Advertisement
Advertisement

কেমন হল পরি পিসি ও ঘোঁতনের ‘রেনবো জেলি’র স্বাদ?

হলে যাওয়ার আগে জেনে রাখুন এ তথ্য।

‘Rainbow Jelly’ movie review: Worth watching, Sreelekha Mitra fulfils expectations
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:May 25, 2018 3:09 pm
  • Updated:July 11, 2018 4:44 pm  

নির্মল ধর: লীলা মজুমদারের ‘পদিপিসির বর্মীবাক্স’র একটা আলগা রেফারেন্স শুধু রয়েছে, কিন্তু সৌকর্য ঘোষালের চিত্রনাট্য ও গল্পের বুননে পরি পিসির সঙ্গে পদিপিসির মিলটা একেবারেই কাকতালীয় বলা যায় কি! বেশ ভেবেচিন্তেই তিনি ‘রেনবো জেলি’ ছবিতে পদিপিসি আর পরি পিসির মাপসই ককটেলটি বানিয়েছেন। এক কথায় যাকে বলতে পারি এক অপরূপ নাগরিক রূপকথা। এই রূপকথায় রাজা-রানি, ভূত-প্রেত, দত্যি-দানো নেই ঠিকই, কিন্তু রয়েছে স্বার্থপর মিথ্যেবাদী মামা গন্ডারিয়া, অলীক এক রাঁধুনি পরি পিসি, অভাগা-দুর্ভাগা কিশোর ভাগ্নে ঘোঁতন, কাবুলি পাওনাদার, সহানুভূতিশীল চা-ওয়ালা, রাপুঞ্জেল বা সিন্ডেরেলার মতো ফুরফুরে মিষ্টি এক কিশোরী পপিন্স। এদের নিয়েই অভিনব কথামালায় এক রূপকথা সাজিয়েছেন সৌকর্য। তাঁর আগের ছবি ‘পেন্ডুলাম’ থেকে যোজন দূরে ‘রেনবো জেলি’র স্বাদ-বর্ণ-গন্ধ সবটাই। অথচ মন ভরিয়ে দেওয়ার উপাচারে কোনও ঘাটতি নেই।

[ফিটনেস চ্যালেঞ্জের ভিডিও আপলোড করে বিপাকে হৃতিক, মুম্বই পুলিশে নালিশ]

Advertisement

কিশোর মনের উপযোগী এই কাহিনি। যার কেন্দ্রে রয়েছে দু’জন। কুচক্রী, কিপটে মামা গন্ডারিয়া (কৌশিক সেন) ও বাবা-মা হারানো ভাগ্নে ঘোঁতন (মহাব্রত)। IQ-তে একটু খাটো। দ্বিতীয় শ্রেণিতে দু’বার ফেল করায় এখন মামার দেখভাল আর রান্না-সহ ফাইফরমাশ খাটাই তার কাজ। মামা তাকে লোভ দেখিয়েছে যে আঠেরো বছর বয়স হলে ঘোঁতন বাবার রেখে যাওয়া যকের ধনের মালিক হবে সেই-ই। মামার ঘরে রাখা বিশাল এক রোবটের মধ্যেই নাকি যকের সেই ধন প্রাপ্তির পাসওয়ার্ডটি লুকোনো। যার খোঁজ ঘোঁতন তো জানেই না, মামাও নয়। এক রাতে ঘোঁতনের ঘরে আচমকা পরি পিসির (শ্রীলেখা মিত্র) আবির্ভাব।  তাঁর জাদুবাক্সের মিষ্টি-তেতো-টক-ঝাল-নোনতার মতো সাতটি রান্নার মশলা মজুত-খানিকটা যেন সূর্যের সাত রঙের মতো। ঘোঁতনের সঙ্গে পরি পিসির সখ্যতার ব্যাপারটাও বেশ জম্পেশ। ওদের কথা ‘সত্যি’ হলে টিকটিকির ডাক শোনা যায় না। বরং আকাশ দিয়ে উড়ে যায় একটা এরোপ্লেন। পিসি বলে, তারা খসে পড়া তো আর দেখা যায় না, এখন প্লেন চলে যাওয়াটাই ইঙ্গিত।এরপর পিসি আর ঘোঁতনের কিম্ভূত সব কীর্তিকলাপে শেষ পর্যন্ত ‘পাসওয়ার্ড’টি হাতে পায় ঘোঁতন। স্বার্থপর মামা পটল তোলে। প্রতিবেশী পপিন্সকে রেনবো লজেন্স দেয় ঘোঁতন। অবশ্য তার আগে মামাকে পিসির বানানো ‘রেনবো জেলি’ খাইয়ে আসল কাজটি হাসিল করেছে সে।

সৌকর্যের পরিচালনার কাজে যথেষ্ট ফ্রেশনেস আছে। ঘোঁতনের IQ কম হলেও তাঁর আঁকার হাতটি ভাল। ছাদে বসে হারানো মায়ের ছবি আঁকে সে। পরিচালক তাই গল্পের বুননেও অ্যানিমেশনের সাহায্য নিয়ে ঘোঁতনের স্বপ্ন আর ভাবনাকে পর্দায় এনেছেন। ছোটদের ভাল লাগার কথা ভেবেই তাঁর এমন অভিনব পরিকল্পনাটি করা হয়েছে। মামার চরিত্রায়ণেও একটু ভাঙা ও তোতলা উচ্চারনে কৌশিককে দিয়ে কথা বলিয়ে ভিলেনিপনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। মামার ঘরের পরিবেশ সৃষ্টিতেও এলোমেলোভাবের সঙ্গে আধুনিক ভাবনার মিশেলটি ভাল।

[‘আমি যা যা কাজ করেছি, তা করার হিম্মত কারও হবে না’]

সবথেকে ভাল লেগেছে ঘোঁতনের চরিত্রে সত্যিকার এক স্পেশ্যাল চাইল্ড মহাব্রত বসুকে দিয়ে অভিনয় করানো। কিশোর মহাব্রত একেবারেই অভিনয় করেনি। সে যেন ও যা, সেটাই করেছে। বাংলা সিনেমায় অভিনয় নিয়ে এমন এক্সপেরিমেন্ট বিরল নয়, প্রথম। পরিচালক সৌকর্য এবং প্রযোজক পূজাকে এজন্য ধন্যবাদ! পপিন্সের চরিত্রে অনুমেঘাও বেশ ভাল। মামার চরিত্রে কৌশিক সেন উচ্চারনের ওই টিপিকাল স্টাইল নিয়ে বেশ চমৎকার। ইদানীং তিনি নেগেটিভ চরিত্রেই খুলছেন ভাল। দারুণ  পরি পিসি হয়েছেন শ্রীলেখা মিত্র। কল্পনা ও বাস্তব মেশানো চরিত্রে তাঁর অভিনয়ের ধারটি বোঝা যায়।  ছোট্ট তিনটি চরিত্রে শান্তিলাল, শুভঙ্কর ও ইকবাল চোখে পড়েন। ছবির আবহ ও সংগীত নবারুণের। তাঁর সুরে  নাগরিক মেজাজের সঙ্গে রূপকথার ফিউশনটি জমজমাট। বিশেষ করে পরি পিসির গানটি। গানের কথাতেও সৌকর্যের কলম নাগরিক রূপকথার মেজাজ বজায় রেখেছে। ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমিহীন, সোনার কাঠি রুপোর কাঠি ছাড়াই রেনবো জেলি আনন্দের সাত স্বাদে টইটুম্বুর। মজার কথা হল জনপ্রিয় ‘হামি’-দের ভিড়ে রেনবো জেলির স্বাদ যে কতজন নিতে আসবেন সেটাই আশঙ্কা। কারণ এঁদের প্রচারের ঢাকে তেমন জোর নেই।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement