Advertisement
Advertisement

Breaking News

ভালবাসার এক আশ্চর্য সফর ‘প্রজাপতি বিস্কুট’

দেখতে দেখতে চোখে ঝিলমিল লেগে যাবে।

Projapoti Biskut review: An odyssey of love
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:September 23, 2017 8:52 am
  • Updated:August 6, 2021 5:42 pm  

শম্পালী মৌলিক: আন্ডারডগই কি তাহলে এগিয়ে? রিলিজের প্রথম দিনই হল-প্রতিক্রিয়া অন্তত সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। প্রথম দিনেই নন্দন হাউসফুল। আইনক্সের প্রতিক্রিয়াও দারুণ। ‘প্রজাপতি’র উড়ান তেজিয়ান। আশপাশের হেভিওয়েট তারকাদের ভিড়ে আদিত্য আর ইশা নেহাতই অখ্যাত দুই নতুন মুখ। আর এঁদের নিয়েই ঘুঁটি সাজিয়েছেন অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, তাঁর নতুন ছবি ‘প্রজাপতি বিস্কুট’-এর জন্য। এবং আড়াই বছর আগে তাঁর ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’-এর কথা মাথায় রেখেও লিখছি, ‘প্রজাপতি’ অনিন্দ্যকে আরও এগিয়ে দিল। এটাই ‘উইন্ডোজ’-এর প্রথম ছবি যেখানে নন্দিতা-শিবপ্রসাদ অন্য পরিচালকের সঙ্গে রয়েছেন প্রযোজক হিসেবে।

[‘গোলমাল এগেইন’-এর ট্রেলারেই চমকে দিলেন তুষার কাপুর]

কী ধরনের ছবি প্রজাপতি বিস্কুট? এক কথায় বলা মুশকিল। জীবনের ছবি। শ্যাওলা ধরা – রং চটা হলেও, সেই জীবনটাকেই আরও একবার বুকে জড়িয়ে ধরার গল্প বলে এই ছবি। হয়তো এমন হয় না, কিন্তু হতেও তো পারে! যে ভালবাসার স্বপ্নটা নিয়ে বাঁচি আমরা, সবসময় কি তাকে ছুঁয়ে দেখতে পারি? জানতে কি পারি সত্যিই তার অস্তিত্ব আছে কি না? সবটা তো মেপে নেওয়া যায় না, কিন্তু প্রশ্নটা তো থাকেই – আমাকে ভালবাসে কি না! জীবনভর এই জিজ্ঞাসাটা মাথায় নিয়ে চলে মানুষ। কেউ উত্তর পায়, কেউ পায় না। বা কেউ বেশি গভীরে গিয়ে জানতেও চায় না, পাছে সত্যি যদি ততটা মধুর না হয়। ছেলেটা আর মেয়েটা আঁকড়ে ধরতে চেয়েছিল দু’জন দু’জনকে। আড়াই বছরের দাম্পত্যে সন্তানহীনতার কারণে তাদের ভালবাসার সাঁকোটা দুলছিল কিছু সামাজিক নিয়মের ফাঁসে, কিছু বা পারিবারিক প্রত্যাশার চাপের ফলে। তাই আদর-ভালবাসা কেমন যেন থমকে যাচ্ছিল সংসারের চার দেওয়ালে। বিয়ের বেশ কিছুদিন পরও উলটোদিকের মানুষটাকে প্রথম দিনের মতোই ভালবাসা যায় কি? হয়তো যায় না। কিন্তু নতুন করে সেই পুরনো মানুষটাকেই ভালবাসা যায়? শাওন আর অন্তরের দাম্পত্যের দিকে তাকিয়ে সেই প্রশ্নটাই মনে ঘোরাফেরা করে। আরও একবার নিজেদের যৌথতার জীবনকে আয়নায় দেখে নিতে ইচ্ছে করে। এখানেই ‘প্রজাপতি বিস্কুট’-এর সাফল্য।

দর্শক নিজের জীবনের সঙ্গে কানেক্ট করতে পারছে। নায়ক বা নায়িকা কেউই লার্জার দ্যান লাইফ নন। এঁদের ছবি আগে দেখেনি দর্শক। আমার-আপনার মতোই এঁদেরও আটপৌরে বেঁচে থাকা। অন্তর (আদিত্য সেনগুপ্ত) ভিতু টাইপের। মুখচোরা, সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। মুখ তুলে উঁচু গলায় মা (সোনালি গুপ্ত) কিংবা অন্য কারও কথার কোনও উত্তর দিতে পারে না। সম্ভ্রান্ত-রুচিশীল পরিবারে তাদের মায়ের কথা অনুযায়ী – ‘এ বাড়িতে ওসব কার্তিক পুজোটুজো হয় না। এ বাড়িতে একটাই ঠাকুর। রবি ঠাকুর।’ অতএব বাড়িতে কার্তিক পড়লেও মা নারাজ পুজো-আচ্চায়। কিন্তু ওই যে নিয়মরক্ষা। অন্যদিকে যে মেয়েটি অন্তরের বউ হয়ে এসেছে অর্থাৎ শাওন (ইশা সাহা) ঠাকুর-দেবতায় তার যথেষ্ঠ আস্থা। আবার মনের ভিতরে জিনস- ছোট টপ পরার ইচ্ছাও। গোপনে সিরিয়ালের ওয়ান লাইনার লেখে। এক্ষেত্রে বন্ধু পারি (খেয়া চট্টোপাধ্যায়) তার সহায়। হাওড়ার অতি রক্ষণশীল পরিবার থেকে আসা শাওন বারণ মানতেই অভ্যস্ত। দাম্পত্যের বেড়াজালে একটু একটু করে দমচাপা হয়ে রয়ে যায় শাওনের আসল স্বপ্নগুলো। আর অন্য একটা শাওন অন্তরের বউ, সেন বাড়ির বউ হওয়ার পার্ট করে যায়। আমাদের জীবনেও তো এমনই হয়! ক’জন পারে শেষ পর্যন্ত নিজের স্বর খুঁজে নিতে? ক’জন পারে নেতানো দাম্পত্যেও ফের একবার ‘প্রজাপতি বিস্কুট’-এর মতো মুচমুচে স্বাদ খুঁজে নিতে? অন্তর আর শাওন পারবে কি না  জানতে হলে ছবিটা দেখতে হয়।

[৯০তম অস্কারে মনোনয়ন পেল রাজকুমারের ‘নিউটন’ ]

অনিন্দ্যর ছবি তৈরির ঘরানা স্পষ্ট গল্প বলার থেকেও মুহূর্ত গেঁথে কবিতার মতো মায়াজাল তৈরির দিকেই। আর প্রয়োজনমতো উইটি সংলাপ সহযোগে কমিক সিকোয়েন্স তৈরি করা। এ ছবিও তার ব্যতিক্রম নয়। এভাবেই পরিচালক খুব জরুরি প্রশ্ন গুলোও রেখেছেন। বাড়ির বিবাহিত কন্যা বিয়ার খেয়ে বাড়ি ফেরে এবং ঝড়ের মুখে পড়ে। তারপর জিজ্ঞেস করে ‘বিয়ার খেতে গেলে কি সেক্স চেঞ্জ করতে হবে?’ এতদিন টালমাটাল ছেলের বাড়ি ফেরা দেখেছে বাংলা ছবির দর্শক। ‘প্রজাপতি’তে উলটোটা পেল। এবং লক্ষ্যণীয় এ ছবির নিবেদক কিন্তু শিবপ্রসাদ-নন্দিতা। এই সব কারণেই চিত্রনাট্যের বুনোট চমৎকার লাগে। আর শান্তনু মৈত্রর দুর্দান্ত মিউজিক ছবিটাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে। প্রসেন, অনুপম, চন্দ্রাণী, লগ্নজিতা, দীপ্তার্ক, উপল, অনিন্দ্যদের গান ইতিমধ্যেই হিট। গানগুলো থেকে যাওয়ার। চমৎকার সিনেম্যাটোগ্রাফি করেছেন সুপ্রিয় দত্ত।

এবারে আসি অভিনয়ের কথায়। নবাগত আদিত্য ও ইশা ভয়ানক সাবলীল। কে বলবে নায়ক-নায়িকা হিসেবে এটাই তাঁদের প্রথম ফিচার ফিল্ম! অপরাজিতা আঢ্য, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়, রজত গঙ্গোপাধ্যায়, সোনালি গুপ্তর মতো প্রতিষ্ঠিত এবং তুখড় অভিনেতাদের পাশে তাঁরা চমৎকার। ইশা যে ইন্ডাস্ট্রিতে থাকতে এসেছেন প্রথম ছবিতেই তার ছাপ রয়ে গেল। আর আদিত্য যেন অন্তর-ই, অভিনয় করেননি! ভাল লাগে শাওনের বন্ধুর ভূমিকায় খেয়া চট্টোপাধ্যায়কেও। আর ছোট্ট তোশানা অর্থাৎ ফুচকা মন কেড়ে নেয়।

শেষ পর্যন্ত ‘প্রজাপতি বিস্কুট’ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের গল্প হয়েও ভালবাসার এক আশ্চর্য সফর। এখানে এক গলা জলে দাঁড়িয়েও শেষ অবধি আশা জাগে কোনও একদিন আঙুলে আঙুল জড়িয়ে যাবে! ছবিটা দেখতে দেখতে এভাবেই চোখে ঝিলমিল লেগে যায়।

[ফের প্রেমে পড়লেন রণবীর কাপুর?]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
News Hub