নির্মল ধর: ১৯৬৮ সাল। সন্দীপ রায় তখন নেহাতই নাবালক। সত্যজিৎ রায়ের ফিল্ম ইউনিটে যোগ দেন নিমাই ঘোষ। তখন থেকেই সন্দীপের কাছে তিনি ‘নিমাই কাকু’। আলোকচিত্রী নিমাই ঘোষের মৃত্যুতে পুরনো দিনের স্মৃতি হাতড়াচ্ছিলেন সন্দীপ রায়। প্রিয় নিমাই কাকুর কথা বলতে গিয়ে বারবার একটা কথাই ঘুরে ফিরে বলছিলেন, ‘আর দেখা হবে না।’
বুধবার সকালে ৭ টা ১০ মিনিট নাগাদ প্রয়াত হন সত্যজিৎ রায়ের আলোকচিত্রী নিমাই ঘোষ। দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা তাঁকে গ্রাস করেছিল। আজ, নিজ বাসভবনেই তাঁর মৃত্যু হয়। কিন্তু করোনা আতঙ্কের জেরে দেশজুড়ে লকডাউন হওয়ার কারণে টলিপাড়ার প্রায় কেউই তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে যেতে পারেননি। সন্দীপ রায়ও ব্যতিক্রম নন। কিন্তু নিমাই কাকুকে শেষবারের মতো না দেখার আক্ষেপ বোধহয় তাঁর কোনওদিনই যাবে না। কথা প্রসঙ্গেই তিনি সেকথা জানান। বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক প্রায় ৫০ বছরের। উনি তো আমাদের এক্সটেনডেড পরিবারের একজন ছিলেন। এমন একটা পরিস্থিতে শেষ দিনটি এল যে, শেষ দেখাও দেখতে যেতে পারলাম না। মুম্বই থেকে ছেলে সাত্যকিও আসতে পারল না।’
তবে নিমাই ঘোষকে শুধু ফটোগ্রাফার বলতে রাজি নন সন্দীপ রায়। তাঁর কাছে নিমাই কাকু ছিলেন অন্য মানুষ। ‘নিমাই কাকু অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতেন। ছবির রক্ষণাবেক্ষণ করতেন বিজ্ঞানসম্মতভাবে। বাবা যখন যা ছবি চাইতেন, পাঁচ মিনিটের মধ্যে তাঁর হাতে চলে আসত। এমনই ছিলেন নিমাই কাকু। মুহূর্তে বেছে দিতে পারতেন সেরা ফ্রেমটি। নির্দিষ্ট তাপমাত্রায়, সুন্দরভাবে কাটালজিং করে ছবিগুলো রাখতেন তিনি। এমন যত্নে আর কোনও ফটোগ্রাফারকে কাজ করতে বড়ো একটা দেখিনি। সত্যি বলতে, ওঁর চলে যাওয়া অর্থগতভাবেই বাবার যুগটার অবসান ঘটিয়ে দিল। নিমাই কাকু তো শুধু বাবার ইউনিট ফটোগ্রাফারই ছিলেন না, ছিলেন ফটোবাওগ্রাফার।’ বলেন সন্দীপ। কথা বসার সময় ধরে আসে তাঁর গলা। প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা অনুভব করা যায় ফোনের অপর প্রান্ত থেকেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.