সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ফের বিতর্ক তরজা টলিউডে। তবে কোনও নতুন ছবির জন্য খবরের শিরোনামে নন তিনি। স্বভাবসিদ্ধগতভাবে অনীক দত্তর একটিমাত্র সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টই বিতর্কের স্ফুলিঙ্গ জ্বেলেছে। ‘বলছি হচ্ছেটা কী? আপনি পরিচালক.. সিনেমা বানিয়ে, ছবির গল্প দিয়ে সামাজিক বার্তা দিয়ে থাকেন। তা আপনি তো তথাকথিত ‘মাস’-এর জন্য ছবি বানান নাকি? অতএব ‘সোশ্যাল মিডিয়া’ শব্দটা যখনই চলে আসে, সমাজ বা সামাজিক শব্দটাও তো তার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। সেই হেতু একটা দায়বদ্ধতা তো থেকেই যায়?’ এইধরনের যাবতীয় মন্তব্য ঘিরে ধরেছে পরিচালককে। বেজায় চটেছেন নেটিজেনদের একাংশ। এই সমস্ত ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার রাতের একটা ফোসবুক পোস্টকে ঘিরে।
ওঁর স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবহারে ইউনিটের লোকজনেরাও সবাই অস্থির। ওঁর নাম বদলে রেখেছে ‘প্যানিক দত্ত’।
কীরকম পোস্ট, যাকে ঘিরে এত চর্চা? সৃজিত মুখোপাধ্যায়, রুদ্রনীল ঘোষ, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় থেকে শ্রীলেখা মিত্র, একের পর এক প্রত্যেকের মন্তব্য সেই পোস্টকে কেন্দ্র করে। কেউ বা পরিচালকের সমর্থনে কলম ধরেছেন, কেউ বা আবার শব্দের আঁচড় দিয়েছেন অনীকের বিরুদ্ধে। সে যাই হোক, অনীক দত্তের এই একটি পোস্ট ঘিরে আপাতত সরগরম নেটদুনিয়া। স্বল্পবসনা লাস্যময়ী বসে রয়েছেন ফটোকপি মেশিনের উপর। না বিতর্কটা ঠিক এই ছবিটিকে ঘিরে নয়, বরং ওই ছবির সঙ্গে থাকা অনীকের মন্তব্যে। নারীদের আয়ের উৎস জানতে চেয়ে অশ্লীল ইঙ্গিতবাহী ওই ছবিটির ক্যাপশনে অনীক দত্ত লিখেছেন, ‘সৎভাবে নিজেদের সম্পদ প্রকাশ করুন’ (Disclose your assets honestly) । আর পরিচালকের এই ক্যাপশন ঘিরেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে তুঙ্গে। পোস্টটি যে নারীবিদ্বেষী ইঙ্গিতবাহক, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
টলিউড ইন্ডাস্ট্রির তারকাদের কী মতামত অনীক দত্তর পোস্ট নিয়ে?…
[আরও পড়ুন: সাক্ষাৎকারে রবীন্দ্রনাথকে ‘অপমান’, বাংলাদেশি গায়ক নোবেলকে একহাত নিলেন ইমন]
অনীক দত্তর সেই পোস্ট নিয়ে নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় তুখড় সমালোচনা করেছেন অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ। রুদ্রনীলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “অনীকদাকে অনেকদিন থেকেই চিনি। আজকে যেই অনীক দত্ত কথা বলছেন তিনি এতটা উদ্ধত ছিলেন না। যিনি নিজে একনায়কতন্ত্র আচরণে একনায়কতন্ত্রবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন, এই মানুষটি এরকম ছিলেন না। বিগত ৩,৪ বছর ধরে শুধু আমি নই, ওঁর কাছের মানুষরা এটা উপলব্ধি করতে পেরেছেন। ওঁর যেটা ঠিক বলে মনে হচ্ছে সেটাই পুরো দুনিয়ার জন্য ঠিক বলে মনে করছেন। উনি যে পোস্টটি করেছেন সেটা জেনে বুঝেই করেছেন। মানে সজ্ঞানে। তারপর ‘মাস রিয়েকশন’ ওঁর বিরুদ্ধে দেখে পোস্টটি ফেসবুক থেকে সরিয়ে নেন। এবং যে ভাষায় ক্ষমা চান, সেই ভাষার মধ্যে কিন্তু ভয়ংকর একটা ঔদ্ধত্য প্রকাশ পেয়েছে। উনি দুঃখপ্রকাশ করেছেন উনার দর্শক কমে যাওয়া বা হাতছাড়া হওয়ার দুঃখে। মানুষ হিসেবে বা সভ্য নাগরিক হিসেবে উনি কিন্তু দুঃখপ্রকাশ করেননি। বিজ্ঞাপন পরিচালক হিসেবে যখন চিনতাম, তখনও দুম করে রেগে যাওয়া বা মন্তব্য করা.. এসব করতেন না। কিন্তু ‘ভূতের ভবিষ্যত’-এর সাফল্যের পরই ওঁর মাথা ঘুরে গিয়েছে। বেড়েছে ঔদ্ধত্য। ওঁর স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবহারে ইউনিটের লোকজনেরাও সবাই অস্থির। ওঁর নাম বদলে রেখেছে ‘প্যানিক দত্ত’।”
বয়সোচিত কারণে বা কোনওরকম অসুখবিসুখে মানুষ খিটখিটে হয়ে যায় অনেক সময়ে। অনীকের ক্ষেত্রে সেরকমই কোন ‘সিনড্রোম’ আর তার বহিঃপ্রকাশ কি না বুঝতে পারছি না।
“বয়সোচিত কারণে বা কোনওরকম অসুখবিসুখে মানুষ খিটখিটে হয়ে যায় অনেক সময়ে। অনীকের ক্ষেত্রে সেরকমই কোন ‘সিনড্রোম’ আর তার বহিঃপ্রকাশ কি না বুঝতে পারছি না। উনি আমাকে নিয়েও অনেক কথা লেখেন ফেসবুকে। এই তো সেদিন ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে আমি কেন উপস্থিত ছিলাম না, তা নিয়ে খারাপ মন্তব্য করে একটি পোস্ট করেছেন”, বলেন রুদ্রনীল। এর পাশাপাশি তিনি এও জানান যে অনীকের এই বাক্যবাণের শিকার শুধু তিনি নন, ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই হয়েছেন। একেবারে রাখঢাক না করে রুদ্রনীল আরও বলেন, “আসলে ‘ভবিষ্যতের ভূত’-এ উনি আমাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে কাস্ট করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এমন কিছু শর্ত রেখেছিলেন, যা আমার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব হয়নি। উনি ভুলে গিয়েছেন যে উনি যদি ‘গুরুত্বপূর্ণ পরিচালক’ হন তো আমি ‘গুরুত্বপূর্ণ অভিনেতা’। উনি গল্প শোনানোর আগে যা যা শর্ত চাপান তা মেনে নেওয়া অসম্ভব। আমার উপর শাসকঘনিষ্ঠ তকমাও চাপিয়ে গল্প শোনাননি। আমি চাই উনি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ-স্বাভাবিক হয়ে উঠুন।”
জেল খাটা প্রযোজক যারা কাজ করিয়ে টাকা দেয় না, তাঁরা আবার তোমার আমার কমেন্ট নিয়ে পোস্ট করে বিচারসভা বসাবে।
পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ও অনীকের পোস্টে হতবাক হয়েছেন। তাঁর কথায়, “আমি তো সত্যি সত্যি ভাবলাম তোমার প্রোফাইল হ্যাক হয়ে গিয়েছে। স্তম্ভিত!”
অন্যদিকে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় এবং শ্রীলেখা মিত্র অনীকের সমর্থনে মন্তব্য করেছেন। “জেল খাটা প্রযোজক যারা কাজ করিয়ে টাকা দেয় না, তাঁরা আবার তোমার আমার কমেন্ট নিয়ে পোস্ট করে বিচারসভা বসাবে। অনীক তুমি ক্ষমা চাওয়ার মতো কিছু করোনি”, এমনটাই মত স্বস্তিকার।
অন্যদিকে শ্রীলেখা মিত্রর বক্তব্য, “উনি হয়তো ব্যাঙ্গাত্মকভাবেই পোস্ট করেছেন, সেটা বোঝার ক্ষমতা হয়তো কারও নেই।” স্বস্তিকা এবং শ্রীলেখা আগাগোড়াই স্পষ্টবক্তা। তাই অনীকের বাকস্বাধীনতাকে হয়তো সমর্থন জানিয়েই এধরনের মন্তব্য করেছেন।
[আরও পড়ুন: ‘যখন বাবরি ভাঙা হয় তখন অর্ণব প্রতিবাদ করেছিল?’, পালটা তোপ অপর্ণার]
তবে যাবতীয় কাণ্ডে অনীক প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন যদি তাঁর পোস্টটি কারওর ভাবাবেগ কিংবা সম্মানে আঘাত করে থাকে তো! পাশাপাশি তিনি এও জানান যে কারও ভয়ে তিনি পোস্ট ডিলিট করেননি। তবে তাঁর এই ক্ষমাপত্রে বিতর্কের অবসান হয় কি না সেটাই দেখার…
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.