চারুবাক: বলা হচ্ছে শংকরের জনপ্রিয় উপন্যাস ‘চৌরঙ্গী’ অবলম্বনে তৈরি সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘শাহজাহান রিজেন্সি’। কিন্তু শুধু অধিকাংশ চরিত্রের নাম বদলই নয়, তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যেরও বদল ঘটিয়েছেন চিত্রনাট্যকার। সময়ের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই এই বদল। পুরনো ছবির সঙ্গে তুলনা করেও বলতে হচ্ছে ‘শাহজাহান রিজেন্সি’ একান্তভাবেই সৃজিতের ছবি। এমনকী ছবির প্যাটার্নও তিনি পালটেছেন। তবুও বলতেই হচ্ছে, ছয় অধ্যায়ে ভাগ করার ব্যাপারটা তেমন যুক্তিসঙ্গত হল কি? একমাত্র ‘চেক ইন’ ও ‘চেক আউট’-এর পর্ব দু’টি ছাড়া? তবে মানুষের জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত প্রতিফলিতে হয়েছে ছবিতে।
সমীরণ বোস (আবির) এই চিত্রনাট্যে কথক। রুদ্র (পরম) অনেকটাই দর্শক বা সাক্ষীর ভূমিকায়। বাকি বেশিরভাগ চরিত্রই হোটেলের অতিথিদের মতো চেক ইন করেছেন আবার চেক আউটও। এর মধ্যে হোটেলকর্মী, বিশেষ করে সমীরণ আর রুদ্রর সঙ্গেই বেশি ইন্টারঅ্যাকশন ঘটেছে। কমলিনী (স্বস্তিকা) নামের এসকর্ট সার্ভিস দেওয়া মহিলার দুঃখের ব্যাকগ্রাউন্ড স্টোরি সামনে না এনে ভালই করেছেন সৃজিত। বিমানসেবিকা সুপ্রীতার (ঋতিকা) চরিত্রটি প্রথম দিকে প্রায় অনুপস্থিত রাখলেন কেন? আরও একটু গুরুত্ব পেতে পারত। এনজিও চালানো, উচ্চবিত্ত ব্যবসায়ীর স্ত্রী মিসেস সরকারের (মমতাশংকর) অন্যরূপ দেখানোর কাজটি বেশ সাফল্যের সঙ্গেই করেছেন। ছেলে অর্ণবের (অনির্বাণ) সঙ্গে কমলিনীর ‘প্রেম’ পর্বটি একটু সংক্ষিপ্ত হতে পারত। তবে গঙ্গা কুটিরে সুইমিংপুলের সামনে খোলা নীল আকাশের ব্যাকগ্রাউন্ডে দু’জনের রোম্যান্টিক মুহূর্তটি অবশ্যই মনে রাখতে হবে।
শেষ পর্বে এসে কাহিনির প্রতি ‘বিশ্বস্ত’ থাকতে গিয়ে একটু দীর্ঘ হয়েছে ছবি ঠিকই। কিন্তু সৃজিতের সৃজনমুঠো আলগা হয়নি। তিনি রুদ্র-সমীরণের বন্ধুত্ব-ভালবাসাকে যেমন মনে রেখেছেন, তেমনি চিত্রনাট্যে ব্যবসায়ী সরকার পরিবারের আভ্যন্তরীণ কলহের ব্যাপারটাও সূক্ষ্ম চালে রেখেছেন আগরওয়াল (বাবুল সুপ্রিয়) ও মাতাল চ্যাটার্জির (কাঞ্চন) কুচক্র সাজিয়ে। এসকর্ট মেয়ে কমলিনীর সঙ্গে অর্ণবের মায়ের মুখোমুখি সংঘাতের দৃশ্যটি একটু বেশি ‘নাটকীয়’ লাগলেও স্বস্তিকা ও মমতার অভিনয়ের গুণে ছবির সেরা দৃশ্য হয়ে ওঠে।
[ দর্শকদের মজাতে পারলেন কি ইমরান? কেমন হল ‘হোয়াই চিট ইন্ডিয়া’? ]
পুরো ছবিতেই মন কেমন করা এমন কিছু মুহূর্ত অবশ্যই তৈরি করতে পেরেছেন সৃজিত। যে কারণে হোটেলের মধ্যে বা হোটেলের বাইরে দু’জায়গাতেই তিনি বাস্তবকে প্রতিফলিত করেও নান্দনিক মোড়কে সেটি উপভোগ্যতায় উত্তীর্ণ করেছেন। সংলাপের ব্যবহারেও তিনি সময়ানুগ। এখনকার ভোকাব্যুলারির পাশাপাশি ‘মৃচ্ছ্কটিক’-এর বসন্তসেনা, বুদ্ধদেবের আম্রপালী, অজাতশত্রুর প্রসঙ্গও সুন্দরভাবে এনেছেন। তাই মকরন্দর মুখে ‘ডিভোর্স কি চৈত্রমাসের সেল?’ বা রুদ্রর মুখে ‘মধ্যবিত্ত ক্যালানে কাত্তিক’ জাতীয় সংলাপ ভালই জমে। গানের ব্যবহারেও সৃজিত এই ছবিতে মিনিম্যালিস্ট। ‘কিছু চাইনি আমি আজীবন ভালবাসা ছাড়া’ গানটি দু’বারই অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। ছবির শেষে ‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে’ (এই ‘বাটে’-র রেফারেন্সটাও সুন্দর) পুরো ছবির সুরটাই প্রতিফলিত করে। নামী-অনামী শিল্পীদের নিয়ে যাকে বলা যায় ‘আনঅ্যাসম্বল কাস্ট’-এর ছবি ‘শাহজাহান রিজেন্সি’। চিত্রনাট্যের সুযোগ অনুযায়ী সকলেই বেশ ভাল। তবে একটা নাম সবার আগে করতে হয়। তিনি স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। কমলিনীর ফাস্ট লাইফের পাশাপাশি চরিত্রের একাকীত্ব যন্ত্রণাকে সুন্দর ফুটিয়েছেন। আবার শরীরী প্রেমের দৃশ্যেও তিনি সমান সপ্রাণ। মমতাশংকর একটি দৃশ্যেই প্রমাণ করেছেন, তিনি কেমন অভিনেত্রী। আবির-পরমব্রত জুটির কাজ মন্দ নয়। এটুকুই বলব, আবিরের অভিব্যক্তি প্রকাশে একটু খামতি আছে। এছাড়া রুদ্রনীল, সুজয়প্রসাদ, কাঞ্চন মল্লিক ও ঋতিকাদের শুধুই ‘স্বাভাবিক’ বলতে পারি।
[ রাজবংশিদের গল্প পর্দায় আনল ‘দোতারা’ ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.