Advertisement
Advertisement

আমির খাঁ সাহেবের অনুষ্ঠান হলে পোষা কুকুরের মতো ছুটতাম

হয়ে ওঠা গান..হয়ে ওঠা সুমন...

Kabir Suman unveiled: Peeks from the memories of a maestro : Part 4
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:March 11, 2018 1:27 pm
  • Updated:March 13, 2024 3:13 pm  

‘মানবতার দোহাই বন্ধুরা সংগঠিত হন, ভয় পাবেন না।’- নব্বইয়ের কলকাতা আমূল কেঁপে উঠেছিল এ আহ্বানে। বড় ভাঙচুরের সময় ছিল সেটা। বিশ্বায়নের হাওয়ায় ঢুকে পড়ছে অনেক কিছু। ছেড়ে যাচ্ছে আরও অনেক কিছু। গিটার হাতে তবু সেদিন তিনি বলেছিলেন, হাল ছেড়ো না। সেই নাগরিক কবিয়াল পা দিচ্ছেন সত্তরে। জীবনের সাত সমুদ্র পারের কত অভিজ্ঞতা ভিড় করছে। সে সবেরই উদযাপন তাঁর জন্মদিনে, নজরুল মঞ্চে। তার আগে জীবনের সাত দশকের পারে দাঁড়িয়ে নস্ট্যালজিয়ায় ডুব দিলেন কবীর সুমন। সঙ্গী সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল। আসুন পর্বে পর্বে আবিষ্কার করি প্রিয় সুমনকে। আজ চতুর্থ পর্ব

প্রথম পর্ব:  রেডিওর সিগনেচার টিউন শুনলে মনে হত একা চিল উড়ে যাচ্ছে 

Advertisement

দ্বিতীয় পর্ব:  কচ্ছপের কাছে বন্ধুতা শিখেছি, সুকুমারের কাছে জ্যান্ত বাংলা ভাষা

তৃতীয় পর্ব:  সে এক অদ্ভুত মুহূর্ত! মাস্টারমশাই কাঁদছেন, আমারও চোখে জল

আমির খাঁ সাহেবের কাছে আমার আর সংগীতশিক্ষা নেওয়া হল না। বাবা মাস্টারমশাইকে বলে দিলেন, আপনিই সুমনকে তালিম দেবেন। আমি পরে বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আমির খাঁ সাহেবকে উনি এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন কিনা। বাবা বললেন, হ্যাঁ জানিয়েছি। তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম, উনি কী বললেন? বাবা বললেন, এই কথা শুনে স্বয়ং আমির খাঁ সাহেব সোল্লাসে বলেছিলেন, একেবারে সঠিক সিদ্ধান্ত। যে গুরুর সন্ধান ও আশীর্বাদ ছেলে পেয়ে গিয়েছে, তারপর আর কিছু দরকার নেই। বাবা তাও বলেছিলেন, আপনি তো বলেই খালাস। আমার ছেলের কী হবে? আমির খাঁ সাহেব বলেছিলেন, ওকে বলবেন আমার গান শুনতে। ওই গুরুর শাসনে আর শিক্ষায় থাকুক। আমার গান দূরত্ব থেকে শুনলেও হবে। যেখানে পারবে সেখানেই যেন শোনে। ফলে ওঁর অনুষ্ঠান হলে আমি পোষা কুকুরের মতো ছুটতাম। রেডিওয় শুনছি। অনুষ্ঠানে শুনছি। তখন সবই তো উনি। আমির খাঁ…ওরে বাবারে সে কী সব অনুষ্ঠান!

[  সে এক অদ্ভুত মুহূর্ত! মাস্টারমশাই কাঁদছেন, আমারও চোখে জল ]

বাবার কথা এই সুযোগে একটু বলে নিই। আমার বাবাকে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ডাক পাঠিয়েছিলেন। ডেকে চাকরিও দিয়েছিলেন। বাবা অবশ্য সে চাকরি নেননি। কিন্তু এই যে সংগীত, তা আমার রক্তে চারিয়ে দিয়েছিলেন আমার মা-বাবাই। বাবার কাছে বাংলা গান শিখতাম। আধুনিক গান, রবীন্দ্রনাথের গান। মা-ও চমৎকার গাইতেন। মায়ের কাছে হিমাংশু দত্তের গান, রবীন্দ্রনাথের গান শিখেছি। গোটা বাড়িটায় যেন সংগীত খেলা করছে। মা-বাবা দু’জনেই গান গাইছেন। দু’জনেই যে সবসময় আমাকে শেখাচ্ছেন তা নয়। কিন্তু ওই শুনতে শুনতেই শিখে যাচ্ছি। আর আমি গাইতে গিয়ে কিছু ভুল করলে সঙ্গে সঙ্গে ওঁদের কানে বাজছে। বলছেন, এই এটা ঠিক কর, ওটা ঠিক কর। আমার দাদার কণ্ঠও ছিল ঈর্ষণীয়। কিন্তু দাদা গান শিখলেন না। কিচ্ছুটি না। শিখলে যে কী গাইতেন ভেবে অবাক হই।

[ কচ্ছপের কাছে বন্ধুতা শিখেছি, সুকুমারের কাছে জ্যান্ত বাংলা ভাষা ]

যাই হোক আমাকে তৈরি করা হয়েছিল খেয়াল গাওয়ার জন্যই। যতটুকু যা শিখতে পেরেছি, সব মাস্টারমশাইয়ের কাছেই। বহুদিন ওঁর কাছে আমি তালিম নিয়েছি। স্কুল, কলেজ পের হলাম, এমনকী চাকরি পাওয়ার সময়ও আমি ওঁর কাছে শিখেছি। তখন আমি ইউবিআই-তে চাকরি করছি। তারপর আর পারলাম না। বললাম ওঁকে যে, এই হিন্দিতে খেয়াল গাইতে আমি আর পারছি না। উনি বললেন, আমি তো বাবা বাংলা খেয়াল জানি না। তো সেই ওঁর কাছে শেখা আমার বন্ধ হল।

(চলবে)

সুমনের জন্মদিনে উদযাপন ‘সত্তরে সুমন’। ১৬ মার্চ, নজরুল মঞ্চে। টিকিটের জন্য যোগাযোগ করুন এখানে– https://goo.gl/vPpqje । ] 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement