Advertisement
Advertisement

ভারতীয় চলচ্চিত্রে যুগাবসান, প্রয়াত পরিচালক মৃণাল সেন

শোকের ছায়া চলচ্চিত্র জগতে৷

Mrinal Sen passes away
Published by: Sayani Sen
  • Posted:December 30, 2018 12:52 pm
  • Updated:December 30, 2018 1:09 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘I am one year younger than what I’ll be in next year’- আত্মজীবনীতে এভাবেই নিজের জন্মদিনকে ব্যাখ্যা করেছিলেন কিংবদন্তি পরিচালক মৃণাল সেন৷ বছরের ঠিক শেষে ইহলোককে চিরবিদায় জানালেন প্রবাদপ্রতীম পরিচালক৷ রবিবার সকালে সাড়ে দশটা নাগাদ নিজের বাড়িতেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি৷ বার্ধক্যজনিত কারণে দীর্ঘদিন ধরেই ভুগছিলেন দাদাসাহেব ফালকে এবং পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত পরিচালক৷ তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৫। 

[ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে গল্প, জানা গেল ‘ভবিষ্যতের ভূত’ ছবির নয়া টিজারে]

১৯২৩ সালের ১৪ মে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার ফরিদপুরে জন্ম নেওয়া এই বাঙালি পরিচালক ১৯৮৩ সালে পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন। গত বছরই স্ত্রী বিয়োগ ঘটেছিল। এবার পৃথিবীর মোহ কাটিয়ে নিজেও পরলোকে পাড়ি দিলেন।

Advertisement

সিনেমার ইতিহাস পেয়েছিল এই অক্লান্ত পদাতিককে৷ বাংলা সিনেমার খোলনলচে বদলে তখন উঠে আসছে দুটি ধারা৷ একদিকে সত্যজিৎ তাঁর নান্দনিকতা আর ভাবনায় জারিত করছেন সিনেমা শিল্পকে, অন্যদিকে ঋত্বিক ঘটক চলচ্চিত্রে লিখে চলেছেন সময়ের অভিশাপ আর অভিশাপ পেরিয়ে অনন্ত আশাবাদের আলো৷ ঠিক তার মধ্যেই স্বতন্ত্র, ঋজু ও বলিষ্ঠ এক স্বর হয়ে উঠে এসেছিলেন মৃণাল সেন৷ চলচ্চিত্র সমালোচনার সুবাদে দেশ ও বিদেশের চলচ্চিত্রের হাল হকিকত ছিল নখদর্পণে৷ বাস্তবতার অঙ্গীকার মেনে নিয়েই সিনেমা কোন নতুন আঙ্গিক পেতে পারে, তারই খেলায় মেতেছিলেন তিনি৷

[আশঙ্কাজনক কাদের খান, কানাডার নার্সিংহোমে ভরতি বর্ষীয়ান অভিনেতা]

প্রথম ছবিতেই অবশ্য নিজের স্বাক্ষর ফুটিয়ে তুলতে পারেননি৷ তবে তারপর একে একে বাঙালি ঋদ্ধ হতে থাকে তাঁর সচেতন নির্মাণে৷ ফলে তাঁর ছবি হয়ে উঠল একেবারে অন্য ঘরানার৷ যে ঘরানায় দাঁড়িয়ে শোকাহত বাবার একটা ছোট্ট নমস্কারই প্রবল থাপ্পড় বেজে উঠতে পারে বাঙালির বুকে৷ টান দিতে পারে ভাবনা আর জীবনদর্শনের একেবারে মূল ধরে৷ আর এই করতে করতেই বাংলা সিনেমাকে তিনি প্রতত করেন আন্তর্জাতিকার আঙিনায়৷ আখ্যানের ছাঁচ ভেঙে প্রবন্ধধর্মিতায় তিনি বাংলা সিনেমাকে হাজির করান এমন এক ভুবনে, যেখানে সিনেমা শিল্পের নিরিখে আন্তর্জাতিক হয়েও আয়না ধরতে পারে বাঙালির চোখের তারায়৷ আসলে তিনি মৃণাল সেন বলেই বোধহয় বাঙালির বাইশে শ্রাবণের শোকভেজা নস্ট্যালজিয়া ভেঙে তুলে ধরতে পারেন দুর্দশা-সংকট আর রিক্ততাটুকু৷ ছাত্রবস্থায় তিনিই তো সাক্ষী থেকেছিলেন কবিপ্রয়াণের জমায়েতে বাঙালির ভিড়ের উন্মাদনায় এক বাবার হাত থেকে মৃত শিশুর হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায়৷ মননে বোধহয় সেদিনই পড়েছিল কালসিটে৷ সেই অভিঘাত, সেই কালসিটের ব্যথা তিনি গোপন করেননি৷ বরং রূপোলি পর্দার মোহাবরণ মুক্ত করে, এই বাস্তবতার মুখোমুখিই তিনি দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন দর্শককে৷ আর সেই লক্ষ্যের পথে প্রতিনিয়ত বেছে নিয়েছেন নতুন আঙ্গিক, নতুন নিরীক্ষা৷ ছবিতে ছবিতে রেখেছেন তাঁর বুড়ো আঙুলের ছাপ, যার অনুকৃতিও আজ অসম্ভবপ্রায়৷ বাংলা ছবি আজও তাই তাঁর সমীপে শিক্ষার্থী৷ আর বাঙালি দর্শকের কাছে তিনি হৃতগৌরবের মাইলফলক৷ তাঁকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে চলচিত্র জগৎ৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement