চারুবাক: সাতচল্লিশের স্বাধীনতা ও দেশভাগ, আটচল্লিশের দাঙ্গা দেখা ক’জন তরুণ বা যুবক এখন আর বেঁচে আছেন! এই একবিংশ শতকে এসে পড়েছে তৃতীয় প্রজন্ম। এঁদের কাছে শেকড় ছেঁড়ার যন্ত্রণার তেমন কোনও আবেগ বা মূল্য নেই। দাদু-দিদিমা, ঠাকুরদা-ঠাম্মার কাছে শোনা সেই সময়ের ঘটনা আজ কতটাইবা মূল্য বহন করে এই তৃতীয় প্রজন্মের কাছে! তবে শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায় ও লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রথম ছবি ‘মাটি’র মুখ্য মহিলা চরিত্রে মেঘলা (পাওলি) যে ইতিহাসের ছাত্রী। তার কাছে দেশভাগ একটা গবেষণার বিষয় শুধু নয়, একটা তাড়িত ‘অতীত’ও বটে। তাড়নাটা শুরু হয় ওপার বাংলার দাঙ্গায় নিহত হওয়া সঙ্গীহীন ‘ঠাম্মা’ কুমুদিনীর (অপরাজিতা) লেখা একটি খাতা হাতে আসার পর। ঠাকুরমার স্মৃতিচারণার পরই মেঘলা উৎসাহিত হয় ফেলে আসা চৌধুরি বাড়িটা দেখে আসতে।
[কেমন ছিল ছোটবেলার রথের স্মৃতি, জানালেন টলিউডের নায়িকারা]
বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখার সময়ই এয়ারপোর্টে আলাপ হয় জামিল ভাই নামে এক অদ্ভুত মানুষের সঙ্গে। দাঙ্গা শুরু আগে আভাস পেয়ে কলকাতায় চলে আসেন ছেলে-মেয়ে নিয়ে কলকাতায় চলে আসেন মেঘলার দাদু। স্ত্রী কুমুদিনী নিজের ভিটেমাটি, পুকুর, গাছ, আকাশ-বাতাস ছেড়ে আসতে পারেননি। মেঘলা এজন্য দায়ী করে দেশভাগকে। এবং মনে মনে গভীর ক্ষোভ জমিয়ে রাখে মুসলমান সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে। কিন্তু ইতিহাস তো অত সরল নয়! কারণ একই সময়ে কলকাতার রাজাবাজার অঞ্চল থেকে জামিলের আম্মুকেও (সাবিত্রী) পালিয়ে যেতে হয়েছিল ওপারে। পারস্পরিক এই ভুল বোঝাবুঝির ব্যাপারগুলো খুবই সরলীকৃত ভাবে দেখানো। চিত্রনাট্যে খুবই ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা হয়েছে। এমনকী বাস্তব থেকে সরে গিয়ে আজকের বাংলাদেশে হিন্দু মেয়ের সঙ্গে মুসলমান ছেলের বিয়েও দেখানো হয়েছে। পরিবার মেনে নিলেও গ্রামের মানুষ মানতে চায়নি। এই সমস্যাটির সমাধান কীভাবে হবে সেটা অনুচ্চারিতই থেকেছে।
[বাঙালির প্রিয় রহিম সাহেব হবেন অজয় দেবগণ, প্রযোজনায় বনি কাপুর]
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় জামিল ভাইয়ের মতো মানুষের অবদান অবশ্যই আছে। আবার বিপরীতটাও আছে। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশ্বাসের বাতাবরণটি যে বেশ পলকা সেটাও বলেছেন তিনি। আসলে ‘মাটি’ শেকড় ছেঁড়া অতীত আর আবেগে ভরপুর গল্প। সিনেমা ব্যাপারটাই অনুপস্থিত। একমাত্র দাঙ্গার সময় ঘরের মধ্যে একটি ঘোড়ার উপস্থিতি সত্যিই ইঙ্গিত-বহ। দেবজ্যোতি মিশ্র নিজের কোর্টে বল পেয়ে গানের সুরে ও আবহে চার-ছয় হাঁকিয়েছেন। অভিনয়ে আদিল হুসেন তাঁর চাপা ব্যক্তিত্ব নিয়ে জামিল ভাইয়ের চরিত্রে প্রাণ দিয়েছেন। পাওলি বেশ ভাল অভিমানে, রাগে এবং সমবেদনায়। সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, চন্দন সেন, মনামি ঘোষ, অপরাজিতা আঢ্যও বাঙাল ভাষা বলায় বেশ চোস্ত। অতীত খুঁড়ে বেদনা জাগাতে চাইলে ‘মাটি’ দেখতেই হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.