছে। পুজোর সময় যেমন আনন্দ হয়, অনেকটা তেমন। সব ফেস্টিভ্যালে এরকম পরিবেশ পাওয়া যায় না। কোথাও কোথাও সেলিব্রিটি ওরিয়েন্টেড হয়। কিন্তু কলকাতার পরিবেশটাই আলাদা। আর এখানে সবাই সিনেমা ভালবাসে এবং ওয়ার্ল্ড সিনেমা সম্পর্কে একটা ধারণা আছে সেটা বোঝা যায়। আর কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের যে প্রাইজ মানি- এত টাকা আর পৃথিবীতে কোথাও দেওয়া হয় বলে মনে হয় না।
‘অক্টোবর’ এমন একটা ছবি বা ভাবনার দিক থেকে, কাস্টিংয়ের দিকে খুব আনইউজাল। বরুণ ধাওয়ান এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আপনার মায়ের শেষ জীবনে কোমা স্টেজে চলে যাওয়া অনেকটাই দায়ী এই ছবির তৈরি করার ক্ষেত্রে। শুধু কি সেটাই?
সুজিত: ওয়েল, যদি আমার ছবির টাইটেল লক্ষ করো তাহলে দেখবে সেখানে বলা আছে, ‘ইট’স নট এ লাভ স্টোরি বাট এ স্টোরি অফ লাভ।’ আমার ভিতরে একটা ভাবনা কাজ করছিল, আজকের যুগে এমন কোনও সম্পর্ক তৈরি হওয়া কি সম্ভব যেখানে কোনও এক্সপেক্টেশন থাকবে না! কারণ আজকের যুগে সম্পর্কে অনেক এক্সপেক্টেশন থাকে, অনেক ডিমান্ড থাকে। আমরা ফিগার আউট করার চেষ্টা করছিলাম যে অন্য যে কোনও সম্পর্কে মা-সন্তানের মধে্য যে আনকন্ডিশনাল ভালবাসা থাকে সেটা এগজিস্ট করতে পারে কি না। মা যেমন সন্তানকে তার সমস্তটা দিয়ে ভালবাসে, কোনও এক্সপেক্টেশন ছাড়াই তেমন ভালবাসা অন্য আর কোনও সম্পর্কে এগজিস্ট করতে পারে কি না। সেইখান থেকে ছবির মূল ভাবনাটা এসেছে। তবে হ্যাঁ, কোমায় চলে যাওয়ার অংশটা বা হোটেল ইন্ডাস্ট্রির ভিতরকার কথা আমার জীবন থেকে নেওয়া। আমি নিজে হোটেল ইন্ডাস্ট্রিতে কয়েক বছর কাজ করেছি। সেখানে কীভাবে কাজ হয় আমি জানি। আর আমার মাকে হারানোর আগে প্রায় দু-তিনমাস আমি টানা হাসপাতালে কাটিয়েছি। আমার মা কোথায় ছিল, সেই অবস্থাটা আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। এই জগৎটা খুব আলাদা। কারও আত্মীয় কোথায় আছে আর আর বাড়ির লোক যারা হাসপাতালে থাকে, তাদের পৃথিবীটা ওই ওয়ার্ডটুকু ঘিরেই তৈরি হয়। বাইরের জগতের সঙ্গে কোনও সম্পর্কই থাকে না। খুব আলাদা এই পৃথিবী।
[ পাহাড়ি রাস্তায় সাইকেল চালালেন ভাইজান, ব্যাপারটা কী? ]
‘অক্টোবর’-এর স্ক্রিপ্ট লেখা কি সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং আপনার কাছে?
সুজিত: ওহ্ ইয়েস, ইট ওয়াজ। যদি বাইরে থেকে দেখো তাহলে ইট’স এ ভেরি ফ্ল্যাট ফিল্ম। ইট গোজ ভেরি স্ট্রেট। আর শক্ত কারণ এই ছবিতে নীরবতা নিয়ে ডিল করতে হয়েছে। আমি চেয়েছিলাম দর্শক ‘ড্যান’ এবং ‘শিউলি’-র ক্রাইসিস যাপন করুক। কিংবা মায়ের ক্রাইসিসটা। আর এটা খুব কঠিন কারণ যখন এক, দেড় বছর ধরে কেউ কোথায় থাকে, বাকি সব কিছু থমকে যায়। এভরিথিং বিকাম স্টিল। আর এমন ছবি যেখানে সবকিছুই থমকে আছে, আর কিছুই ঘটছে না- তৈরি করা একটা চ্যালেঞ্জ।
আপনি সম্প্রতি বলেছেন, ছবির জন্য বিশাল প্রোমোশনের দরকার নেই। নিজের ছবির জন্যও সেইভাবে প্রোমোশন করেন না। এই কনভিকশন কোথা থেকে আসে?
সুজিত: আমার মনে হয় প্রোমোশন নিয়ে বলিউড খুব বাড়াবাড়ি করছে ইদানীং। হলিউড কিন্তু এতটা বাড়াবাড়ি করে না। ট্রেলার বের করে, যেটা অর্ধেক কাজ করে দেয়। আই ফিল বলিউডের মার্কেটিং টিম অনেক টাকা ব্যয় করে প্রায় ট্যাবলেট গুলে খাইয়ে দেওয়ার মতো করে খাইয়ে দেয়। এটা আমাদের ছবি, এটা দেখতেই হবে- মানে জবরদস্তি আর কী! এত টাকা প্রোমোশনে খরচ না করে অন্য কিছুতে ব্যয় করলে পারে। দিস ইজ টু মাচ।
সম্প্রতি দেখা গিয়েছে ‘অন্ধাধুন’, ‘স্ত্রী’, ‘বধাই হো’-র মতো স্মল বাজেট ছবি ভাল ব্যবসা করেছে, অথচ বিগ ব্যানার এবং বিগ বাজেট ছবি ‘ঠগস অফ হিন্দোস্তান’ মুখ থুবড়ে পড়েছে। আপনার কী মনে হয়, কেন?
সুজিত: ইট’স এ ক্লিয়ার সিগনাল অডিয়েন্স ইজ গিভিং ফর লাস্ট কাপ্ল অফ ইয়ারস। প্লিজ, আমাদের ভাল ছবি, ভাল গল্প বলুন, চিটিং করবেন না। আমার মনে হয় ইট অল স্টার্টেড উইথ ‘ভিকি ডোনার’। সেই সময় ‘ভিকি ডোনার’ যতটা চলেছিল, অন্য ‘বড় ছবি’ সেভাবে চলেনি। দর্শক বলছে, আমাদের এমন কিছু দিন, যা আমরা এনজয় করতে পারি। সো আই থিংক ওয়ান কান্ট জাস্ট ফুল দ্য অডিয়েন্স। দর্শককে এমন একটা কিছু দিতে হবে যা মাথায় থেকে যায়।
আপনার এবং রাইটার জুহি চতুর্বেদির কম্বিনেশনটা দুর্দান্ত। একসঙ্গে ‘ভিকি ডোনার’, ‘ম্যাড্রাস ক্যাফে’, ‘পিকু’, ‘অক্টোবর’-এ কাজ করেছেন। ওঁর সঙ্গে কাজের প্রোসেসটা কেমন?
সুজিত: হ্যাঁ, মানে একসঙ্গে লেখার কাজটার একটা নিজস্ব গতি আছে। মানে একটা গল্প বললাম, আর ও লিখে নিয়ে চলে এল এমন তো নয়। কোনও জাদুকাঠি নেই। অনেক ডিসকাশন এবং আন্ডারস্ট্যান্ডিং প্রয়োজন। যেমন ধরুন ‘অক্টোবর’-এ ‘সাইলেন্স’ রয়েছে গোটা ছবি জুড়ে। সেটাকে কীভাবে দেখাবে। তাই আমাদের মধ্যে অনেক ডিসকাশন, নিজেদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাকে সামনে আনা- এগুলো হতেই থাকে। প্রথম ড্রাফ্ট হয়ে গেলে সেটা নিয়ে একেবারে নারচার করা যেটাকে হলে সেটা করতে হয়। হ্যাঁ, আমাদের মধ্যে তর্ক হয়। তর্ক করতে করতে একটা বিন্দুতে এসে একমত হই। তাই আমার লিখতে অনেক সময় লাগে। ছবি বানাতে আমার অত সময় লাগে না, যতটা লিখতে সময় লাগে।
‘অক্টোবর’ এর পর কী?
সুজিত: এখনও সেভাবে বলার মতো জায়গায় আসেনি। কিন্তু ইরফানকে নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে। আই হ্যাড ইরফান খান ইন মাই মাইন্ড। স্ক্রিপ্টিং চলছে। ইরফান এখন লন্ডনে। ও ফিরলে ওর সঙ্গে বসে কথা বলে তারপর এগোব। এটা একটা পিরিয়ড ড্রামা।
ইরফান খানকে নিয়ে ‘পিকু’ শুট করেছিলেন কলকাতায়। এই ছবির জন্যও কি কলকাতায় শুটিং করার কথা ভাবছেন?
সুজিত: হ্যাঁ, যেহেতু পিরিয়ড ড্রামা, ইচ্ছে আছে একটা ছোট অংশ কলকাতায় শুটিং করার। কলকাতায় এখনও পুরনো ঐতিহ্য বজায় আছে।
[ #MeToo বিতর্কে এবার মুখ খুললেন সলমনের বান্ধবী ]
সম্প্রতি অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে আবার একটি বিজ্ঞাপনের কাজ করলেন। প্রতে্যকবার কাজ করার সময় কি একইরকম এক্সাইটেড লাগে?
সুজিত: বিজ্ঞাপন তো একদিন-দু’দিনের কাজ হয়। শুটিং হলে লম্বা কাজ হয়। তবে ওঁর সঙ্গে কাজ করতে সবসময়ই ভাল লাগে কারণ অমিতজির সঙ্গে সবকিছু নিয়ে ডিসকাস করতে পারি, আড্ডা দিতে পারি। কী দেখলাম, কী করব, নিজেদের কথা- প্রায় সবকিছু নিয়েই কথা বলতে পারি। আর অমিতজি সবসময়ই ইন্টারেস্টিং রোল প্লে করতে ভালবাসেন। এই বিজ্ঞাপনে হি ইজ প্লেয়িং আ শিখ, অ্যান্ড হি ইজ ভেরি এক্সাইটেড অ্যাবাউট ইট। একেবারে বাচ্চাদের মতো খুশি হয়। ইট ওয়াজ গ্রেট ফান।
‘শু-বাইট’ কি রিলিজ করবে?
সুজিত: জানি না। কথা তো চলছে। ‘ফক্স’ বা ‘ডিজনি’-র মধ্যে কেউ একটা কিনে নিতে পারে। ফাইনাল না হওয়া পর্যন্ত কিছুই বলতে চাই না।
এখন তো ওয়েব সিরিজ সবাই দেখছে, হিন্দিতেও অনেক কাজ হচ্ছে। আপনার কাছে ‘নেটফ্লিক্স’ বা ‘আমাজন’-এর কোনও অফার আসেনি?
সুজিত: অফার তো রোজ আসছে। ডেফিনিটলি করব। ভাল সাবজেক্ট পেলে করব। প্ল্যান্স আর অন। অ্যান্ড দিস ইজ ডেফিনিটলি অ্যান ইন্টারেস্টিং প্ল্যাটফর্ম টু এক্সপ্লোর।
এর ভবিষ্যৎ কী মনে হয়?
সুজিত: ওয়েব প্ল্যাটফর্ম ইজ আ ভেরি গুড প্ল্যাটফর্ম যদি না আবার টেলিভিশনের মতো কনটেন্ট তৈরি করতে শুরু করে (হাসি)! সিনেমার জন্য ভাল কারণ, ইট ইজ অ্যাভেলেব্ল অল দ্য টাইম। শেলফ লাইফটা বেড়ে যায় অনেকটা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.