তিনি চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। কাজও চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর নতুন ছবি ‘মুখার্জীদার বউ’ মুক্তির আগে কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আড্ডায় কোয়েল মুখোপাধ্যায়৷
কেমন আছেন?
(হেসে) ভাল আছি। খুশি আছি।
প্রেগন্যান্সির কোন ট্রাইমেস্টার চলছে?
চার মাস পূর্ণ হল।
এখন কি ভবানীপুরের বাড়িতে?
না। দু’বাড়ি মিলিয়ে আছি। যে কোনও এক জায়গায়, এক ভাবে আমি থাকতে পারব না। তাই একদিন অন্তর যাতায়াত করছি। একদিন ভবানীপুরের বাড়িতে আসছি। পরের দিন শ্বশুরবাড়িতে যাচ্ছি।
এত যাতায়াত করছেন! শরীরের উপর তো ধকল পড়বে!
একটা সময়ের পর তো পারব না জানি! (হাসি) তাই এখন যতটা পারছি, করছি। মায়ের কাছে যাচ্ছি, বন্ধুবান্ধব, প্রিয়জনদের সঙ্গে দেখা করছি। আমি আসলে একদম ঘরকুনো নই। ছোটাছুটি করতে, ঘুরে বেড়াতে ভালবাসি। এতে আমার মন ভাল থাকে। আর আমি ভাল থাকলে, যে আসছে, সে-ও ভাল থাকবে।
সাধ কবে?
সাধ আমাদের নেই। আমার শ্বশুরবাড়িতেও বোধহয় নেই। কিন্তু আমার বন্ধুবান্ধবরা আমার প্রেগন্যান্সির খবরে খুব এক্সাইটেড। ওরাই আমায় বলেছে, বাড়িতে রেওয়াজ নেই তো কী হয়েছে! আমরা সাধ দেব তোকে। ওরা জুন মাস নাগাদ আমার ‘গোদ-ভরাই’ না কী যেন হয়? সেটা করবে বলেছে। আসলে ওরা আমাকে প্যাম্পার করতে চাইছে। আমার কোনও অসুবিধা নেই! (হাসি)
এই মুহূর্তে তো খুব সাবধানে চলতে হচ্ছে?
সব সময় মন ভাল রাখতে বলা হয়েছে। এই সময় তো মন খারাপ করা মানা (হাসি)। প্রথম প্রথম খুব সাবধানে চলছিলাম। কিন্তু এখন সেটা ছেড়ে দিয়েছি। ওটা করতে গিয়ে মনের উপর চাপ পড়ছিল। তাই যখন যা ইচ্ছা করছে, করছি। হাসতে ইচ্ছা করলে হাসছি। কাঁদতে ইচ্ছা করলে কাঁদছি। বাকি যেটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হল খাওয়াদাওয়া। সেটা করছি নিয়ম মতো। জল খাচ্ছি, খাবার খাচ্ছি সময় মতো। নিজের খেয়াল রাখছি। এই প্রথম বোধহয় আমি এত বেশি নিজের খেয়াল রাখছি।
নিজে নিজে পারছেন খেয়াল রাখতে?
মা-বাবা খুব সাহায্য করছে। সত্যি! যেদিন নুডলস খেতে ইচ্ছা করছে, খাওয়াচ্ছে। যে মিষ্টিটা খেতে ভালবাসি, এনে খাওয়াচ্ছে। শুধু বলার অপেক্ষা! শাসনের থেকে বেশি যত্ন-আত্তি চলছে। মা তো দিনে প্রায় দশবার ফোন করছে। বলছে, ‘পা ঠিক করে ফেলবি, দুধ খেলি কি না?’
আর বাকিরা?
বোন কলকাতার বাইরে। কাকা খেয়াল রাখছেন। আর সুরজিৎ (স্বামী সুরজিৎ হরি) তো কাজে প্রচণ্ড ব্যস্ত থাকে। কিন্তু তাও যতটুকু সময় পাচ্ছে, পাশে থাকছে।
আর ছেলে দ্রোণ?
দ্রোণ কিছু দিন আগে জেনেছে। আমাকে বলল, “আমি তো জানতাম!” (হাসি) আমি আর সুরজিৎ অবাক হয়ে বললাম, জানতিস মানে? তখন বলল, “বাঃ! জানব না? আমার সামনেই তো সব কাগজপত্র পড়ে ছিল। পড়ে জেনেছি।” হ্যাঁ, ও বড় হচ্ছে। সন্তান যে বড় হচ্ছে, সেটা বাবা-মা মাঝে মাঝে ভুলে যায়। এই সেদিন আমার একটা ফোন এল। দ্রোণ সঙ্গে সঙ্গে নিজের প্লেট রেখে, উঠে গিয়ে ফোনটা আমায় এগিয়ে দিল। ও বুঝতে পারছে যে নতুন কেউ আমাদের জীবনে আসছে।
বাড়িতে থাকলে কীভাবে সময় কাটাচ্ছেন?
(হাসি) আমাকে বলা হয়েছিল খুব শান্তশিষ্ট, স্লো গান শুনতে। কিন্তু কিছু দিন পর দেখলাম আর ভাল লাগছে না। তাই আমার যা ভাল লাগে, সেটাই শুনছি। ‘লা লা ল্যান্ড’ যেমন শুনছি, তেমনই আবার ‘মাশুদা’ ব্যান্ডের গানও শুনছি। রবীন্দ্রসংগীতও শুনছি, অমিত ত্রিবেদীও শুনছি।
খাওয়াদাওয়া?
একটা অদ্ভুত ভাললাগা তৈরি হয়েছে লঙ্কার প্রতি! ঝাল খেতে ভাল লাগছে ইদানীং। তবে কাঁচালঙ্কার ঝাল। লঙ্কাগুঁড়ো নয়।
এমনিতে ঝাল খেতে ভালবাসেন?
কোনওদিনই না। কিন্তু এখন বিকেলবেলা হলেই ঝাল ঝাল কিছু খেতে ইচ্ছে করছে। বাকি আমি পুরোটাই বাড়িতে তৈরি খাবারদাবার খাচ্ছি।
আর বই? বই পড়ছেন না?
বন্ধুরা প্রেগন্যান্সি নিয়ে অনেক বই দিয়েছে। কিন্তু এখন বই পড়ার অভ্যাস একদম চলে গিয়েছে। তাই যে বিষয়ে পড়তে ইচ্ছা করছে, মোবাইলে গুগল করে পড়ছি।
যে আসছে, তার জন্য কোনও নাম ভেবেছেন?
জানিই তো না, কে আসছে! আর জানতে চাই-ও না। এখন শুধু খুশি থাকতে চাই।
কনীনিকা, গত তিন বছর ধরে আপনি একটু বেশিই যেন খবরে থাকছেন!
এই ক’টা বছরে কেরিয়ারে কতটা কী করতে পেরেছি, জানি না। কিন্তু ব্যক্তিগত পরিসরে বেশ কিছু মানুষকে আমার পাশে পেয়েছি। এ বছরই এই ইন্ডাস্ট্রিতে আমার কুড়ি বছর হল। কেরিয়ারের সৌজন্যে বেশ কিছু সম্পর্ক আমি ‘আর্ন’ করেছি। আমার ব্যাংক ব্যালান্স হয়তো তেমন নেই। কিন্তু মানুষের সঙ্গে আমার সম্পর্কটাই আমাকে এখনও টিকিয়ে রেখেছে। সেটা দর্শকদের সঙ্গেই হোক বা সাংবাদিকদের সঙ্গে। এই কুড়ি বছরে তাঁরাই আমার খোঁজখবর রেখেছেন। এটাই আমার প্রাপ্তি।
কী মনে হয়, সময়টা ভাল চলছে?
নিঃসন্দেহে! ২০১৭ সালে আমার বিয়ে হয়। তার পর ২০১৮ সালে আমি বেশ ভাল কাজ করেছি। সেটা ‘হামি’ হোক বা ‘কণ্ঠ’, ‘অন্দরমহল’ হোক বা ‘হইচই আনলিমিটেড’। ‘মুখার্জিদার বউ’ ২০১৮ ডিসেম্বরে শুট করেছি। অন্তঃসত্ত্বা হয়েছি। তাই এই সময়টার কাছে আমি খুব কৃতজ্ঞ।
আপনার আসন্ন ছবি ‘মুখার্জিদার বউ’ ছবির বউমা অদিতির সঙ্গে মিল খুঁজে পান?
প্রত্যেকটা শট দিতে গিয়ে অদিতির সঙ্গে রিলেট করতে পেরেছি। অদিতির চরিত্রটা শুধু আমার দেখা চরিত্র নয়। এটা অনেকটা আমিও। অদিতিকে আমি অনুভব করেছি। একটু ভেবে দেখুন, ঝগড়া কি সব সময় শাশুড়ি আর বউমার মধ্যেই হয়? মা-মেয়ের মধ্যেও তো ঝগড়া হয়। কিন্তু তার পরক্ষণেই মা মেয়েকে ডেকে বলেন, ‘আয় খাবি আয়!’ মেয়েও গিয়ে খেয়ে নেয়। কেন? কারণ, তখন তার মনে কোনও ইগো কাজ করে না। কিন্তু একই ঘটনা তার শ্বশুরবাড়িতে ঘটলে সমস্যা হয়। কারণ, তখন মেয়েটির ইগো টনটনে থাকে। সে গোসা করে খেতে যাবে না। বা খেতে গেলেও মন অস্থির থাকবে। যতক্ষণ না প্রতিশোধ নিচ্ছে বা ক্ষমা করে দিচ্ছে, ভুলে যেতে পারছে, ততক্ষণ শান্তি হয় না। ঠিক বলছি তো?
হুমম। আচ্ছা, বাস্তব জীবনে কনীনিকার সঙ্গে তাঁর ‘শোভারানি’র সম্পর্ক কেমন?
উত্তর দিতেই হবে? (হাসি) আমার তো সবে দু’বছর হয়েছে। সুতরাং, যুদ্ধ এখনও চলছে। (হাসি) আশা করি, ছবির অদিতি আর তার শাশুড়ি শোভারানির মতো হাতে হাত রেখে, একসঙ্গে আইসক্রিম খাওয়ার মতো সম্পর্ক আমারও তৈরি হবে।
উইন্ডোজের সঙ্গে আবার কাজ করলেন। কেমন লাগল?
বিশ্বাস করুন, অনেক দিন পর ভাল লাগল। কারণ অনেক দিন পর ওরা আমায় আমার আত্মবিশ্বাস ফেরত দিল। আমাদের মতো শিল্পীদের তো এই আত্মবিশ্বাসটাই সম্বল! আমি ‘হামি’ করেছি। ‘কণ্ঠ’ করেছি উইন্ডোজের সঙ্গে। তার পর যেদিন শিবুদা আর নন্দিতাদি (শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং নন্দিতা রায়) আমাকে ‘মুখার্জিদার বউ’-এ ‘অদিতি’ অফার করেন, আমার মনে যে খুব আলোড়ন ঘটেছিল, তা নয়। কিন্তু একটা অদ্ভুত অনুভূতি হয়েছিল। ধীরে ধীরে এই বোধটা হয়েছিল যে আমাকে এরকম একটা কেন্দ্রীয় চরিত্রে আবার কেউ ভেবেছে! অভিনেত্রী কনীনিকাকে কেউ মনে রেখেছে!
অনেক দিন পর কনীনিকা ফের প্রধান চরিত্রে।
হ্যাঁ আমি শিখরে উঠেছি। কিন্তু পরে নিজেই নিচে নেমে এসেছি। এক সময় অনেক বড় বড় ছবিকে ‘না’ বলেছি। কারণ আমি কোনওদিন হিরোইন হতে চাইনি। অভিনেত্রী হতে চেয়েছি। আর অভিনয় কখনও একটা বিশেষ বয়স বা শারীরিক স্টেটাসের উপর নির্ভর করে না। যা কাজ করেছি, মন দিয়ে করেছি। জানি না এর পর আমি আবার ক্যারেক্টার রোল করব না মেন রোল করব। কিন্তু হ্যাঁ, অনেক দিন পর ঘুম থেকে উঠে এটা ভেবে ভাল লাগছে যে আমার একটা ছবি মুক্তি পেতে চলেছে, যেখানে আমি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছি।
আপনার কি মনে হয় ইন্ডাস্ট্রিতে আরও সম্মান, আরও স্বীকৃতি আপনার প্রাপ্য ছিল?
না। আর আমার সময় তো এখনও শেষ হয়নি! এই প্রশ্নের উত্তরটা বুড়ো বয়সে গিয়ে দেব।
কখনও মনে হয়নি একটা ‘বিসর্জন’ বা ‘প্রাক্তন’ কনীনিকাও করতে পারতেন?
হয়তো হবে ভবিষ্যতে! দেখুন, আমার মনে হয়, যার ভাগ্যে যে চরিত্রটা লেখা থাকে, সে-ই সেটা পায়। তার জন্য আমি তাকে হিংসা করব, এমন মানুষ আমি নই।
কিন্তু ছোটপর্দা তো আপনাকে কখনও বিমুখ করেনি। তাহলে ‘অন্দরমহল’-এর ক্ষেত্রে শেষে গিয়ে কী হল? কেন বিতর্কে জড়ালেন?
বিতর্কের গল্পটা আজ থাক! (অনীহার সুরে) বিতর্ক তো জীবনের সব ক্ষেত্রেই হয়! স্পন্দন না থাকলে জীবনের মর্ম বুঝবেন কী করে? ‘অন্দরমহল’ নিয়ে কী হল… কে কী বলল… প্রোডিউসার আমায় ক’টাকা দিল… আমি কী পেলাম বা পেলাম না-এ সব নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে আর লাভ নেই! আমি কিছু বললে পালটা প্রতিক্রিয়াও আসতে থাকবে। তাই এ সব থাক! দিনের শেষে শুধুমাত্র এটুকুই সত্যি যে ‘অন্দরমহল’ একটা সাকসেসফুল প্রোডাক্ট।
আবার যদি সেই প্রোডাকশন হাউস থেকে ডাক পান, কাজ করবেন?
সময় বলবে!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.