‘মানবতার দোহাই বন্ধুরা সংগঠিত হন, ভয় পাবেন না।’- নব্বইয়ের কলকাতা আমূল কেঁপে উঠেছিল এ আহ্বানে। বড় ভাঙচুরের সময় ছিল সেটা। বিশ্বায়নের হাওয়ায় ঢুকে পড়ছে অনেক কিছু। ছেড়ে যাচ্ছে আরও অনেক কিছু। গিটার হাতে তবু সেদিন তিনি বলেছিলেন, হাল ছেড়ো না। সেই নাগরিক কবিয়াল পা দিচ্ছেন সত্তরে। জীবনের সাত সমুদ্র পারের কত অভিজ্ঞতা ভিড় করছে। সে সবেরই উদযাপন তাঁর জন্মদিনে, নজরুল মঞ্চে। তার আগে জীবনের সাত দশকের পারে দাঁড়িয়ে নস্ট্যালজিয়ায় ডুব দিলেন কবীর সুমন। সঙ্গী সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল। আসুন পর্বে পর্বে আবিষ্কার করি প্রিয় সুমনকে।
টুক করে আলো দেখা,
টুকি দেওয়া রোদ্দুরে আমি
শৈশবে গিয়ে আজও
কাঠজুড়ি নদীটিতে নামি…
আমারই একটা গানে উঠে এসেছিল কাঠজুড়ি নদীটির কথা। আমার ছোটবেলাটা তো ওড়িশাতেই কেটেছে। শৈশবের তাই অনেকখানি জুড়ে রয়েছে এই নদী। নদীর স্মৃতি আছে, সংখ্যায় হয়তো তারা খুব বেশি নয়, কিন্তু গভীর। একটা নদীর পাশে থাকা, এমন একটা অভিজ্ঞতা, যা ভাষায় বর্ণনা করা খুব মুশকিল। কারণ নদী তো খুব নিষ্পৃহ। উদাসীনভাবে সে সবকিছু করে যায়। খুব ছোট্টবেলা থেকই তা দেখছি। গরমকালে চড়া পড়ে যেত। পাহাড়ি নদী। তো আমার এক বন্ধু ছিলেন, পিতৃতুল্য, তাঁর নাম হর। তিনি আমাকে কাঁধে করে ওই চরে নিয়ে যেতেন। আমি ওখানে বসে গর্ত খুঁড়তাম। তিনিই দেখিয়ে দিতেন। আর গর্ত খুঁড়লেই জল উঠে আসত। তার সঙ্গে ছোট ছোট মাছ। ছোট্ট আমি হাত বাড়িয়ে বাড়িয়ে সেই মাছ ধরতাম।
[ সংগীতের স্বার্থে রাজ্য আমাকে ব্যবহার করুক: কবীর সুমন ]
সেই ছোটবেলায় নদীর দিকে তাকিয়ে আমার খুব বড়, বিরাট মনে হত। হয়তো অত বড় ছিল না আসলে। কিন্তু আমি ছোট ছিলাম তো। বর্ষাকালে নদীতে একেবারে হইহই করে জল ছুটত। বাপরে বাপ! সে কি জলের তোড়! খুব অবাক লাগত। তো ওই নদীর চরেই গরমকাল জুড়ে আমি খেলেছি। আর দেখতাম পাড় থেকে জলে বাচ্চারা লাফিয়ে লাফিয়ে নেমে যাচ্ছে। আমি হাঁ করে তাকিয়ে থাকতাম। নদীটার সঙ্গে আমার খুব অদ্ভুত সম্পর্ক। আলাদাভাবে যে আমার মধ্যে খুব নদী নদী ব্যাপার আছে তা নয়। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত যে সুখদুঃখের জগত তার সঙ্গে ওই নদীটা শেষপর্যন্ত থেকে গেল। তাই বোধহয় পরে শৈশবের কথা বলতে গিয়ে গানে কাঠজুড়ির কথাও এসে গিয়েছে।
[ শুধু কালিকার জন্য…আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখলেন বন্ধুরা ]
আসলে আমার ছোটবেলায় খুব স্পেস ছিল। অনেকটা খোলামেলা জায়গা। দেখতাম, চিল উড়ে যাচ্ছে। পরে যখন রেডিওর সিগনেচার টিউনটা শুনতাম, আমার তখন মনে হত, একটা চিল বোধহয় একা একা উড়ে যাচ্ছে। আমার ছেলেবেলা, বেড়ে ওঠায় এই স্পেসটা ছিল। ওদিকে বাবা গান গাইছেন। গম্ভীর, সুন্দর গলায় গেয়ে উঠছেন, মরি হায় রে।।।বসন্তের দিন চলে যায়। তখন আমি খুব ছোট। কথাও বলতে শিখিনি মনে হয়। আমাকে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দেখছি নীল আকাশ, বিরাট মাঠ, সূর্যালোক, আর ওই একা একা চিলের উড়ে যাওয়া দেখতাম। অদ্ভুত, বড় অদ্ভুত ছিল সেসব।
[ সুমনের জন্মদিনে উদযাপন ‘সত্তরে সুমন’। ১৬ মার্চ, নজরুল মঞ্চে। টিকিটের জন্য যোগাযোগ করুন এখানে- https://goo.gl/vPpqje । ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.