Advertisement
Advertisement

Breaking News

Poila Baisakh

‘পয়লা বৈশাখ, ২৫ বৈশাখ এবং ২২ শ্রাবণ, এর বাইরে আমার জীবনে বাংলা ক্যালেন্ডার নেই’

'সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল'-এ স্মৃতিচারণ করলেন সাহিত্যিক রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়।

Ranjan Bandyopadhyay reminisced Poila Baisakh
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:April 14, 2025 4:05 pm
  • Updated:April 14, 2025 9:30 pm  

বাঙালির পয়লা বৈশাখ মানেই নস্ট্যালজিয়া। পোশাক থেকে খাবার, আড্ডা থেকে হালখাতা, সবেতেই থাকে বাঙালিয়ানার ছাপ। তবে আজকের বাঙালি কি ততটাই উন্মুখ থাকে নববর্ষ নিয়ে? অতীতের স্মৃতি এবং নববর্ষের পরিকল্পনার কথা ‘সংবাদ প্রতিদিন’ ডিজিটালকে জানালেন সাহিত্যিক রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। শুনলেন কিশোর ঘোষ

Advertisement

পয়লা বৈশাখ, ২৫ বৈশাখ এবং ২২ শ্রাবণ—এখন এর বাইরে আমার জীবনে বাংলা ক্যালেন্ডারের অস্তিত্ব নেই। কিন্তু আমাদের ছেলেবেলা আলাদা ছিল। আমার মা পঞ্জিকা এবং বাংলা ক্যালেন্ডার ধরে চলতেন। আমি ছিলাম মায়ের আঁচল ধরা সন্তান। বাংলা তারিখ অনুযায়ী আমার জন্মদিন পালন করতেন মা। পায়েস রাধতেন। আমি শ্যামবাজারের ছেলে। খুব মনে আছে প্রতিবার পয়লা বৈশাখে বাগবাজারে গঙ্গার ধারে শীতলা মন্দিরে পুজো দিতে যেতেন মা। স্নানটান সেরে আমাকেও যেতে হত মায়ের সঙ্গে। ছোটবেলায় গঙ্গার জলে স্নান করেছি। ঘরে ফিরে পরিষ্কার জলে স্নান করাতেন মা। শুনেছি রবীন্দ্রনাথ নাকি গঙ্গার জল পান করতেন! ওই জল পান করে কীভাবে দীর্ঘজীবী হলেন, সে এক রহস্য।

আমাদের ছোটবেলায় হালখাতা ব্যাপারটা ছিল। বিভিন্ন দোকান থেকে ধারে মাল নেওয়ার রীতি ছিল। সব ধার শোধ করা হত না। মনে করা হত এর ফলে ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। বড়দের সঙ্গে বিভিন্ন দোকানে যেতাম। বাবা সেই সব দোকানে গিয়ে টাকা শোধ দিতেন। লাল রঙের খেরোর খাতায় সেই হিসাব লিখে রাখতেন দোকানদার। বাংলা ক্যালেন্ডার উপহার পেতাম আমরা। মিষ্টি, শরবত খেতাম। পয়লা বৈশাখের দিন ঠাকুমার বানানো ঘুগনি খেতাম মনে আছে। আমি এখন যে ফ্ল্যাটে থাকি। তার নিচে রয়েছে একটি মুদির দোকান। সেখানে আমি একটা খাতার ব্যবস্থা করেছি। পার্থক্য হল এই খাতায় বাংলা নয়, ইংরেজি তারিখ লিখে জমা-খরচের হিসাব রাখা হয়।

পশ্চিমবঙ্গে যেদিন চৈত্র সংক্রান্তি, পয়লা বৈশাখের আগের দিন, বাংলাদেশে সেদিনই ‘পহেলা বৈশাখ’। আমি অনেকগুলি পয়লা বৈশাখ ঢাকায় কাটিয়েছি। সুন্দর অভিজ্ঞতা হয়েছে। বাংলাদেশের মেয়েরা তো খুব সুন্দরী হয়। যেমন সুচিত্রা সেন, পাবনার মেয়ে ছিলেন। পদ্মাপাড়ের মেয়েদের জুঁইফুলের সাজ দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। অমন বড় বড় জুঁইফুল এই বাংলায় দেখিনি কিন্তু। হয়তো রবীন্দ্রনাথ ও নতুন বউঠান যে বাগিচা করেছিলেন জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ির ছাদে, যার নাম রেখেছিলেন ‘নন্দনকানন’। হয়তো সেই বাগানে ফুটত ওই সাইজের জুঁইফুল। কারণ রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, এমন গ্রীষ্মের দিনে ‘নতুন বউঠান স্নান সেরে তৈরি হয়ে ছাদে আসতেন।’ এই ‘তৈরি হওয়া’ যে ঠিক কী, তা আজও বুঝিনি! কিন্তু ভীষণ যৌন আবেদনময় মনে হয়েছে আমার।

দুঃখের কথা হল আমার হয়তো আর বাংলাদেশে যাওয়া হবে না! সম্প্রতি এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেখানে! ওপার বাংলার মুসলিম বন্ধুরা বলছেন, মুক্তমনা হওয়ার দোষে তাঁরা সেখানে সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছেন আজ। তাঁরা আমার পরামর্শ দিচ্ছেন—তুমি এখানে এসো না। আমরাই বরং তোমার ওখানে যাবো।

যখন কলেজে পড়ি তখন পয়লা বৈশাখ খুব পালন করতাম তা নয়। তবে এমন গ্রীষ্মের দিনে কলেজে উৎসব হত। আবৃত্তি করতাম আমি। সহপাঠীদের সঙ্গে সময় কাটাতাম। একটি খ্রিস্টান মেয়ের সঙ্গে গভীর প্রেম হয়েছিল। তাঁর নাম ছিল সুশীলা আব্রাহাম। দুপুরবেলা স্কটিশচার্চ কলেজে তাঁর সঙ্গে সময় কাটাতাম। প্রেমময় সেই গ্রীষ্মের কথা মনে পড়ে আজ। পরবর্তীকালে অধ্যাপক জীবনেও প্রেম এসেছে। আমার দুই স্ত্রীর মধ্যে একজন তো সরাসরি আমার ছাত্রী। প্রথম বিয়ে ভেঙে স্ত্রীর বিয়ে দিয়ে তারপর নিজে বিয়ে করেছিলাম। সেও এক গ্রীষ্মে। আরেকটা জিনিস খুব মনে পড়ে—এমন বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠে স্টার থিয়েটারে উত্তমকুমার এবং সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ‘শ্যামলী’ থিয়েটার দেখেছিলাম। মা-বাবার সঙ্গে। সে-ই আমার উত্তমকে দেখা। সে কী ভিড়! পুলিশ উত্তমের ভক্তদের কোনওভাবেই সামলাতে পারছিল না।

যদি শরীর ভালো থাকে তবে এবার পয়লা বৈশাখে কলেজস্ট্রিটে যাব। সাধারণত পত্রভারতীতে একবার যাই আমি। পত্রভারতীর কর্ণধার ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রতিবার উপহার পাঠান আমাকে। এবারও পকেট বুক ‘রূপসী বাংলা’, একটি চায়ের কাপ এবং হজমি পাঠিয়েছেন। প্রতিভাস এবার পয়লা বৈশাখ পালন করছে না বিশেষ কারণে। সেটা আমার কাছে একটা মন খারাপের ব্যাপার। কারণ প্রতিভাসকে দিয়েই প্রতিবার পয়লা বৈশাখ শুরু করি আমি। বীজেশ সাহার টালার বাড়িতে পাত পেড়ে খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। শুরুতে শরবত। তারপর লুচি, লেজওলা বেগুন ভাজা, আলুর দম, মিষ্টি। প্রতিবার আমার অন্তত একটি বই পয়লা বৈশাখে প্রকাশিত হয়। এবারও হবে। তবে খানিক দেরিতে। আরেকটা কথা, প্রতিবার পয়লা বৈশাখে একটি নতুন বই পড়া শুরু করি আমি। এবারও করব। আশির উপর বয়স হল তো। এখন তো ধার করা জীবনে বেঁচে আছি! ধার করা পয়লা বৈশাখ! 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement