Advertisement
Advertisement

ক্যানসার জিতে মনীষার লক্ষ্য এভারেস্ট বেস ক্যাম্প

পাহাড় টানছে পাহাড়ি মেয়েকে।

Manisha Koirala shares her struggle
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:January 27, 2019 8:20 pm
  • Updated:January 27, 2019 9:10 pm

ভাস্কর লেট, জয়পুর: রবিবার সকাল সকাল জয়পুর লিটারারি ফেস্টিভ্যালের দুয়ারে গিয়ে মনে হল যেন বা রামধনু নেমে এসেছে মাটিতে! শীতের কামড় জবরদস্ত। কিন্তু এক ছটাক মানসিক শৈত্য নেই। ছুটির দিনের আলস্য আর কুয়োর ব্যাঙের ঘরকানা ইমেজ ত্যাগ করে তারুণ্য ও যৌবনের ঢেউ উঠেছে জেএলএফ প্রাঙ্গণে। লাল নীল হলুদ সবুজ। রঙের আগুনে ফুটছে চারদিক। এমনকী, কালো রংও যে এত প্রখর সকালে স্বতন্ত্র ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হয়ে উঠতে পারে– ভাবতে পারিনি।
অবভিয়াস একটা প্রশ্ন ঘাই মারল তখন। আচ্ছা, তিনি আজ কোন রঙের পোশাক পরে আসবেন? ‘ডানাকাটা রূপসী’ বলে তাঁর বরাবরের খ্যাতি। সে রূপ সমীহ জাগায়। সে রূপ মোহান্ধ করে। সে রূপ পথিককে মরীচিকা দেখিয়ে ছাড়ে। আবার বয়স যত বেড়েছে, তাঁর সৌন্দর্যে এসেছে অভিজ্ঞতার দীপ্তি, আভিজাত্যের আলো। মাঝে অনেকগুলি দিন আমজনতার দরবারে সেভাবে ছিলেন না। অনেক দিন পরেই জেএলএফের মতো সম্ভ্রান্ত ও উচ্চনাসা মহলে পা রাখবেন। মানিয়ে নিতে যে অসুবিধা হবে না, বলা বাহুল্য। কিন্তু আবারও সেই প্রশ্নটা মাথায় ভনভনিয়ে উঠল। কী রঙের পোশাক পরে আসবেন? তিনি, মনীষা কৈরালা, এলেন সফেদ শুভ্রতায় সেজে। ‘হিমকন্যা’র যে বিশেষণ একদা তাঁর পরিচয় হয়ে উঠেছিল, সেই অভিধার আশ্রয়েই রবিবারের জেএলএফে সাতরঙা রামধনুর চেয়েও বেশি করে ঝিকিয়ে উঠলেন যেন।

                                    মোহনবাগানকে নিয়ে নতুন গান, বাংলা ব্যান্ডের সঙ্গে গলা মেলালেন নচিকেতা

Advertisement

২০১২ সালে ক্যানসার ধরা পড়েছিল মনীষার। তিন বছরের মধ্যেই অবশ্য খেলা ঘুরে যায়। ক্যানসারকে হারিয়ে জীবনের মাধুর্যে নতুন করে আত্মপ্রতিষ্ঠা ঘটে তাঁর। এটা সর্বার্থেই সেকেন্ড ইনিংস। তবে যতক্ষণে শনাক্ত করা গিয়েছিল যে নানা রোগবালাইয়ের ‘প্রকৃত কালপ্রিট’ ক্যানসার, ততদিনে কর্কট রোগের শমন প্রাথমিক পর্যায় পেরিয়ে অ্যাডভান্সড স্টেজের চৌকাঠ টপকে গিয়েছে। অবস্থা এতটাই জটিল দিকে বাঁক নিয়েছিল, মরেও যেতে পারতেন।

manisha2

এদিন জেএলএফের অন্যতম প্রাণপুরুষ এবং ‘টিমওয়ার্ক’-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর সঞ্জয় কে. রায় আসলে একটি প্রাণবন্ত আড্ডার আয়োজন করেছিলেন। যেখানে কথায়, গল্পে, মনোমোহিনী হাসিতে – পাহাড়ি ঝরনার মতো দ্বিধামুক্ত অনর্গলতায় মনীষা তুলে ধরতে পারবেন তাঁর ক্যানসারজয়ী হওয়ার উজ্জ্বল জীবনকুচি। সবে বেরনো ‘হিল্‌ড: হাউ ক্যানসার গেভ মি আ নিউ লাইফ’ বইতে মনীষা ছোট ছোট ডিটেল-সহ বর্ণনাও করেছেন তাঁর লড়াই।

                                              সাধারণতন্ত্র দিবসে বিতর্কিত পোস্ট, নেটিজেনদের রোষের মুখে মীর

‘কাঠমান্ডু থেকে মুম্বই। ফ্লাইটে ঘণ্টা দুই লাগে। কিন্তু সেদিন যেন রাস্তা শেষই হচ্ছিল না। একেকটা মুহূর্ত যেন বা একেকটা যুগের মতো দীর্ঘ। এত অসহ্য, এত নিঃসঙ্গ, এত করুণ ফ্লাইট আমার জীবনে আর একটাও আসেনি।’- এটা ক্যানসার ধরা পড়ার ‘খবর’ জেনে নেপাল থেকে মুম্বই আসার ঘটনা। একশ্বাসে এতটা বলে মনীষা কৈরালা ক্ষণিকের বিরতি নিলেন। হয়তো আজও চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলেন অতীতের মৃত নদীখাতে ফেলে আসা সেই দুঃসহ আকাশপথের ছায়া। ঝকঝকে রবি-রোদ্দুর মেখে যেসব মানুষ এসেছিলেন জেএলএফের ফ্রন্ট লনে, তাঁরাও কি এই বিষণ্ণ উড়ানের গতিচক্রে হোঁচট খেলেন না? উদাস হলেন না একপলের জন্য?

ক্যানসার হলে প্রথমেই একটা তুমুল অবিশ্বাস তৈরি হয়ে যায়। নিজের উপর। চারপাশের উপর। ক্যানসারকে জেতার পথে এটাই সবথেকে কঠিন মানসিক চ্যালেঞ্জ। মনীষা সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন: ‘মুম্বই আসার ফ্লাইটে বারবার নিজেকে প্রবোধ দিচ্ছিলাম যে হতেও তো পারে ভুল ডায়াগনোসিস হয়েছে। হতেও তো পারে যে, আমার ক্যানসার হয়নি।’ আর এই দেশের বিশিষ্ট ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার যখন দ্বিতীয়বারের জন্য কিছু শারীরিক পরীক্ষা করার নিদান দেন, মনীষা তখন রীতিমতো আশাবাদী হয়ে ওঠেন। কিছু ভুল নিশ্চয় হয়েছে রোগনির্ণয়ের পদ্ধতিতে। কিন্তু দু’বারই একই রেজাল্ট বেরোয়। ক্যানসার।

                                                       আপনি ভাল আছেন? আমরা ভাল নেই…

সঞ্জয় কে. রায়ের করা একটি প্রশ্নের খেই ধরে মনীষা মেনে নেন যে, একসময় তাঁর লাইফস্টাইল খানিকটা এলেমেলো হয়ে গিয়েছিল। ক্যানসারের প্রকোপে যখন হঠাৎ করে ওয়েট গেন করেন, পেটে ও কোমরে মেদ জমে, ভেবেছিলেন এসব হয়তো বা বয়সের লক্ষণ, আর অনিয়মিত লাইফস্টাইলের পরিণাম। তাছাড়া, পানাসক্তিও ছিল ভীষণ। ‘তুমি কি অ্যাডিক্টেড হয়ে পড়েছিল?’ – এর জবাবে সঞ্জয় কে. রায়কে বলেন মনীষা, ‘অ্যাডিকশন কি না জানি না। তবে একটা সময় আমি সব উপলক্ষেই মদ খেতাম। সেলিব্রেশনে মদ, আবার ডিপ্রেশনেও মদ। কিন্তু ক্যানসার ধরা পড়ার পর যখন আরেকবার জীবন শুরু করার আন্তরিক জেদ ভিতর থেকে উঠে এল, তখন আর দোটানায় ভুগিনি। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আর মদ নয়। নিজের ভালর জন্যই নয়।’ সব মন্দেরই কিছু না কিছু প্রাপ্তির দিক আছে। সেটা মনীষাও মানেন। ক্যানসার তাঁকে আত্মোপলব্ধিতে নিবিড় করছে। চারপাশকে তলিয়ে দেখতে আগ্রহী করেছে। আগে কখনও ডায়েরি
লেখার অভ্যাস ছিল না। চিকিৎসার প্রয়োজনে আমেরিকা যাওয়ার পর আস্তে আস্তে ডায়েরি লেখার অভ্যাস ধরেন। রোজ লিখে রাখতেন নানা তুচ্ছ, অকিঞ্চিৎ ঘটনার উল্লেখ। বেঁচে থাকার মধ্যেও যে এত মাধুর্য আছে, তা হয়তো উপলব্ধিই করতে পারতেন না জীবন ও মৃত্যুর এমন টানাপোড়েনে না পড়লে।

manisha3

ভারতে ক্যানসার খুব দুর্লভ রোগ নয়। এবং এই রোগের চিকিৎসাও অত্যন্ত ব্যয়বহুল। চাইলেও সকলের পক্ষে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। খরচ এবং পরিকাঠামো এই দেশে ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইকে কঠিন করে তুলেছে। নিরাশামাখা এই সর্বাত্মক ছবির পাশে সেইজন্যই মনীষা কৈরালা বা যুবরাজ সিংহের মতো সেলিব্রিটির চোয়ালচাপা যুদ্ধ ‘আইকনিক’ তকমা পেয়ে যায়। ‘সঞ্জু’-র মাধ্যমে সম্প্রতি মনীষার প্রত্যাবর্তন ঘটেছে সিনেমায়। ক্যামেরার সামনে আজও ততটাই স্বচ্ছন্দ বোধ করেন, যতটা আগে করতেন। অভিনয় ছাড়ার প্রশ্নই নেই। মনীষা জানালেন, বেশ কয়েকটি ছবির অফার পেয়েছেন, চিত্রনাট্যও। সঞ্জয় দত্তর সঙ্গে ‘প্রস্থানম’ তো এ বছরই রিলিজ করবে। তবে অভিনয়ের ছাড়া আরও একটি মাইলস্টোন স্পর্শ করতে চান। সেটা হল – ট্রেক করে এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে যাওয়া। জানেন না, শেষমেশ স্বপ্ন সফল হবে কি না। বাক্যটি সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই কানে তালা লেগে গেল। তীব্র হাততালি। মনীষা কথা সংবরণ করে হাসছেন। এইবার শুভেচ্ছার জোয়ারে ভেসে যাওয়ার পালা।

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement