‘নগরকীর্তন’-এর ‘পুটি’-কে দেখলে চেনা যায়, ইনি ঋদ্ধি সেন? কীভাবে এই আমূল পরিবর্তন? কী বলছেন অভিনেতা? লিখলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
‘নগরকীর্তন’ মুক্তি পেতে চলেছে। এই ছবির জন্য যে সর্বোচ্চ পুরস্কার তা তোমার পাওয়া হয়ে গিয়েছে। অভিনেতা হিসেবে এখন আর কী পাওয়ার আছে?
ঋদ্ধি: দেখো একদল মানুষ যারা আমার আগের কাজ জানে তারা বুঝতে পারে যে, ঋদ্ধি সেন জাতীয় পুরস্কার পেতে পারে। কিন্তু আবার কিছু মানুষ আছে যারা বুঝতেই পারছে না, এত অল্প বয়সে এর জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার কী হল! ছবিটা মুক্তি পেলে সেটার হয়তো একটা উত্তর দেওয়া যাবে। কিন্তু সবচেয়ে বড় কারণ হল, এই এত খেটে, ভালবেসে কাজটা করলাম, পুরস্কার পেলাম- কেন পেলাম সেটা তো মানুষ এখনও জানতেই পারল না। যে কোনও অভিনেতার ক্ষেত্রেই এটা সত্যি তাঁর কাজটা যদি মানুষজন নাই দেখতে পায় তাহলে কী করে চলবে। আমরা তো আর নিজের জন্য সিনেমা বানাই না। আমরা সবাই এটা চাই যে আমার ছবি দর্শক ভিড় করে এসে হলে দেখুক, এই আনন্দটা সবচেয়ে বড়। আর আমার তো পুরস্কার পাওয়া হয়ে গিয়েছে যখন এই চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছি। কৌশিক কাকু আমার কথা ভেবে এই চরিত্রটা লিখেছে- এটাই বিশাল পাওনা। আর ট্রেলার রিলিজ হওয়ার পর লোকজনের যা রিঅ্যাকশন, ‘এটা ঋদ্ধি!’- এটা শোনার যে আনন্দ, সেটা সবচেয়ে বড়।
‘পরিমল’ চরিত্রটা সম্পর্কে একটু জানতে চাই।
ঋদ্ধি: ‘পরিমল’ এমন একজন যাকে বলা যায় ‘এ ম্যান ট্র্যাপ্ড ইন উওম্যান্স বডি’। ছোটবেলা থেকেই সে বাকি ছেলেদের থেকে আলাদা। কিন্তু এই সমাজ তাকে তার মতো করে বেড়ে উঠতে দেয় না। তার যে নিজস্ব সত্তা সে কোনও দিনই প্রকাশ করতে পারে না। এই ধরনের ছেলেদের জীবনে তাদের পরিবারও পাশে থাকে না। কিন্তু তাকে ভালবেসে ফেলে মধু, যে চরিত্রে ঋত্বিকদা অভিনয় করেছে। মধু তাকে মহিলার মতো করেই ভালবাসে। একেবারে নিখাদ প্রেম। মধু যখন পরিমলের সঙ্গে প্রেম করে তখন তাকে মহিলার সম্মানই দেয়। মধু একজন ফ্লুটিস্ট, কীর্তনের দলে বাঁশি বাজায়, আর শহরে চাইনিজ খাবারের দোকানে ডেলিভারি বয় হিসেবে কাজ করে। ওদের দু’জনের মধ্যে যে প্রেমটা সেটা ‘রাধাকৃষ্ণ’ বা ‘চৈতন্য মহাপ্রভু’-র মতোই একটা পিওর, ইটারনাল লাভ স্টোরি।
‘নগরকীর্তন’-এর ট্রেলার দেখে মনে হল ‘পরিমল’ পুরোপুরি নারী হয়ে উঠতে চায়। এই বিষয়টা রয়েছে ছবিতে?
ঋদ্ধি: হ্যাঁ, পরিমল একজন নারীর শরীর চায় এবং সেক্স রিঅ্যাসাইনমেন্ট সার্জারি করাতে চায়। আমি এই চরিত্রের জন্য রিসার্চ করার সময় এই ধরনের বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলি, বা এডি রেডমায়ানের সাক্ষাৎকারেও শুনেছি- একটা সময়ের পর এই মানুষরা নিজেরাই নিজেদের মেল অর্গ্যানগুলোকে ঘেন্না করতে শুরু করে। দে ওয়ান্ট টু গেট রিড অফ ইট, দে ওয়ান্ট টু ডিজওন ইট। তারা পুরুষ থেকে পুরোপুরি নারী হয়ে উঠতে চায় আবার যে নারী সে পুরুষ হয়ে উঠতে চায়।
এই ছবিতে কাজ করতে গিয়ে কোন বিষয় ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে?
ঋদ্ধি: ‘নগরকীর্তন’ শুধু একজন ‘থার্ড জেন্ডার’ মানুষের গল্প বলছে এমন নয়। সেটা তো আছেই কিন্তু বিভিন্ন লেয়ারে যে কথাটা বারবার ফিরে আসছে সেটা হল- এই যে আমাদের সমাজ সব কিছুকে একটা লেবেলিং করে, তার গতিবিধি, চলন মেপে দেয় এবং কেউ তার বাইরে গেলেই তখন অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে এটা চলতে পারে না। আমাদের চারপাশে ক্রমাগত যে কোনও ‘প্রথাভাঙা’ মানুষ বা ‘প্রথাভাঙা’ পদক্ষেপ নিয়ে আঙুল তোলা হয়। ‘নগরকীর্তন’ বলতে চায় লেট পিপল লিভ দ্য ওয়ে দে ওয়ান্ট টু। সেটা ধর্মের নিরিখে হোক, বর্ণ, সেক্সুয়ালিটি বা জেন্ডার হোক। এই বক্তব্যটা ঘুরে ঘুরে আসছে। কৌশিক কাকুর এই ছবিটাকে ‘বোল্ড’ ছবি না বলে ভালবাসার ছবি বলা উচিত।
তোমার ক্ষেত্রে পরিমল হয়ে ওঠার প্রসেসটা কেমন ছিল?
ঋদ্ধি: আমার যখন সতেরো বছর বয়স তখন এই ছবির কথা কৌশিক কাকু আমাকে বলেছিল। কিন্তু ফাইনালি কাজটা যখন শুরু হয় তখন বেশি সময় পাইনি। পঁচিশ দিনে ছবির শুট হয়। আমি ইমোশন আর কিছু টেকনিক্যালিটিজ ব্যালান্স করার চেষ্টা করেছি। লজিকালি একটা চরিত্রকে অ্যাপ্রোচ করতে হয়। আমার ক্ষেত্রে এই ক্রাইসিসটা বোঝা এবং জানা খুব দরকার ছিল, এই যে সেক্সুয়াল আইডেনটিটির ক্রাইসিস, এটা কেমন। ছবিটা ডিলে হওয়া সত্ত্বেও আমি নিজের মতো করে একটু একটু প্রিপেয়ার করা শুরু করেছিলাম। আমাকে ‘ড্যানিশ গার্ল’ ছবিটা খুব ইন্সপায়ার করেছে। এডি রেডমায়ানের পারফরম্যান্স একেবারে রেন অ্যান্ড মার্টিনের গ্রামারের মতো কাজ করেছে। রেডমায়ান যখন কাঁদছে সেই কান্নাটা হুবহু একটা মহিলার মতো। এই ছোট ছোট ডিটেলগুলো খুঁটিয়ে দেখেছি। আমি ‘টুটসি’ দেখেছি। যদিও এই ছবিগুলোর চরিত্রের সঙ্গে ‘পুটি’-র কোনও মিল নেই। কিন্তু ওভারঅল, আমার মধ্যে একটা ট্রান্সফরমেশন হতে সাহায্য করেছে। আমি ‘এ ম্যান ইন্টু উওম্যান’ বইটাও পড়েছি। সেক্সুয়ালিটি এবং জেন্ডার যে আলাদা জিনিস সেটা আমাকে বুঝতে সাহায্য করেছে। এবং এরপর বহু মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি যারা পুরুষ থেকে নারী হতে চায় এবং অপারেশন করিয়ে নারী হয়ে উঠেছে। সুদর্শন চক্রবর্তী, সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়- ওঁরা আমাকে এমন কিছু মানুষের কাছে রেফার করেছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলাটা আমাকে খুব হেল্প করেছে। সেখান থেকে তাদের ক্রাইসিসটা আমি বোঝার চেষ্টা করেছি। আর কৌশিক কাকুর স্ক্রিপ্টটা যে কোনও অভিনেতার কাছে একটা ব্লু-প্রিন্ট। ইফ ইউ রিড ইট, ইড নো হোয়াট টু ডু হোয়াট নট টু ডু। আর কৌশিক কাকু নিজে তো দুর্দান্ত লেভেলের অভিনেতা তাই যখন গাইড করছে শুধু একজন পরিচালকের জায়গা থেকে করছে না। আর একটা কথা বলতে চাই। আমি পরিমল হয়ে ওঠার জন্য মা এবং সুরাঙ্গনাকে অবজার্ভ করেছি। ওদের কথা বলা, হিল পরে হাঁটা সব কিছু। মা আমাকে নিজের ‘অন্তর্বাস’ দিয়ে দিয়েছিল শুটিংয়ের সময়। আমি সেটা পরেই পরিমল হয়ে উঠেছি। স্বাভাবিকভাবে যতটুকু নারীত্ব আমার মধ্যে, সেটাই বের করে এনেছি যাতে ক্যারিকেচার না হয়ে যায়। আর আমার উলটোদিকে রয়েছে ঋত্বিক চক্রবর্তী। সে লিটারালি আমার সঙ্গে প্রেমটা জাস্ট করেছে। সেই প্রেমটা এতটাই গভীর এবং সত্যি যে সেটা আমাকে খুব হেল্প করেছে। ঋত্বিকদা সম্পর্কে একটা কথা আমি বলতে চাই। আমার রোলটা ‘অথরব্যাকড’ জেনেও যেভাবে আমাকে জায়গা ছেড়ে দিয়েছে ভাবাই যায় না। প্রতিটা দৃশ্যে যেভাবে সাহায্য করতে করতে গিয়েছে- ভাবাই যায় না। এই জন্যই ঋত্বিক চক্রবর্তী ইজ ওয়ান অফ দ্য ফাইনেস্ট অ্যাক্টর।
[ দুর্ঘটনার রেশ কাটিয়ে সুস্থ সৌমিত্রের নাতি রণদীপ, ছবি শেয়ার করলেন রিংগো ]
ট্রেলারে দেখলাম যে ঋত্বিক এবং তোমার মধ্যে ঘনিষ্ঠ দৃশ্য রয়েছে। সেই দৃশ্যে অভিনয় করা কতটা কঠিন ছিল?
ঋদ্ধি: সেটা নিয়ে খুব চাপ হয়েছে। সেটে আমাকে খুব খ্যাপানো হয়েছে। এর আগে আমি এতটা ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করিনি। ‘ওপেন টি’-তে সুরাঙ্গনার সঙ্গে একটা আলতো চুমু ছিল। ‘শরতে আজ’-এও আছে। আর একটা শর্ট ফিল্ম করেছি সেখানে আছে। কিন্তু সেগুলো মহিলার সঙ্গেই। যেদিন সিনটা শুট হওয়ার কথা, আমি সারাদিন ধরে এডিদের কাছে নানাভাবে জানতে চেষ্টা করি দৃশ্যটা কতটা এক্সটেনসিভ। আমাকে কিছু বলা হয়নি। স্ক্রিপ্টে লেখা ছিল এবার ‘মধু আর পুটি অন্তরঙ্গ হয়।’ এবার এই অন্তরঙ্গতা কতটা দূর অবধি যাবে সেটা তো বোঝার উপায় নেই। যাইহোক, কেউই আমাকে কিছু বলছে না। সেদিন নাকি আমার অন্যান্য দৃশ্যে কোনও মন ছিল না। যেখানে ‘পুটি’-র মতো হাঁটার কথা আমি আমার মতো করে হেঁটে চলে গিয়েছি। ফাইনালি শুটিংটা খুব এসথেটিক্যালি করা হয়েছে। খানিকটা রিয়্যাল, খানিকটা চিট করেছি। শুটিংটা করার পর আমার যেটা ভাল লেগেছে, সেটা হল আমাদের হোমোফোবিক সোসাইটি, কিন্তু কেউ এই দৃশ্য দেখে আপত্তি করতে পারবে না। এতটাই পরিশীলিতভাবে শুট করা হয়েছে। আমি নিজেও এই দৃশ্যে অভিনয় করতে গিয়ে কোনও ইনহিবিশন ফিল করিনি। আর ঋত্বিকদারও কোনও ইনহিবিশিন ছিল না। আমাদের কোনও ডিসকমফর্ট হয়নি। আর এটুকু বলতে পারি, লোকে বিভোর হয়ে যাবে যেভাবে সিনেম্যাটিক রূপ দেওয়া হয়েছে। আর এই দৃশ্যে অভিনয় করার আগে আমরা সেভাবে কোনও আলোচনাই করিনি। হাসাহাসি করেছি, মেজাজটা তাতেই হাল্কা হয়ে গিয়েছিল। বরং সিনটা মজা করতে করতেই হয়েছে। আমাদের দু’জনেরই মনে হয়েছে এই ঘনিষ্ঠ দৃশ্য ছবিটার জন্য খুবই প্রয়োজন।
একজন অভিনেতা যখন তাঁর অনেকটা ক্ষয় করে ফ্যালে এমন শক্তিশালী কোনও চরিত্রে এবং নিজের সেরাটা দিয়ে দেয় তখন তারপর একটা সময় লাগে আবার নিজেকে ফিরে পেতে। তোমারও কি সেই সময়টা যাচ্ছে, যেখানে ডাল পিরিয়ড যাচ্ছে?
ঋদ্ধি: আমার মনে হয় আমি খুব ভাল ফেজে আছি। ইট’স এ গুড পিরিয়ড টু বি ইন। আসলে আমি লাকি যে এই বয়সে ‘নগরকীর্তন’-এর মতো ছবি করেছি। যদি সাতাশ বছর বয়সে করতাম, তখন একটা আর্থিক প্রেশার থাকত, এরপরেও যেমনই ছবি আসুক, পরপর করতে হবে কারণ সংসার চালাতে হবে। এখন আমার সেই চাপটা নেই। ‘নগরকীর্তন’ আর ‘ইলা’-র মতো দু’টো বড় ছবি করার পর আমি এখন কিছু নাও করতে পারি। ইচ্ছেমতো বসে থাকতে পারি, সিনেমা দেখতে পারি, থিয়েটার করতে পারি। আমার ওপর চাপটা নেই।
একজন অভিনেতার পিওরিটি, অনেস্টি, সারল্য ধরে রাখা খুব জরুরি। এত অল্প বয়সে এমন সাফল্য পেয়ে যাওয়ার পর সেটা কতটা ধরে রাখতে পারছ? অনেকেই তো বলে ঋদ্ধি আর আগের মতো নেই, সারল্যটা হারিয়ে গিয়েছে…
ঋদ্ধি: পালটে যাওয়াটা জরুরি এবং অবশ্যম্ভাবী। চোদ্দো বছরের আমি আর একুশ বছরের আমিটা যদি এক থাকে সেটা কোনও কাজের কথা নয়।
কিন্তু মাটিতে পা রাখাটা তো জরুরি…
ঋদ্ধি: আলাদা করে মাটিতে পা আছে কি না সেটা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে না, তার বড় কারণ হল আমার বড় হয়ে ওঠা। দ্যাট ইজ দ্য ওনলি থিং দ্যাট হ্যাজ প্লেড দ্য বিগেস্ট রোল ইন মাই লাইফ ফর হোয়াট আই অ্যাম টুডে। দ্যাটস দ্য কি টু এভরিথিং। বাবা মা যে পরিবেশটা আমাকে দিয়েছে সেটা থেকে বেরনো আমার পক্ষে কোনওভাবেই সম্ভব নয়। আমি পৃথিবীর সবচেয়ে ভাল মানুষ হতে পারি, সবচেয়ে খারাপ মানুষও হতে পারি, বাট আই উইল বি দ্যাট পার্সন হু গ্রিউ আপ ইন দ্যাট ফ্যামিলি। জাতীয় পুরস্কার পেলেও আমি যা, না পেলেও আমি একই মানুষ। সেটা বদলাবে না। ‘ইলা’-র শুট করতে প্রায় টানা একবছর বম্বে যাতায়াত করতে হয়েছে। ভাবতে পারবে না দু’দিনের ব্রেক পেলেও আমি কলকাতা চলে আসতে চাইতাম। কোথায় বম্বে কাজ করতে যাওয়া মানে সেখানকার নাইটলাইফ এনজয় করব, তা না করে আমি চলে আসতাম। আমি বাড়ি যতক্ষণ না ফিরে যেতে পারছি, মুশকিল। আমার পক্ষে ওই ‘স্নবিশ’, মাটিতে পা পড়ছে না- তেমন মানুষ হয়ে ওঠাটা মুশকিল। আর একটা জিনিস মনে হয়, ‘তারার তারায়’ নাটকটা করার পর আমি মানুষ হিসেবে কিছুটা বদলেছি। এই বিশাল পৃথিবীতে আমিও বেঁচে আছি, নিজের মতো করে এটা ভেবে আমার একটা শান্তি হয়। চারপাশে যা হয়ে চলেছে সেখানে আমরা অনেক বেটার আছি বলে মনে হয়।
আমি নাটকটা দেখেছি। কী মনে হয়, যে চরিত্রে তুমি অভিনয় করেছ সেটার জন্য বয়সে তুমি বেশিই ইয়াং। আরও একটু ম্যাচিওরিটির প্রয়োজন ছিল না কি?
ঋদ্ধি: একটু তো ছোট বটেই। ইনিশিয়ালি আমাদেরও এটা মনে হয়েছিল কিন্তু মানুষের থেকে ভাল উত্তর তো আর কেউ দিতে পারে না। গত বছর সবচেয়ে সফল নাটক ‘তারায় তারায়’। বারোটা শো-ই হাউসফুল। সবাই জানতে চেয়েছ আবার কবে হবে! আমার মনে হয় ঋত্বিকের চরিত্রের যে ক্রাইসিস সেটা বারো বছর বয়সের ছেলেরও হতে পারে আবার ষাট বছর বয়সি ছেলেরও হতে পারে। শ্রীজাতদার লেখাতেও সেই ফ্লেক্সিবিলিটি ছিল। বাবার অ্যাডাপ্টেশনের মধে্যও ফ্লেক্সিবিলিটিটা ছিল। দ্যাট রিয়্যালি ম্যাটারস।
[ #MeToo অভিযোগে এবার মুখ খুললেন মাধুরী ]
তোমার বান্ধবী সুরাঙ্গনাও অভিনয় করে। তোমরা দু’জনেই এক প্রফেশনে। তোমার সঙ্গে ছাড়া সেভাবে কোনও কাজ করেনি। কখনও মনে হয় ভবিষ্যতে এটা নিয়ে সমস্যা হতে পারে। এটা কি কনশাস ডিসিশন?
ঋদ্ধি: আমার তো প্রচণ্ড টেনশন হয়। না, না এটা কনশাস ডিসিশন নয়। মানুষ আমাদের একসঙ্গে দেখতে ভালবাসে। এটা কাকতালীয় ভাবেই হয়েছে। কিন্তু আমরা খুব স্কেপটিক্যাল ছিলাম। ‘ওপেন টি’র ‘তোর জন্য’টা খুব হিট। তারপর ‘সমান্তরাল’-এ ‘তুই ছুঁলি’-টাও যখন মুক্তি পাবে তখন ভাবলাম এটা কেউ দেখবে না। কিন্তু এই গানটাও হিট। ইট ওয়াজ ট্রেন্ডিং, থ্রি মিলিয়ন ভিউজ হল। দেন আই ওয়াজ ভেরি হ্যাপি যে, নাহ, লোকে সত্যি আমাদের একসঙ্গে দেখতে ভালবাসে। আমার ইনসিকিওরিটি অন্য জায়গায়। ও যদি নিজেকে নিয়ে কিছু না করে। মানে উলটোটা। আমার কম্পিটিশন নেই। শি ইজ একসেপশনালি ট্যালেন্টেড। অভিনেত্রী হিসেবে ভালও। কিন্তু অ্যাজ এ সিংগার অ্যাজ এ পেন্টার শি ইজ একসেপশনালি গুড। এবং ও কোনও অভিনয় পরিবারে বিলং করে না, অভিনয়ের ট্রেনিং নেই- তা সত্ত্বেও যে অভিনয়টা করে দ্যাট ইজ গ্রেট। কিন্তু আমার ওকে নিয়ে যে ভয়টা সেটা হল ও নিজেকে খুব একটা প্রোজেক্ট করতে চায় না। নিজের মতো করে থাকতে ভালবাসে। আজকের এই পৃথিবীতে যে কোনও কর্মক্ষেত্রই খুব পিআর ডিপেন্ডেন্ট। ও সেটা পারেই না। আমি যদিও হ্যাপি যে, ও পিআর করে না। তবে মুশকিল হল ওই যে কিছুতেই নিজেকে সামনে আনতে চায় না। আমার সঙ্গে কম্পিটিশন করুক। আমি চাই ও অনেক বেশি কাজ করুক, কারণ সুরঙ্গনা খুবই ট্যালেন্টেড।
এরপর তো ‘শরতে আজ’ ওয়েব সিরিজটা দেখা যাবে। সেটা নিয়ে জানতে চাই।
ঋদ্ধি: এটা ‘জি ফাইভ’ এর। বাংলায় এত বড় স্কেলে কোনও ওয়েব সিরিজ শুট হয়নি বোধহয়। পঁচিশ দিন লন্ডনে শুট হয়েছে। লন্ডন বেসড গল্প। একটা দুর্গাপুজোকে ঘিরে টেরর অ্যাটাক প্ল্যান হচ্ছে- এটাই মূল বিষয়। এটা ভাষা দিবসে লঞ্চ হবে। পরমদাই ডিরেক্ট করেছে। পরমদারই গল্প। আমার চরিত্রটা এমন যে লন্ডনে বড় হয়ে উঠেছে। সুরাঙ্গনা কলকাতা থেকে লন্ডনে দুর্গাপুজো দেখতে আসে। আর পরমদা আমার জামাইবাবু। খুব কমপ্লেক্স রিলেশনশিপ বেসড স্টোরি।
আর নতুন কী কাজ করছ?
ঋদ্ধি: আমি এখন একটু বেছে কাজ করতে চাই। বিরসাদার সঙ্গে একটা প্রোজেক্ট নিয়ে কথা চলছে কিন্তু সেটা খুবই আর্লি স্টেজ। একটু সময় নিয়ে কাজ করতে চাই। বেশ কিছু স্ক্রিপ্ট পড়েছি। এছাড়া সৃজিতদার ‘ভিঞ্চিদা’-য় একটা মজার ছোট্ট রোল করেছি। ‘শরতে আজ’ ভাষা দিবসে মুক্তি পাবে। আর আমাদের পরবর্তী থিয়েটার প্রোডাকশন আসছে খুব বড় করে। উৎপল দত্ত’র ‘একলা চলো রে’ বাবা অ্যাডাপ্ট করেছে। অশোক মুখোপাধ্যায় ‘গান্ধী’-র চরিত্রে, দেবশংকর হালদার ‘সর্দার বল্লভ ভাই পটেল’, সুরজিৎ বন্দে্যাপাধ্যায় করছে ‘নেহরু’, বাবা ‘জিন্নাহ্’-র চরিত্রে, মা করছে ‘কস্তুরবা’ আর আমি করছি ‘হরিলাল গান্ধী’। তো সেটার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.