সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এদেশে তাঁর সন্তানরা সুরক্ষিত নয়। কারণ, তিনি এবং তাঁর স্ত্রী, কেউই তাঁদের সন্তানদের ধর্মের পাঠ দেননি। বৃহস্পতিবার একটি ভিডিওয় এই বার্তা দেওয়ার পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোলড হন অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ। এখানেই শেষ নয়। শুক্রবার উত্তরপ্রদেশের নবনির্মাণ সেনার সভাপতি অমিত জানি আগামী বছর ১৪ আগস্ট অভিনেতার নামে করাচির টিকিট কেটেছেন। অমিত জানান, এত ভয় পেলে এদেশে থাকা যাবে না। তাই নাসিরুদ্দিনের জন্য পাকিস্তানের স্বাধীনতার দিনই তাঁর জন্য একটি টিকিট কেটেছেন তিনি। এদিন চুপ করে বসে থাকেননি অভিনেতাও। শুক্রবার জয়পুরে একটি সাহিত্য উৎসবে গিয়ে নাসিরুদ্দিন বলেছেন, “দেশকে ভালবাসা কি রাষ্ট্রদ্রোহিতা?”
উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরে পুলিশ অফিসার সুবোধকুমার সিংকে পিটিয়ে মেরে ফেলা এবং সারা দেশে বাড়তে থাকা হিংসার কথা নিয়ে ‘কারবাঁ এ মোহব্বত’ নামে একটি অনলাইন সংস্থা এই ভিডিওটি প্রকাশ করে বৃহস্পতিবার। গত কয়েকদিন ধরে নাসিরের বেশ কিছু মন্তব্যে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। কয়েকদিন আগে বিরাট কোহলির ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিতর্ক বাঁধিয়েছিলেন প্রবীণ অভিনেতা। তারপর বুলন্দশহরের ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। বৃহস্পতিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই সাক্ষাৎকার প্রকাশ্যে আসে। তাতে অভিনেতা বলেন, “যদি কখনও আমার ছেলেমেয়েদের ঘিরে ধরে মারমুখী জনতা জিজ্ঞাসা করে, ‘তুমি হিন্দু না মুসলিম?’ তাহলে ওদের কাছে কোনও উত্তর থাকবে না। কারণ, ওরা কোনও ধর্মীয় পাঠ পায়নি।” বুলন্দশহরের ঘটনার কথা উল্লেখ না করেই বলেন, “পুলিশ অফিসারের চেয়ে ভারতে গরুর গুরুত্ব বেশি।”
এরপরই সোশ্যাল মিডিয়ার কটাক্ষের মুখে পড়েন প্রবীণ অভিনেতা। একটি ইংরেজি চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নাসিরের ভাই জমিরুদ্দিন শাহ নাসিরকে সমর্থন করেন। জমিরুদ্দিন সেনাবাহিনীতে ছিলেন। সেনা থেকে অবসর নিয়ে দীর্ঘদিন তিনি আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ সামলেছেন। জমিরুদ্দিন জানান, তাঁদের বাবা স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। ছেলে হিসেবে নাসির যা বলেছেন তা সঠিক। এই প্রসঙ্গ টেনে এদিন নাসিরুদ্দিনের প্রশ্ন, যাঁর পরিবারের লোকজন সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন, তাঁরা কেউ দেশদ্রোহী হতে পারে? “নিজের দেশের সমালোচনা করলেই কি কেউ দেশদ্রোহী হয়ে যায়? আমরা যে দেশ হিসেবে ক্রমেই পিছিয়ে যাচ্ছি এবং দেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র তৈরির দিকে নিয়ে যাচ্ছি, সেটা নিয়ে মুখ খোলাতেই কি আমাকে এত আক্রমণ?”, এ প্রশ্নই ছুঁড়ে দেন তিনি।
কট্টরপন্থী সংগঠনগুলির সদস্যরা নেটদুনিয়ায় নাসিরকে আক্রমণ করতে শুরু করেন। তাঁকে ‘দেশদ্রোহী’, ‘দেশবিরোধী’ বলতেও ছাড়েননি। শুক্রবার রাজস্থানের আজমেড়ে সাহিত্য উৎসবে যোগ দেওয়ার কথা ছিল নাসিরুদ্দিনের। কিন্তু স্থানীয়রা তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করলে অনুষ্ঠান বাতিল করে দেয় আয়োজকরা। তাঁকে কালো পতাকা দেখায় বিক্ষোভকারী। তাঁর কুশপুতুলও পোড়ানো হয়। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার তিনি বলেন, “আগে আমি যা বলেছিলাম, সেটা বলেছিলাম একজন সন্ত্রস্ত ভারতীয় হিসেবে। আর আজ যেটা বলছি, সেটা আমাকে দেশদ্রোহী বলার পর। যে দেশ আমার জন্মভূমি, যেখানে আমার বাড়ি, তাকে আমি ভালবাসি। সেই ভালবাসা কি অপরাধ হতে পারে? ভালবাসি তাই উদ্বিগ্ন। এতে এত বিতর্ক কেন?”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.