Advertisement
Advertisement

কড়া নিরাপত্তার মধ্যে মুক্তি পেল ‘পদ্মাবত’, চার রাজ্যে দেখাতে নারাজ মাল্টিপ্লেক্স

'আমি দেখতে যাচ্ছি পদ্মাবত, পারলে আটকাক কর্ণি সেনা', সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া।

Padmaavat fire rages, cops ready to thwart fringe attack
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:January 25, 2018 3:52 am
  • Updated:January 25, 2018 3:57 am  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কর্ণি সেনার হুঁশিয়ারিকে কার্যত অগ্রাহ্য করে ভারতে স্বমহিমায় মুক্তি পেল সঞ্জয় লীলা বনশালি পরিচালিত, রণবীর সিং, শাহিদ কাপুর ও দীপিকা পাড়ুকোন অভিনীত পিরিয়ড ড্রামা ‘পদ্মাবত’। রাজস্থান, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র ও উত্তরপ্রদেশ-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে কর্ণি সেনা তাণ্ডব চালালেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সিনেমা-প্রেমী মানুষ কিন্তু হলমুখী। সোশ্যাল সাইটে একের পর এক পোস্ট ভেসে উঠছে, ‘আমি দেখতে যাচ্ছি পদ্মাবত, পারলে আটকে দেখাক কর্ণি সেনা। বস্তুত, সাধারণ মানুষের এই আবেগ কিন্তু শুধুমাত্র সঞ্জয় লীলা বনশালি বা তাঁর সিনেমা নিয়ে নয়, মানুষ প্রতিবাদ দেখাচ্ছে একটি ভুইফোঁড় সংগঠনের হাতে গোনা কয়েকজন সদস্যদের তাণ্ডবের বিরুদ্ধে।

‘অনেক ২৫ জানুয়ারি আসবে। চলেও যাবে। কিন্তু রাজস্থানে কোনও ‘পদ্মাবত’ মুক্তি পাবে না।’‘কারণ? আমরা পেতে দেব না।’ রাখঢাক ছেড়ে এবার সরাসরি হুঙ্কারই দিয়েছেন লোকেন্দ্র সিং কালভি। রাজপুত কর্ণি সেনা প্রধান। তবে হুমকির সুরে তিনি যা বললেন, আর যখন বললেন, তার বহু আগে থেকেই অবশ্য রাজ্যে রাজ্যে তাণ্ডব শুরু করে দিয়েছে তার অনুগত চেলা-চামুন্ডারা। কোথাও পুড়িয়ে খাক করে দেওয়া হয়েছে গাড়ি-বাইক, জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে একের পর এক প্রেক্ষাগৃহ, শপিং মল। কোথাও ভাঙচুর চালানো হয়েছে দোকানে দোকানে। হাইওয়ে এমনকী রেল অবরোধ করে চলেছে দীর্ঘ ধরনা। আর কোথাও বেনজিরভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ঐতিহাসিক দুর্গের দ্বার। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার।

Advertisement

শুধু কী তাই? কর্ণি সেনার তাণ্ডবের হাত থেকে রেহাই পায়নি বাচ্চাদের স্কুলবাসও। অকুস্থল গুরুগ্রাম। ঘড়িতে তখন সময় দুপুর তিনটে। বুধবার সবে স্কুল শেষ হয়েছে। পড়ুয়ারা সকলে একে একে বাসে উঠতে ব্যস্ত। হঠাৎই জি ডি গোয়েঙ্কা ওয়ার্ল্ড স্কুলের ওই বাস লক্ষ্য করে পাথরবৃষ্টি শুরু করল একদল বিক্ষোভকারী। অতর্কিত সেই হামলায় প্রথমটায় ভয়ে কুঁকড়ে যায় বাসের ভিতর থাকা নার্সারি থেকে দ্বাদশ শ্রেণির জনা তিরিশেক পড়ুয়া। আতঙ্কের চোটে দু’হাতে মুখ ঢেকে সিটের তলায় সেঁধিয়ে যায় তারা। কেউ কেউ কাঁদতে শুরু করে দেয় উচ্চ স্বরে। কোনওক্রমে তাদের সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন শিক্ষিকারা। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার ফুটেজ ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। আর তার পরেই নিন্দার ঝড় বয়ে গিয়েছে দেশজুড়ে। সামান্য একটি ছায়াছবির মুক্তি ঘিরে জন্ম নেওয়া বিতর্কের জন্য স্কুলবাসে গুণ্ডামি চালানোর ঘৃণ্য প্রবণতার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে গোটা দেশ।

কড়া ভাষায় ঘটনার সমালোচনা করেছেন কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী সুরেশ প্রভু। দাভোসে আয়োজিত ৪৮-তম ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মঞ্চ থেকেই তিনি জানিয়েছেন, “এই ধরনের ঘটনা একান্তভাবেই অনভিপ্রেত। দেশের আইন-কানুনকে নিজেদের এভাবে নিজেদের হাতে নেওয়া কখনওই উচিত নয়। সরকার কখনও তা মেনে নেবে না। ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সেদিকে সরকার নজর রাখবে। বিনিয়োগকারীদের জন্য দেশে নিরাপদ পরিবেশ রাখার বিষয়ে সরকার সচেষ্ট।” অন্যদিকে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীও স্কুলবাসে হামলার নিন্দা করেছেন। তাঁর মতে, “শিশুদের উপর হামলার ঘটনার কোনও সাফাই হয় না। হিংসা এবং ঘৃণা ছড়ানো দুর্বলতার লক্ষণ।” বুধবার রাতে সাংবাদিক বৈঠক করে সিনেমার কলাকুশলীরা সাধারণ মানুষকে হলে গিয়ে সিনেমাটি দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন।

তাৎপর্যপূর্ণভাবে, সেন্সর, প্রশাসন এমনকী দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কর্ণি সেনা গলা ফুলিয়ে জানিয়েছে যে, বনশালি পরিচালিত এই রাজপুত পিরিয়ড ড্রামা যদি রাজস্থানের একটিও প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়, তাহলে হাজার হাজার রাজপুত রমণী আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মাহুতি দেবেন। পালন করবেন মহান ‘জহর’ ব্রত। ঠিক চিতোরের রানি পদ্মিনীর মতোই। উত্তাল এই পরিস্থিতির নাড়ি মেপে মাল্টিপ্লেক্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া বুধবার এক বিবৃতিতে জানিয়ে দিয়েছে–রাজস্থান, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ এবং গোয়ার কোনও মাল্টিপ্লেক্সে ‘পদ্মাবত’ ছবি প্রদর্শিত হবে না। আশু হামলার আশঙ্কাতেই তাদের এই সিদ্ধান্ত। বিষয়টি নিয়ে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দীপক আশারের সাফ কথা, “দর্শকদের নিরাপত্তাই আমাদের কাছে সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।” বিতর্ক সেই চলছে তো চলছেই।

কেবল রাজস্থান নয়। গুজরাত, হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্রেও ছবির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখানো হয়েছে পুরোদমে। গুরুগ্রামে ওয়াজিরপুর-পতৌদি সড়ক অবরোধ করা হয়েছে। সোহনায় জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে একটি বাস। হামলার আশঙ্কায় গুরুগ্রামে পরবর্তী নির্দেশিকা জারি না হওয়া পর্যন্ত সবক’টি ক্লাব এবং বার বন্ধ রাখা হয়েছে। সেখানকার অধিকাংশ প্রেক্ষাগৃহেও এই ছবি দেখানো হবে না বলে ইতিমধ্যেই ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে, উত্তরপ্রদেশের এটাওয়ায় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। বিক্ষিপ্তভাবে হলেও হিংসা চলেছে মুজফফরনগর, কানপুরে। বিক্ষোভ চলেছে লখনউয়ে একটি শপিং মলের বাইরেও। মঙ্গলবার রাতে আমেদাবাদে শপিং মল ও মাল্টিপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত থাকায় দায়ে ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সেখানে বুধবারও পরিস্থিতি ছিল যথেষ্টই অগ্নিগর্ভ। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে এদিন শূন্যে গুলি ছুড়তে হয় পুলিশকে। পুণেতেও দোকান ও গাড়ি ভাঙচুরের দায়ে ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, এই সব কিছু থেকে ব্যতিক্রম পশ্চিমবঙ্গ। বাংলায় এখনও পর্যন্ত ‘পদ্মাবত’ ঘিরে হিংসার কোনও খবর নেই। রাজ্য সরকারের তরফে দেওয়া কড়া নিরাপত্তার আশ্বাসই যার মুখ্য কারণ। ছবি দেখতে যাওয়া দর্শক কিংবা ছবি দেখানোর দায়িত্বে থাকা হল মালিক-কোনও পক্ষেরই ছবি ঘিরে কোনও মাথাব্যথার খবর নেই।

বৃহস্পতিবার ছবি মুক্তির পর ঠিক কী হবে, কেউ জানে না। কী হতে পারে, সেটাও ধন্দে ভরা। তবে যে প্রশ্নটা আপামর দেশবাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে, তা হল, সাম্প্রতিক অতীত তো দূর অস্ত! সুদূর অতীতেও মুক্তির আগে থেকে মুক্তির দোরগোড়ায় থাকাকালীন কোনও ছবি ঘিরে এত নাটক, এত বিতর্ক সম্ভবত আগে হয়নি। সত্যিই। শুধু ‘বনশালি অ্যান্ড কোম্পানি’র কাছে নয়। সমগ্র ভূ-ভারতে ‘পদ্মাবত’ ইস্যু নজিরবিহীন। ঐতিহাসিক। স্মরণীয়। আজ সকালেও দেশের নানা প্রান্ত থেকে বিক্ষিপ্ত হামলার খবর এসেছে। তবে সিনেমা হলের ২০০ মিটারের মধ্যে পুলিশি প্রহরা বসিয়ে মানুষকে নিরাপত্তা দিতে হচ্ছে, ‘পদ্মাবত’ মুক্তি না পেলে এই দৃশ্য এ দেশের মানুষের দেখা হত না বোধহয়। শেষমেশ ‘বনশালি’ বা ‘রানি পদ্মাবতী’নন, জিতে গেলেন কিন্তু সেই আম ভারতীয়রাই।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement