পারমিতা গাইন: সেই গানটা মনে আছে?
‘এই যে মেলেছি এই পাখনা
প্রেশারের ঢাকনা থাক না
বাজুক না বেল, শুরু হয়ে যাক খেল
জীবনটা পাল্টে যাক না
রোজগেরে গিন্নি…’
হলফ করে বলা যেতেই পারে, টেলিভিশনের দৌলতে রাতারাতি বাড়ির গিন্নিদের একই সঙ্গে সেলিব্রিটি আর রোজগেরে হয়ে ওঠার এই প্রথম পদক্ষেপ বাঙালি দর্শক ভুলতে পারেনি৷ ২০০১ থেকে শুরু করে তারপর প্রায় গোটা একটা যুগ বাংলার গিন্নি মায়েরা এমনকী সঙ্গে আঁচল ধরে বসে তার কচিকাঁচারাও হাসি-হাসি মুখে প্রতি সন্ধে যে অনুষ্ঠানের জন্য উৎসর্গ করত, তার নাম ‘রোজগেরে গিন্নি’৷ বাংলা টেলিভিশনে একদম প্রথমদিকে নন-ফিকশন ‘রোজগেরে গিন্নি’ নিয়ে এসেছিল তৎকালীন ‘ইটিভি বাংলা’৷ তারপর অনেক অদলবদলের পর ২০১২-তে শেষমেশ বন্ধ হয়ে যায় গিন্নিদের রোজগার আর এন্টারটেনমেন্টের এই শো৷ তবে ‘টিভিওয়ালা মিডিয়া’-র প্রযোজনায় ‘কালার্স বাংলা’ আবার ফিরিয়ে আনছে ‘রোজগেরে গিন্নি’৷ আসন্ন ১৭ অক্টোবর প্রতি সোম থেকে শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ‘কালার্স বাংলা’-র পর্দায় ফিরে আসছে ‘রোজগেরে গিন্নি’৷ তবে নতুন সাজে না, বরং সেই পুরনো গানে, পুরনো মোড়কে– একরাশ নস্ট্যালজিয়া সঙ্গে নিয়ে আবার যাত্রা শুরু করছে ‘রোজগেরে গিন্নি’৷ আর এই সফরের সঞ্চালক শো-এর প্রথম গিন্নি-বন্ধু পরমা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
ইতিমধ্যেই শুটিং শুরু হয়ে গিয়েছে ‘রোজগেরে গিন্নি’-র৷ মাঝে কয়েকবছরের অনুপস্থিতিতে মোটেও দর্শকের মন থেকে মুছে যায়নি এই শো৷ বরং এবার না কি তারা দ্বিগুণ উৎসাহী৷ তাই দ্বিতীয়বার ফিরে আসার খবর পেতেই শুরু হয়ে গিয়েছে প্রবল হইচই৷ ‘টিম রোজগেরে গিন্নি’র সদস্যরা এত-এত চিঠিপত্তর আর রেজিস্ট্রেশন, অডিশন সামলাতে মোটামুটি নাজেহাল৷ শুটিংও চলছে টানা, পুরোদমে৷ সকাল থেকে প্রায় মাঝরাত৷ তাই শো-এর হোস্ট পরমাকে চাক্ষুষ তো কোন ছাড়, ফোনে ধরতেই বেশ বেগ পেতে হল৷
শেষমেশ গত বৃহস্পতিবার বালি-রিষড়ায় শুটিং সেরে রাত একটায় ধরা দিলেন পরমা– ‘শুরুর দিনের মতো করে ফিরে আসছে ‘রোজগেরে গিন্নি’৷ ইট’স লাইক কামিং ব্যাক হোম ফর মি৷ আগের গানটাই রিঅ্যারেঞ্জ করা হয়েছে৷ আমিই গাইলাম আবার৷ খুব নস্ট্যালজিক লাগছে৷ আর আরও ভাল লাগছে দর্শকের ফিডব্যাক দেখে৷ কে বলে, পাবলিকের মেমোরি খুব কমজোর! দর্শক এতদিনের গ্যাপেও ‘রোজগেরে গিন্নি’ আর আমাকে মনে রেখেছে৷ এখন যাদের বাড়ি শুটিং করতে যাচ্ছি, তারা বলছে, ‘ছোটবেলায় প্রতি সন্ধ্যায় মায়ের সঙ্গে বসে টিভিতে দেখতাম ‘রোজগেরে গিন্নি’৷ আর এখন আমি খেলছি৷’ কী অসাধারণ অভিজ্ঞতা! সব একইরকম, আগের মতো৷ বদল শুধু আমার মধ্যে৷ ২০০১-এ আমি কুর্তি-জিনস, লম্বা চুল আর সাতাশ৷ এখন শাড়ি, ছোট চুল আর বিয়াল্লিশ৷’
আর শো-এর ফরম্যাট কিছু বদলায়নি? সে উত্তরে পরমা বললেন, ‘কিছু টুকটাক বদল হয়েছে৷ আগে ছিল সাতটা রাউন্ড, এখন হয়েছে চারটে৷ পুরনো হিট রাউন্ডগুলোকে পাল্টানোর পরিবর্তে সেগুলোকেই ফিরিয়ে এনেছি আমরা৷
প্রথম রাউন্ড–
‘গানে-গল্পে’
এখানে গান নিয়ে প্রশ্ন থাকছে৷
দ্বিতীয় রাউন্ড–
‘দশভুজা’
একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গিন্নিকে ঘরের কোনও কাজ করতে দেওয়া হয়৷
তৃতীয় রাউন্ড–
‘শুধু তোমারই জন্য’
এখানে ইন্ট্রোডিউস করা হয় কর্তাকে৷ আর খেলাটা খেলতে হয় কর্তাকে৷ স্যুটকেস প্যাক বা বার্গার বানানোর মতো কোনও কাজ এই রাউন্ডে সম্পন্ন করে গিন্নিকে জেতানোর দায়িত্ব কর্তার৷
চতুর্থ রাউন্ড–
‘অদলবদল’
এটা গিন্নির সঙ্গে খেলতে পারে গোটা পরিবার৷ টেবিলের ওপর রাখা বিভিন্ন জিনিস বদলে দেওয়ার পর সেটা যথাযথভাবে সাজানোর রাউন্ড৷ এই মুহূর্তে বাজার ফর্দটা নেই৷
এছাড়া বেড়েছে প্রাইজ মানির অঙ্কটা৷ এখন সমস্ত রাউন্ড ক্লিয়ার করতে পারলে গিন্নি পাবেন প্রায় পঁচিশ থেকে তিরিশ হাজার টাকা৷ এরপর হয়তো আরও বাড়তে পারে৷ তবে এবারে বদলেছে আরেকটা বিষয়– আগে আমরা মূলত কলকাতা আর তার আশপাশের গিন্নিদের বাড়িতেই বেশি যেতাম৷ হপ্তায় একবার হয়তো মফস্বলে৷ কিন্তু এবার টার্গেট বাংলার বিভিন্ন প্রান্তবর্তী এলাকাগুলো৷ টেলিভিশনের দর্শক তো বেশিরভাগটাই ওখানে৷ তাই এবার শুরু থেকেই দৌড়চ্ছি জেলায় জেলায়৷ কী জানি এই বয়সে কতটা পেরে উঠব৷ তবে উদ্যম আর উদ্যোগে কোনও ঘাটতি নেই৷ ‘রোজগেরে গিন্নি’ আবার ফুল ফর্মে, বরং আরও বেশি উৎসাহ নিয়ে৷’
আর কী! বাংলার গিন্নিরা এবার গেট সেট গো বলে গলা ছাড়ুন দেখি–
‘তেল-নুন-কড়াই, প্রতিদিন লড়াই
আজ ঘুচে যাক না
ডাস্টিং-ইস্ত্রি, গ্যাস-ধোপা-মিস্ত্রি
মন ভুলে থাক না
উত্তর দিই ফস হাতে-হাতে দশে দশ
তাক লেগে যাক না…’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.