চারুবাক: সোনাদা ঠিক গোয়েন্দা বা সত্যান্বেষী নন। কিন্তু রহস্যের সমাধানে দারুণ উৎসুক। ইতিহাসচর্চা তাঁর আঙুলের ডগায়। বুদ্ধিতে প্রখর। প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব তাঁর তুলনাহীন। আগের ছবিতে সোনাদা চরিত্রের এই গুণাবলী প্রকাশ হয়েছিল। ফ্র্যাঞ্চাইজির দ্বিতীয় ছবিতে চিত্রনাট্যকার শুভেন্দু দাশমুন্সি অ্যাকশন দৃশ্যেও সোনাদা কম যান না। এমনকী তলোয়ার নিয়ে পেশাদারি ট্যাকটিক্সও যে তাঁর করায়ত্ত সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন। বাঙালিয়ানা, বনেদিয়ানা, বাংলার সাংস্কৃতিক দুর্বলতাকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা প্রথম ছবিতেও ছিল। এই ছবিতে দুর্গাপুজোর আবহ তৈরি করে সনাতন ভক্তিরসের সঙ্গে পুজোর আচরণের একটি অভিনব ডকুমেন্টেশনও করলেন চিত্রনাট্যকার এবং পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায় এই ‘দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন’ ছবিতে। পরপর এই তুলনা আসছে একই ফ্র্যাঞ্চাইজির ছবি বলে।
‘গুপ্তধনের সন্ধানে’ থেকে ‘দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন’ অনেকটাই আলাদা। কাহিনী বিন্যাস সিরাজদৌল্লা আমলের মহারায় কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের। জগৎ শেঠ, মেহতাব চাঁদ ইত্যাদি নামগুলোর আড়ালে কল্পিত কাহিনীকে এক ধরনের মান্যতা দেওয়ার প্রয়াস আর কি! যদিও ছবি শুরুর আগে প্রথাগত ডিসক্লেমার দিয়ে ‘সব ঘটনা ও চরিত্র কাল্পনিক’ বলে দেওয়া হয়েছে। শুভেন্দুর মুন্সিয়ানা ইতিহাসের সঙ্গে কল্পনার মিশেল। পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায় ক্যামেরাম্যান সৌমিক হালদারকে সঙ্গী করে সেই কল্পনা আর ইতিহাসের অনেকটাই বিশ্বাস্য মেলবন্ধনকে তুলে এনেছেন।
[ আরও পড়ুন: ছবিজুড়ে মোদির জয়গান, বায়োপিকে ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ প্রধানমন্ত্রী ]
কল্পিত দুর্গাবতী দেবরায়ের পারিবারিক ‘গুপ্তধন’-এর সন্ধান পেতে ত্রিমূর্তি সোনাদা-আবির-ঝিনুক চলে আসে বনপুরুরিয়া নামের একটি জায়গায়। সেখানে মস্ত এক রাজবাড়ি রয়েছে, দিঘি রয়েছে, এক গড়ের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। আবার রয়েছে লোভ, হিংসা, চুরি, পালটা চুরির নাটক। একটি ‘খঞ্জর’ চুরি যাওয়া থেকে শুরু, শেষ গুপ্তধনের ভান্ডার আবিষ্কারে। রহস্যের উন্মোচনের পাশাপাশি ঝিনুক আর আবিরের মিষ্টি রোম্যান্সটুকুও বুনে দেওয়া হয়েছে যেমনটি ছিল আগের ছবিতে। ফারাক শুধু বুননের কৌশলে। ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায় যে কারণে আবিরকে দক্ষ সাঁতারু জানিয়ে রাখেন ছবির শুরুতেই। দিঘির গভীরে গিয়ে পারিবারিক স্বর্ণশঙ্খটি তো উদ্ধার করবে আবিরই।
বাড়িতে পুজোর জমাটি পরিবেশ রচনা, ছোট-বড়-মেজোভাইদের উপস্থিতি, দেবরায় পরিবারে অপরূপ (খরাজ) নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর আত্মীয় সম্পর্কের হাজিরা ব্যাপারগুলোর বিন্যাস ভাল। তবে মাঝে এসে কাহিনী একটু স্লথ হয়ে পড়ে যেন। ভাল লাগিয়েছে সুন্দর লোকেশন ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির পরিবেশ, কাশফুলে ছাওয়া গ্রামীণ বাংলা, জঙ্গল আর বিক্রম ঘোষের সুসঙ্গত আবহ।
বেশ সাজানো গোছানো এই ছবিতে শিল্পীদের অভিনয়ও নজরকাড়া। তিনমূর্তি আবির (সোনাদা), অর্জুন (আবির) ও ইশার (ঝিনুক) পারস্পরিক বোঝাপড়া বেশ।তালঠুকেই অভিনয় করেছেন তিনজন। দেবরায় পরিবারের বড় ছেলে পিনাকিপাণি হয়েছেন গায়ক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। ধুতি-পাঞ্জাবিতে মানিয়েওছেন বেশ। কৌশিক সেন, খরাজ মুখোপাধ্যায়, আরিয়ান ভৌমিক, জুন মালিয়া, লিলি চক্রবর্তী প্রত্যেকেই চরিত্রমাফিক ঠিকঠাক। সোনাদার দ্বিতীয় পর্বে এসে কাহিনীর বিন্যাস ও বিস্তারকে যে সুর ও লয়ে গাথা হয়েছে- পরবর্তীতে এটা নিয়ে নতুনতর ভাবনার অনুরোধ রাখা যায় শুভেন্দু-ধ্রুব জুটির উপর। কারণ গুপ্তধন খুঁজে বার করার কৌশলটা দুটি গল্পেই প্রায় একই ধারায়। এটি নিয়ে ভাবা প্রয়োজন।
[ আরও পড়ুন: সিনেমার কণামাত্র উপকরণ নেই, ‘বাংলা বই’ হয়েই থাকবে ‘অতিথি’ ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.