সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মাকে হারিয়েছিলেন একেবারে বালক বয়সে। বৌঠানে স্নেহ-আদর-প্রশ্রয়-সখ্যতাতেই বড় হয়ে ওঠা। তারপর একে একে রবি ঠাকুরের জীবনে এসেছেন বহু নারী। সকলেই নিজের মতো করে আলোকিত করেছেন কবিকে। এ মধ্যেই নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী মারাঠি কন্যা আন্না তড়খড়। কবির কাছে যিনি নলিনী। কবির এই নলিনীকেই এবার দেখা যাবে বড় পর্দায়।
তা কেই নলিনী?
ষোল থেকে তখন সবে সতেরোয় পড়েছেন রবীন্দ্রনাথ। এমন সময় বাড়ির আদেশ, যেতে হবে বিলেত। ততদিনে ভানুসিংহের পদাবলী লেখা হয়ে গিয়েছে। কবিকাহিনীর কবিতাও লেখা হচ্ছে। কিশোর কবির কলমে তখন উপচে পড়ছে কাব্যলক্ষী। এদিকে বৌঠান কাদম্বরী দেবীর সঙ্গে বেশ একটা সখ্যতার সম্পর্কও তৈরি হয়েছে। ঠিক এই সময়ই বিলেত যাওয়ার পালা। কিন্তু লেখায় যিনি স্বচ্ছন্দ, সে যে এমনিতে আড়ষ্ট। তাই একটা প্রস্তুতি পর্ব দরকার। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে যাওয়া হল সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আহমেদাবাদের শাহিবাগের বাড়িতে। কিন্তু সে সময় সত্যেন্দ্রনাথের স্ত্রী-সন্তান বিদেশে। ফলে কিশোর রবীন্দ্রনাথ হয়ে উঠলেন নিঃসঙ্গ। ভেবে ভেবে একটা উপায় ঠিক করলেন সত্যেন্দ্রনাথ। তখনকার বোম্বাইয়ে ব্রাহ্মসমাজের আদলে প্রার্থনাসমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাঁর অন্তরঙ্গ বন্ধু আত্মারাম পান্ডুরং তড়খড়। তাঁর বাড়িতেই কিশোর রবিকে পাঠিয়ে দিলেন সত্যেন্দ্রনাথ। সে বাড়িতেই রবীন্দ্রনাথের আলাপ আন্না তড়খড়ের সঙ্গে।
[ পাত্র আরবে, যোগীর রাজ্যে মুসলিম কন্যার বিয়ে ভিডিও কনফারেন্সেই ]
আন্নার সংস্পর্শে কিশোর রবীন্দ্রনাথের আড়ষ্টতা ভাঙবে, এই ভেবেছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ। আন্না বয়সে বছর তিনেকের বড় ছিলেন রবীন্দ্রনাথের থেকে। পড়াশোনা করা চোস্ত মেয়ে। কিশোর রবিকে ইংরেজিতে ও বিলেত যাওয়ার জন্য সড়গড় করার দায়িত্ব নিয়ে, কিশোর কবির প্রতিভাতেই মুগ্ধ হয়ে গেলেন তিনি। কবিকাহিনী থেকে এক একটি কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ করে শোনাতেন রবীন্দ্রনাথ। আর তত মুগ্ধতা জড়িয়ে ধরত আন্নাকে। কিশোর কবিকে শেখাতে এসে বিরল প্রতিভায় যেন অবশ হয়ে গেলেন আন্না। শুরু হল সম্পর্কের এক অন্যতর রসায়ন।
[ অন্তর্বাস খোলার নির্দেশ, পড়ুয়াদের মর্যাদা কাড়ার অভিযোগ কংগ্রেসের ]
ইতিমধ্যে ছাপা হয়ে গিয়েছে কবিকাহিনী। ডাক মারফত সে বই পৌঁছল কবির হাতে। কোন এক অজানা নারীকে কল্পনা করে মনের আকুতি ধরা দিয়েছিল কবিতায়। সে নারীর নাম দিয়েছিলেন নলিনী। এতদিনে যেন দু’য়ে দু’য়ে মিলে গেল। কবি আন্না তড়খড়েরই নাম দিলেন নলিনী। তাঁর কাব্যে গেঁথে নিলেন এই নলিনীকে। বলা যায়, এই তার প্রথম প্রেম। এরমধ্যে মাস দু’য়েক কেটে গিয়েছে। রবীন্দ্রনাথকে পাড়ি দিতে হবে অন্য কোথাও। ছাড়তে হল তড়খড় বাড়ি। শুধু নলিনী থেকে গেলেন কবির কাব্যে। এই আন্না তথা নলিনীই কবিকে জানিয়েছিলেন, তাঁর গান শুনে মরণ থেকেও প্রাণ ফিরে পেতে পারেন তিনি। সেই নলিনীকে সেদিন তাঁর প্রাপ্য হয়তো দিতে পারেননি কিশোর কবি। কিন্তু অবজ্ঞা করেননি। দস্তানা চুরির খেলা ফেলে রাখলেও, কাব্যে অমর করে রেখেছেন তাঁকে।
[ দলে দলে হিন্দুরা ভিড় জমান এই দরগায়, কেন জানেন? ]
এই নলিনীকেই বড় পর্দায় ফিরিয়ে আনতে চলেছেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। বাঙলা-মারাঠি ছবি নলিনীর প্রযোজক হিসেবে এবার তাই দেখা যাবে তাঁকে। ছবির পরিচালনার ভার উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.