রুপোলি পর্দা থেকে রাজনীতির আঙিনায়৷ এবার মিমি চক্রবর্তী ভোটযুদ্ধে৷ তার আগে এই দোলে মুক্তি পাচ্ছে তাঁর নতুন ছবি৷ আড্ডায় কোয়েল মুখোপাধ্যায়৷
* রুপোলি পর্দা থেকে রাজনীতির মঞ্চে মিমি চক্রবর্তী। পরিকল্পনা কি আগেই করে ফেলেছিলেন এই নয়া ইনিংস খেলার?
– পরিকল্পনা করে আমি কোনওদিনই কিছু করি না। এবারও করিনি। একটাই কথা বলব যে, দিদি (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) আমার কাঁধে এত বড় দায়িত্ব দিয়েছেন, আমি তার জন্য চিরকৃতজ্ঞ। আর আজ পর্যন্ত সকলের আশীর্বাদের হাত আমার উপর ছিল। সকলে আমাকে ভালবেসেছেন। তাই চাইব, আগামী দিনেও এই ভালবাসাটা বজায় রাখুন। আমার উপর বিশ্বাস রাখুন। আমায় একটা সুযোগ দিয়ে দেখুন। আমি নিশ্চয়ই পারব।
* যাদবপুরের মতো হাইপ্রোফাইল কেন্দ্র থেকে দাঁড়াচ্ছেন…
– এসব কিছুই এখন ভাবছি না। আমি শুধু এগোতে চাই। আশা করি, সকলে পাশে থাকবেন।
* মনের অবস্থাটা এই মুহূর্তে ঠিক কেমন? নার্ভাস না এক্সাইটেড?
– নার্ভাস একেবারেই নই। বরং এক্সাইটেড বলতে পারেন। দিদি আমাকে এত বড় দায়িত্ব দিয়েছেন। দিদি মনে করেছেন, আমার সেই যোগ্যতাটা আছে, আমি পারব। আমাকে সেই প্রত্যাশা পূরণ করতেই হবে। আমি খাটতে রাজি। যা যা করার, করতে রাজি। আমি রেডি। মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। মানুষের পাশে থাকতে চাই। এই বিষয়ে আমি আত্মবিশ্বাসী।
* পরিবারের প্রতিক্রিয়া কী?
– মা,বাবা,পরিবারের সকলেই খুব উৎসাহ দিচ্ছে। ওরা খুবই খুশি। মা তো বলেই দিয়েছে, “তুই—ই জিতবি!” (হাসি) আমি চাইব, এইভাবেই সকলে আমায় আশীর্বাদ করুন। আমার পাশে থাকুন, যাতে এই জার্নিটাও সাকসেসফুল হয়।
*আচ্ছা। প্রসঙ্গ বদলানো যাক। দোলে মুক্তি পাচ্ছে, আপনার ছবি ‘মন জানে না’। ছবিতে আপনি ‘পরি’-র চরিত্রে। সে কেমন?
– আমার চরিত্রের নাম পরি বানু। চরিত্রটা একজন মুসলিম অনাথ মেয়ের। আমির নামে একজনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। আমির পেশায় ট্যাক্সি ড্রাইভার। বিয়ের পর দু’জনের জীবন সুখেই কাটছিল। কিন্তু হঠাৎই তাল কেটে যায়। এমন কিছু ঘটে যে পরি ঘর ছাড়ে। মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। স্ট্রাগল শুরু হয় তখন থেকেই। আদৌ পরি সেখান থেকে বেঁচে ফিরতে পারে কি পারে না, ছবিটা সেটা নিয়েই। ছবিতে একটা বার্তাও দেওয়া হয়েছে যে, মানসিক অবসাদ হোক বা অন্য কোনও সমস্যা, ভালবাসা দিয়ে সবকিছুরই আরোগ্য সম্ভব।
* কতটা সহজ বা কঠিন ছিল পরিকে বড়পর্দায় ফুটিয়ে তোলা?
– সহজ তো কখনওই ছিল না। এই প্রথম আমি কোনও মুসলিম মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করছি। চরিত্রটা আবার ড্রাগ—অ্যাডিক্ট। মাদকাসক্ত মেয়ের চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে আমাকে প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। পড়তে হয়েছে, জানতে হয়েছে এই বিষয়ে। শগুফতা (পরিচালক শগুফতা রফিক) কিছু ক্লিপিংসও পাঠিয়েছিল, যেটা একজন সুপার মডেলের জীবন থেকে তুলে আনা। সেগুলো স্টাডি করেছি।
* পরিচালক হিসাবে বাংলায় শগুফতার এটা প্রথম কাজ। অভিজ্ঞতা কেমন?
– অভিজ্ঞতা তো দারুণ। ইমোশনাল সাপোর্ট দিয়েছেন, যেটা খুব জরুরি।
* এই প্রথম বড়পর্দায় গান গাইলেন। কে রাজি করাল মিমিকে?
– এটা কী বলুন তো! আমি তো হুজুগে পড়ে সব করি! (হাসি) আমি গান গাইলে নিজের জন্য গাই। যখন কোনও অভিনেতা—অভিনেত্রী পর্দায় গান গায়, তখন মানুষ যেটা প্রথম করে, সেটা হল ‘জাজ’ করা! লোকজন বলতে শুরু করে, “একে তো অভিনয় করে ফাটিয়ে দিচ্ছেন, আবার এই গলায় গানও গাইবেন?” কিন্তু আমি সবসময়ই চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবাসি। আমার গান গাওয়ার ব্যাপারে মণিদা (মহেন্দ্র সোনি) খুব শিওর ছিলেন। আর এসভিএফ—এর পিআর টিম বার বার বলেছে, দিদি, তোমায় করতেই হবে! আমার মিউজিক ডিরেক্টর ডাব্বুরও আমার উপর বিশ্বাস ছিল। তাই রাজি হয়ে গেলাম!
*গান শিখেছেন?
– না। আমি শিখিনি। কিন্তু আমার বাড়িতে সকলে প্রফেশনাল সিংগার। আমার দিদি, বোনেরা সকলেই। বাড়িতে গানের চর্চাটা আছে।
*যশ দাশগুপ্তর সঙ্গে আবারও জুটি বাঁধলেন।
– যশের সঙ্গে জুটিটা প্রথম থেকেই দর্শকদের খুব ভাল লেগেছে। আমাদের প্লাস পয়েন্টটা হল, আমরা এক রকমের চরিত্র করি না। আমরা জুটিটা নিয়ে বার বার এক্সপেরিমেন্ট করেছি। আমাদের মধ্যে বন্ডিংটা খুব স্ট্রং, তাই হয়তো আমাদের জুটিকে দর্শকরা পছন্দ করেন।
*পুপে থেকে পরি…এখনও পর্যন্ত জার্নিটা কেমন?
-লং জার্নি। (হেসে) গ্রাফটা কখনও উপরে উঠেছে, কখনও নিচে নেমেছে। সাফল্য যেমন এসেছে, ব্যর্থতাও এসেছে। অনেক কিছু শিখেছি। সংক্ষেপে বলতে গেলে গ্রেট জার্নি।
*স্মরণীয় কিছু মুহূর্ত…
– এক নয়। একাধিক স্মরণীয় মুহূর্ত আছে। ফ্লোরে যেদিন প্রথম শুনেছিলাম, ‘রোল, ক্যামেরা, অ্যাকশন’, তার পর ঋতুদা (পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ) যেদিন আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, ‘দারুণ হয়েছে’, এসভিএফ—এ যখন প্রথম কাজ করি, এগুলো সবক’টাই আমার কাছে স্মরণীয় মুহূর্ত। আমার মা যখন আমাকে জড়িয়ে বলে, ‘আই অ্যাম প্রাউড অফ ইউ’, সেটা আমার কাছে স্মরণীয়। তার পর আমি জলপাইগুড়ির মেয়ে। তো,সেখানে আমার মাকে যখন সকলে ‘মিমির মা’ বলে ডাকে, সেটাও স্মরণীয়। সুতরাং, কোনও একটা মুহূর্ত বা দিনকে স্মরণীয় হিসাবে বেছে নেওয়া মুশকিল।
*আর কোন মুহূর্তগুলো ভুলে যাওয়ার মতো?
– আমি ক্ষমা করে দিই কিন্তু ভুলে যাই না। কোনও কিছুই আমি বাতিলের খাতায় ফেলে দিই না। আমি সব কিছুই মনে রাখি এবং সব কিছু থেকেই শিক্ষা নিই।
*ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় করা কোনও পোস্ট–মিমি চক্রবর্তী সবসময়ই বিতর্কে থাকেন। কেন?
– খারাপ তো লাগেই। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মিডিয়ায় একাধিক বার আমার কথার অপব্যাখ্যা করা হয়েছে। এমন কিছু মিথ্যা কথা লেখা হয়েছে, যা ঘটেইনি। আমি জানিই না। কারও মনে সম্ভবত আমার বিরুদ্ধে কোনও ক্ষোভ ছিল, সেটা থেকে এ সব ঘটিয়েছে। বা হয়তো গসিপ ছড়ানোর উদ্দেশ্যে করেছে। ওরা ভুলে যায়, আমিও মানুষ। দেখুন, আমি এরকম নই, যে মিডিয়ার কাছে গিয়ে গিয়ে বলব, এইটা ঠিক আর এইটা ভুল। আমি খুব সোজাসাপ্টাভাবে জীবন কাটাই। নিজের মতে চলি। সেটা নিয়ে যদি লোকে বিতর্ক করে, করুক। তাদের কাছে আমি এতটা গুরুত্বপূর্ণ, আমি জানতাম না! একটা সামান্য ছবি পোস্ট করলেও লোকজন ট্রোলিং করতে শুরু করে দেয়। তাই আমি ‘কমেন্ট’ সেকশন বন্ধ করে দিয়েছি। কিন্তু এর পাশাপাশি এটাও সতি্য যে, নেগেটিভের পাশাপাশি পজিটিভিটিও রয়েছে। আর সেটা অনেকটাই বেশি। সেটা মাথায় রেখে চলি।
*মনে ক্ষোভ আছে এ সব নিয়ে?
– না। মনের মধ্যে কোনও ক্ষোভ, রাগ পুষে রাখি না আমি। যারা বডি শেমিং করে, ট্রোলিং করে, তাদের বলব, মেয়েদের সম্মান দিতে শিখুন।
*প্রিয় চরিত্র
– নিঃসন্দেহে ‘বোঝেনা সে বোঝেনা’র ‘রিয়া’।
*ছোটপর্দায় ফেরার ইচ্ছা আছে?
– সিরিয়াল তো নয়। কিন্তু ভাল নন—ফিকশন শো হলে অবশ্যই ফিরব।
*এ বছর বিয়ে করার কোনও পরিকল্পনা আছে?
– ও গড! না না। (হাসি) বিয়ের জন্য আপনারাই ভাল কাউকে খঁুজে দিন না বরং!
*দোল কেমন কাটাবেন?
– আগে খুব খেলতাম। স্কুল—কলেজ জীবনে। কাদা, পচা টম্যাটো, ডিম ছোড়া হত। এখন হয় না। দোলের পরই শুট থাকে। তাছাড়া রং খেললে আমার বাচ্চাগুলো (দুই পোষ্য) বাইরে বেরিয়ে আসে। ওদের রংয়ের প্রতি অ্যালার্জি আছে। তাই সাবধানে থাকতে হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.