সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ওরা তখনও ছিল মগন ঘুমের ঘোরে। নব্য বিবাহিত বলে কথা! এদিকে কারা যেন চুপিচুপি এসে দাঁড়াল বাড়ির সামনে। আর দরজার এপারে রেখে দিয়ে গেল কার্তিক ঠাকুরকে। সক্কাল হতে না হতে তুমুল হইচই। বাড়ির কর্তা দরজা খুলে তো হতবাক। এদিকে পাড়া জুড়ে শোরগোল। বাচ্চাকাচ্চার ভিড়। যাদের বাড়ির সামনে কার্তিক এসে দাঁড়াল তাদের না তুলে উপায় নেই। একদিকে বাড়িতে নতুন অতিথি আসার ইঙ্গিতে চাপা আনন্দ। অন্যদিকে হুট করে পুজো করার হ্যাপা। সে এক বেশ গোলমেলে ব্যাপার।
বাঙালি গেরস্থের ঘরে এই সেদিনও এ ছিল বেশ পরিচিত দৃশ্য। আজ আর যে তা নেই তা নয়। তবে ফিলহাল কার্তিকের আগমন যে কমেছে, তাও অস্বীকার করার জায়গা নেই। সেই নস্ট্যালজিয়া উসকে দিয়েই সামনে এল পরিচালক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের নতুন ছবি প্রজাপতি বিস্কুট-এর ট্রেলার।
[ প্রতীমের মশলায় আর ঋত্বিকের রান্নায় সুস্বাদু ‘মাছের ঝোল’ ]
অনিন্দ্যর প্রথম ছবি ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’ যাঁরা দেখেছেন তাঁরা জানেন, তাঁর সিনেমা দেখা মানে টাইম মেশিনে চাপা। ফিরে যাওয়া ফেলে আসা দু’দশক আগে। সেই পাড়া কালচার, জাঁদরেল জ্যাঠামশাই বা ফুটবল পাগল মানুষরা কী করে যেন ম্যাজিকের মতো ফিরে আসেন। ফিরে আসে পাড়া প্রেম। দুরুদুরু কাঁপা কাঁপা বুকে প্রেমিকাকে প্রথম চিঠি দেওয়ার ভীরু অনুভব। ভাললাগা স্মৃতির মিঠে মিছরিকণা যেন ফ্রেমের পরতে ছড়িয়ে রাখেন পরিচালক। যার স্বাদ নিতে নিতে দর্শকের মনে হতে বাধ্য, কী ছেড়ে কোথায় এলাম! আসলে ফেলে আসা বয়সে, ছেড়ে আসা দশকে, স্মৃতির শহরে ফেরা যায় না। সিনেমাই পারে কয়েক ঘণ্টার জন্য হলেও সে নস্ট্যালজিয়ায় বসবাসের সুযোগ করে দিতে। স্মৃতির আঁচে নিজেকে সেঁকে নেওয়ার একটা সুযোগ দেয় সে। হোক না তা মিথ্যে। সেই মিথ্যে ছুঁয়ে ছুঁয়েই সত্যি স্মৃতির তন্ত্রীতে জেগে ওঠে অতীতের সুর। সে সুরেই তার বেঁধেছিলেন পরিচালক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। এবারের ছবির ট্রেলারেও মিলল সে ছোঁয়া।
‘কার্তিক ঠাকুর হ্যাংলা, একবার আসে মায়ের সাথে, একবার আসে একলা’। এ কথা এই সেদিনও ছোটদের মুখে মুখে ফিরত। আজ হয়তো কমেছে। জিভের ডগায় ইংরেজি রাইমস নিয়ে থাকা আজকের ছোটদের মধ্যে এ লাইনের মাধুর্য ফিকে হয়ে গিয়েছে। যেমন ফিকে হয়ে গিয়েছে সেই পাড়াগুলো। ঝগড়াঝাটি মন কষাকষি আর গলাগলির বেসাতি সেই পাড়ার আড্ডাগুলো। আসলে কারা যে বাড়িতে কার্তিক ফেলে যেত তা কি আর জানত না বাড়ির সদস্যরা! বিলকুল জানত। গোড়াতে যতই ঝামেলা হোক পরে মধুরেণ সমাপয়েৎ হত রসগোল্লায়। এই মিঠে সম্পর্কের আঁচ, গেরস্থ ঘরের সম্পদ। আজ খুপরি ফ্ল্যাটের দুনিয়া, অ্যাপার্টমেন্টের অ্যাসোসিয়েশনে বাঁধা হিসেবের সম্পর্ক তার নাগাল পায় না। ব্যস্ত জীবন হয়তো আমাদের হাত থেকে সে সুযোগ কেড়েও নিয়েছে। তবু সিনেমার ওই কয়েক ঘণ্টাতেই মিলতে পারে টাইম মেসিনে চড়ার সুযোগ। সে ইঙ্গিত ট্রেলারেই দিয়েছেন পরিচালক।
[ শব্দ আর জীবনের ‘মাসুম’ খেলায় আরও এক জন্মদিনে গুলজার ]
আগের ছবিতেও বেশ কয়েকজন নতুন অভিনেতাকে সিনে ইন্ডাস্ট্রিতে এনেছিলেন পরিচালক। এবারেও বজায় সেই ঘরানা। অন্তর হয়ে এসেছেন আদিত্য সেনগুপ্ত। আর শাওন হয়ে দেখা যাবে ঈশা সাহাকে। অন্তর আর শাওনের গল্পেই ডানা মেলবে বাঙালির নস্ট্যালজিয়া। এ ছবির হাত ধরে হারানো দিনের আলোয় আলোয় আমাদের মুক্তি হয়তো স্মৃতির শহরে। ট্রেলারে সে ইঙ্গিত পুরোদস্তুরই দিয়ে রাখলেন পরিচালক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.