অনির্বাণ চৌধুরী: আবার সে এসেছে ফিরিয়া। সে মানে এখানে বিদ্যা বালানের চেহারা আর দুটো শব্দ- ‘কাহানি’, ‘বিদ্যা’! তাই নিয়ে বিস্তর রহস্যের প্যাকেজ-সহ যে ছবিটি মুক্তি পেল, তা কিন্তু কোনও দিক থেকেই ২০১২ সালের ‘কাহানি’র দ্বিতীয় পর্ব নয়। ওই নামে আর নায়িকায় যা মিল আর কী!
অবশ্য, সুজয় ঘোষ সরাসরি না বললেও আঁচ পাওয়া গিয়েছিল- এই ছবিতে বিদ্যা বাগচি ফিরবে না। এখানে তো মুখ্য চরিত্রের নাম দুর্গা রানি সিং। হ্যাঁ, বিদ্যা নামে তাঁকে চন্দননগরের মানুষজন চেনেন বটে, কিন্তু পদবী বাগচি নয়- সিনহা! তাহলে ব্যাপারটা কী দাঁড়াল?
ব্যাপারটা আদতে বক্স অফিসে ভিড় ধরে রাখার কৌশল! ‘কাহানি’ নামের অনুষঙ্গ রইল, নায়িকার নামে ফিরে এল প্রথম ছবির মুখ্য চরিত্রের দ্যোতনা, এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষাপটও রইল! সব মিলিয়ে পুরনো স্মৃতি উসকে দেওয়ার পর দর্শকের পাওনা হল কী?
খুব ভাল অভিনয়ের বেশি আর কিছু নয়। কেন না, এই ছবিতে পরিচালক ছায়াছবিতে রহস্যকাহিনি বলার খুব পুরনো পথে হেঁটেছেন। যে নিয়মমাফিক ছবি শুরু হওয়ার একটু পরেই রহস্য বলে আর কিছু থাকবে না। পুরো ঘটনাই জেনে যাবেন দর্শক। তার পর চলতে থাকবে উত্তেজনা- সেই জট থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে মুখ্য চরিত্রটা?
এই উত্তেজনাকে যদি রহস্য বলেন, তবে তাই! কেন না তা একটু-আধটু অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ বাড়াবে রক্তে। সেই অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণের সঙ্গে দেখা মিলবে এক মা আর তার মেয়ের। সেই মেয়ে অপহৃত হয়ে যাওয়ার পর দুর্ঘটনার মুখে পড়বে মা। থানা-পুলিশ হবে, একটু একটু করে জেনে যাবেন দর্শক- পুলিশ এই রহস্য সমাধানে নিরপেক্ষ থাকতে পারবে না। তার পর বাকিটুকু প্রেক্ষাগৃহেই আবিষ্কার করে নেওয়ার পালা! খামোখা গল্পটা বলে দিয়ে কোনও লাভ নেই!
কিন্তু কয়েকটা কথা না বললেই নয়। কেন আপনি এই ছবি দেখবেন, সেই প্রসঙ্গে। প্রথমত, বিদ্যা বালানের জন্য। অনেক দিন হয়ে গেল বিদ্যার এমন কোনও ছবি মুক্তি পায়নি যা তাঁর অভিনয় ক্ষমতার পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করেছে। সেই দিক থেকে দেখলে শুধুই বিদ্যা বালানের অভিনয় দেখার জন্য যাওয়া যেতে পারে প্রেক্ষাগৃহে। কেন না, এই ছবিতে সুজয় ঘোষ বিদ্যাকে অজস্র জায়গা দিয়েছেন নিজেকে প্রমাণ করার! ছবির বিদ্যা বা দুর্গা- যেই হোক সে, আদতে ছোট বয়স থেকেই নিগ্রহের শিকার। তাই পুরুষ কাছে এলেই সে ভয়ে গুটিয়ে যায়। এলোমেলো অগোছালো হয়ে থাকে, ঠিক তার জীবনের মতোই! তার এই পারফরম্যান্স দেখার জন্যই শুধু যাওয়া যেতে পারে প্রেক্ষাগৃহে।
আর যাওয়া যেতে পারে অর্জুন রামপালের জন্য। বিদ্যা বালানের নয়, ‘কাহানি ২’ একান্ত ভাবেই অর্জুন রামপালের ছবি। একের পর এক ফ্লপ ছবি বা হিট ছবির পার্শ্বচরিত্রে দেখতে দেখতে আমরা প্রায় ভুলতেই বসেছিলাম, অর্জুন রামপাল কতটা ভাল অভিনয় করতে পারেন! তাঁর পৌরুষ আর অভিনয় প্রতিভা- দুইয়েরই চমৎকার এক ককটেল তৈরি করেছে ‘কাহানি ২’। দেখলে ভাল লাগা গ্যারান্টিড! অর্জুনই এই ছবির এমন এক চরিত্র যিনি পর্দায় এলে দর্শক একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন! তিনি আছেন বলেই শেষ পর্যন্ত পার পেয়ে যায় দুর্গাও। রেগে যাবেন না, আমি গল্পটা বলে দিচ্ছি না। স্রেফ এমন এক সম্পর্কের সমীকরণের খেই ধরিয়ে দিচ্ছি যা ‘কাহানি ২’ ছবির মূল জায়গা!
তা, কাহানি সিরিজের রহস্য তো ব্যক্তিগত সম্পর্ক ঘিরেই তৈরি হয়। প্রথম ছবিতে তা যেমন, তেমনই এখানেও। প্রথম ছবিতে নায়িকা সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায় প্রতিশোধ তৎপর, এখানে নায়ক! বাকিটুকু সরাসরি দেখে নেওয়ার জন্য তোলা থাক! নীলচে, অন্ধকার সিনেম্যাটোগ্রাফিতে, রাতের পথের হলুদ আলোয়, ঘরের ভিতরের লো পাওয়ারের টিউবে, থানার বাল্বের টিমটিমে আলোয় সুন্দর করে আলো-আঁধারিতে ফ্রেম ধরেছেন সিনেম্যাটোগ্রাফার তপন বসু। যা ছবি দেখার মজা বাড়াবে।
ব্যস, ওই পর্যন্তই! হতাশ না করলেও ‘কাহিনি ২’ প্রথমটার মতো মনে দাগ কেটে যাবে না। সেই মুন্সিয়ানা ছবিতে নেই! খরাজ মুখোপাধ্যায়, কৌশিক সেন, টোটা রায়চৌধুরির মতো ডাকসাইটে অভিনেতাদের দিয়েও প্রথম ছবির আমেজ এটায় ধরে রাখতে পারেননি পরিচালক। এত বাংলা এবং বাঙালি থাকলেও বাঙালি দর্শক ‘কাহানি ২’ দেখে পুরোপুরি লাফিয়ে উঠবেন না!
তবে খারাপও লাগবে না! সেটাই বা কম কী!
ছবি: কাহানি ২
পরিচালনা: সুজয় ঘোষ
সিনেম্যাটোগ্রাফি: তপন বসু
অভিনয়: বিদ্যা বালান, অর্জুন রামপাল, খরাজ মুখোপাধ্যায়, কৌশিক সেন, টোটা রায়চৌধুরি প্রমুখ
২.৫/৫
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.