‘মানবতার দোহাই বন্ধুরা সংগঠিত হন, ভয় পাবেন না।’- নব্বইয়ের কলকাতা আমূল কেঁপে উঠেছিল এ আহ্বানে। বড় ভাঙচুরের সময় ছিল সেটা। বিশ্বায়নের হাওয়ায় ঢুকে পড়ছে অনেক কিছু। ছেড়ে যাচ্ছে আরও অনেক কিছু। গিটার হাতে তবু সেদিন তিনি বলেছিলেন, হাল ছেড়ো না। সেই নাগরিক কবিয়াল পা দিচ্ছেন সত্তরে। জীবনের সাত সমুদ্র পারের কত অভিজ্ঞতা ভিড় করছে। সে সবেরই উদযাপন তাঁর জন্মদিনে, নজরুল মঞ্চে। তার আগে জীবনের সাত দশকের পারে দাঁড়িয়ে নস্ট্যালজিয়ায় ডুব দিলেন কবীর সুমন। সঙ্গী সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল। আসুন পর্বে পর্বে আবিষ্কার করি প্রিয় সুমনকে। আজ দ্বিতীয় পর্ব।
প্রথম পর্ব: রেডিওর সিগনেচার টিউন শুনলে মনে হত একা চিল উড়ে যাচ্ছে
ছেলেবেলাটা একদিক থেকে একাই কেটেছে। সেই একার জগতে যিনি আমাকে বন্ধুতা শিখিয়েছেন তিনি একজন কচ্ছপ। আমাদের বাড়িওয়ালার বাগানে তিনি থাকতেন। এখন বুঝতে পারি, সোম থেকে শুক্রবার, বাড়িওয়ালার বাগান থেকে আমাদের উঠোনে আসার দরজাটা খোলা থাকত। ওখান দিয়েই তিনি আমাদের এদিকে চলে আসতেন। এসে বসে থাকতেন। আর আমার মা-ও বেশ ভাল ছিলেন জানেন, আমাকে কোনওভাবে আটকে রাখতেন না। আমিও গুড়গুড় করে নেমে এসে সিঁড়িতে বসতাম। তারপর একে অন্যের দিকে তাকিয়ে বসে থাকতাম। এই কচ্ছপটিই আমাকে প্রথম বন্ধুতা কী জিনিস, তা শিখিয়েছেন। এবং অদ্ভুত একটা সহনশীলতারও শিক্ষা দিয়েছেন। একবার আমি তাঁর গায়ে আমি হাত দিয়েছিলাম সাহস করে। তিনি কিন্তু আমাকে কিছু বলেননি। আবার তখনই হাত সরিয়েও নিয়েছিলাম। তো খুব খোলামেলা পরিবেশ, মা-বাবা, আর অজস্র গান-আমার একেবারে ছোটবেলাটা এরকমই কেটেছে।
[ রেডিওর সিগনেচার টিউন শুনলে মনে হত একা চিল উড়ে যাচ্ছে ]
সুকুমার রায়ের কথাও আমার গানে এসেছে। সুকুমারকে আমি পেয়েছি আরও একটু পরে। যখন কলকাতায় এলাম, হাতে উঠে এল দুটো বই। ‘আবোল তাবোল’ আর ‘পাগলা দাশু’। চটপট বাংলা লিখতে পড়তে শিখেই এই দুটো বই পেলাম। এর মধ্য দিয়ে আমি বাংলা ভাষাকে চিনেছি। আমি কিন্তু প্রথমেই স্কুলে ভরতি হইনি। আমাদের সময়ে দুম করে স্কুলে ভরতি করাও হত না। পাঁচ সাড়ে পাঁচ বছর বয়সে কলকাতায় এলাম। স্কুলে গিয়েছি ছ’ বছরের পর। মাঝে যে এই একটা কি দেড়টা বছর, বাড়িতেই পড়েছি। বাংলা শিখেছি, সামান্য অঙ্ক এবং ইংরেজি। তখন এত চাপও ছিল না। ভারী সুন্দর কিন্তু ছিল ছেলেবেলাটা। সুকুমার রায়কে পড়ে আমি বাংলা ভাষার ধ্বনিটা প্রথম টের পাই। ‘চট করে মনে পড়ে মটকার কাছে, মালপোয়া আধখানা কাল থেকে আছে’, এই যে চলছে, এ আমি রবীন্দ্রনাথেও পাইনি, আর কোত্থাও পাইনি। এই যে একেবারে জ্যান্ত ভাষা, রক্তমাংসের জ্যান্ত ভাষা। পরে কিন্তু আমাকে বাংলা গান লেখায় উৎসাহ দিয়েছে সুকুমারের এই বাংলাই। আর এখন বুঝতে পারি, ‘রাজকাহিনী’র বাংলাও আমাকে খুব প্রভাবিত করেছে। ওই যে দৃশ্যপট, নানা রকমের ছবিগুলো ভাষার মধ্যে দিয়ে ফুটিয়ে তোলা, সেটার প্রভাব পরে টের পেয়েছি, গান লেখার সময়। আর সুকুমার ছিল আমার নেশা। সারাক্ষণ যেন আমি সুকুমারের দশাতেই থাকতাম।
(চলবে)
[ সংগীতের স্বার্থে রাজ্য আমাকে ব্যবহার করুক: কবীর সুমন ]
[ সুমনের জন্মদিনে উদযাপন ‘সত্তরে সুমন’। ১৬ মার্চ, নজরুল মঞ্চে। টিকিটের জন্য যোগাযোগ করুন এখানে– https://goo.gl/vPpqje । ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.