আগামী ১০ মে মুক্তি পাচ্ছে শিবপ্রসাদ-নন্দিতার ‘কণ্ঠ’। দুই বাচিক শিল্পীর ভালবাসার গল্পের সঙ্গে ল্যারিঙ্গ ক্যানসারে আক্রান্ত এক ব্যক্তির জীবনযুদ্ধর কাহিনি দেখা যাবে ছবিতে। আর সেই ল্যারিঙ্গ ক্যানসারাক্রান্ত বাচিক শিল্পীর স্পিচ থেরাপিস্টের ভূমিকায় রয়েছেন জয়া আহসান। এই প্রথম শিবপ্রসাদ-নন্দিতার সঙ্গে কাজ। মুক্তির প্রাক্কালে ‘কণ্ঠ’র অভিজ্ঞতা, টলিউডে কাজ… সব নিয়ে সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল -এ অকপট জয়া আহসান। শুনলেন সন্দীপ্তা ভঞ্জ।
‘কণ্ঠ’তে স্পিচ থেরাপিস্টের ভূমিকায় আপনি.. এই প্রথম এরকম কোনও চরিত্রে অভিনয় করলেন। প্রস্তুতি নিলেন কীভাবে?
-ছবিটা করার আগে স্পিচ থেরাপিস্ট এবং ল্যারিঙ্গ ক্যানসারাক্রান্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। আগে এই ল্যারিঙ্গ ক্যানসার নিয়ে কোনও ধারণাই ছিল না, কিন্তু এখন এই বিষয়ে প্রায় অনেকটাই জানা হয়ে গিয়েছে। আর হ্যাঁ, চিত্রনাট্যের কথাও উল্লেখ করব। চরিত্রটা ছকে ফেলার জন্য ওটাই যথেষ্ট ছিল।
আচ্ছা ট্রেলারে শিবুদার সঙ্গে আপনাকে ‘ইউসুফিক্যাল’ টার্মে কথা বলতে দেখা গিয়েছে.. সেটার জন্য নিশ্চয় অনেক প্র্যাকটিসের প্রয়োজন হয়েছে?
-ল্যারিঙ্গস ছাড়া শুধুমাত্র খাদ্যনালী দিয়ে কথা বলাকে ডাক্তারি ভাষায় আসলে ‘ইউসুফিক্যাল’ বলে আসলে। কিন্তু ল্যারিঙ্গস থাকা সত্ত্বেও খাদ্যনালী দিয়ে কথা বলা যে কী কঠিন, তা বলে বোঝানো অসম্ভব। অনেকবার প্র্যাকটিস করতে হয়েছে। শুটিংয়ের সময়, ডাবিংয়ের সময়। বাকিটা দর্শকরা বলবেন আমি কতটা উতরোতে পেরেছি!
নিঃসন্দেহে ‘গলার ব্যায়ামওয়ালা’র চরিত্রটা চ্যালেঞ্জিং!
– ‘ইউসুফিক্যাল’ টার্মে শুধু কথা বলতে পারাই নয়, আমি কতটা কমিউনিকেট করতে পারছি পেশেন্টের সঙ্গে সেই ইমোশনটাকেও ফুটিয়ে তুলতে হয়েছে। উপরন্তু, আমার মাথায় সবসময়ে কাজ করত আমাকে পেশেন্টের থেকে আরও ভাল করে বলতে হবে। কারণ, এক্ষেত্রে আমি তার শিক্ষিকার ভূমিকায়। সেটা আমার কাছে চ্যালেঞ্জিং ছিল।
এই প্রথম শিবপ্রসাদ-নন্দিতার সঙ্গে কাজ…
– হ্যাঁ, তাই ‘কণ্ঠ’ আমার কাছে খুব স্পেশ্যাল। শিবুদা যেহেতু অভিনয় করেছেন তাই নন্দিতার কাঁধেই সিংহভাগ দায়িত্ব ছিল। ছবির আগে ওয়ার্কশপগুলো শিবুদা করিয়েছিলেন। আর স্পটে পরিচালকের আসনে ছিলেন নন্দিতাদি। কিন্তু ওঁরা একে-অপরকে এত ভাল বোঝেন, যে কাজটাই সহজ হয়ে যায়। পরিচালকজুটি হিসেবে ওঁদের কেমিস্ট্রিটাই যথেষ্ট ফ্লোরের অন্যান্য আর্টিস্টদের উৎসাহ জোগানোর জন্য। তবে, শিবুদা এককথায় অনবদ্য।
শিবপ্রসাদের সঙ্গে তো এইপ্রথম স্ক্রিনস্পেসও শেয়ার করেছেন… পরিচালক না অভিনেতা শিবপ্রসাদ?
– ওনার দুটো সত্ত্বাই ভীষণ ভাল। পরিচালক শিবপ্রসাদের ছবি নিয়ে নতুন করে আর কী বলি? তবে শিবুদাকে বলব, “তোমাকে অভিনেতা হিসেবে আরও দেখতে চাই।”
ছবিটা করতে গিয়ে কখনও এরকম সংশয় কাজ করেছে যে এই কণ্ঠরোধের সমস্যাটা যদি আমারও হত, তাহলে…
– আচ্ছা, চোখের যত্ন আমরা যেভাবে নিই বা শরীরের বাকি সমস্যগুলো নিয়ে যেভাবে ভাবি, কণ্ঠ নিয়ে আলাদা করে কী সত্যিই ভাবি? তবে, ছবিটা দেখার পর হয়তো অনেকেই ভাববেন নতুন করে। আসলে অভিনয় করার সময় থেকেই মনে এই ভয়টা বেশ ঢুকে গিয়েছিল… যে আরে, আমি তো অভিনেত্রী। এরকম সমস্যা হলে কী করব? আমার তো গলা বসে গেলেই মনে হয়, এই রে এখন কী হবে! সবার জন্য ভীষণ ইন্সপায়ারিং একটা গল্প বলবে ‘কণ্ঠ’। সবার উচিত গলার রেস্ট নেওয়া।
গলার যত্ন নেন কী করে?
– ধূমপান বা অন্য কোনও নেশা আমার নেই। তাই ওদিকটা থেকে বাঁচা। ঠান্ডা জল এড়িয়ে চলি।
টলিউডের তিন বড় পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় এবং শিবপ্রসাদ-নন্দিতার সঙ্গে কাজ করে ফেললেন.. কাজ কেড়ে নিচ্ছেন বলে এখানকার অভিনেত্রীরা আপনাকে হিংসে করেন বলে মনে হয়?
– সবার নিজস্ব স্টাইল রয়েছে। যেই চরিত্রের জন্য আমাকে প্রয়োজন সেখানেই আমাকে নিয়েছেন। আমি তো খুব কমই কাজ করছি এখানে। বাকিরা তো সারা বছর কাজ করছে। হিংসে করে বলে মনে হয় না! আমাকে তো বেশ অ্যাপ্রিশেয়ট-ই করে।
এখনও বলবেন কম কাজ করছেন!
– (হেসে) হ্যাঁ, মানে…. যেই ছবিতে আমাকে প্রয়োজন সেখানেই আমাকে নেওয়া হয়।
‘কণ্ঠ’ নিয়ে কথা বলতে গেলে ভাষার কথা আসেই… আপনার বাংলা নিয়ে অনেকেই কথা বলেন…
– বলতেই পারেন! কিন্তু আমার এই ডায়ালেক্টটাকেই তো অনেকে কাজে লাগান এবং লাগিয়েছেনও। তাতে আখেরে খারাপ কিছু তো হয় না! আমি আমার মাতৃভাষা তো পরিবর্তন করতে পারব না। তবে, চরিত্রের প্রয়োজনে তা বদলাতেই পারি।
‘বিসর্জন’-এর কথা বলছেন?
– (হাসি)….
কলকাতা-বাংলাদেশ এত ছোটাছুটি করেন, ম্যানেজ করেন কীভাবে?
– কলকাতায় না এসে আমি থাকতে পারব না। এমনও হয় আমি একসপ্তাহে দু’-তিনবার আসি কলকাতায়। এমনও হয়েছে সকালে কলকাতায় গিয়ে বিকেলে চলে আসি। কাজের জন্য ম্যানেজ করতেই হয়। এত কাজের মাঝে আসলে নিজেকেই কম সময় দেওয়া হয়।
আপনি তো বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল লিগেরও অ্যাম্বাসাডর…
– বাংলাদেশ আন্ডার ১৯ মহিলা ফুটবল লিগের অ্যাম্বাসাডর হওয়ার প্রস্তাব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হ্যাঁ বলেছিলাম। মেয়েরা খুব ভালই খেলছিল। কিন্তু কী হল জানো তো.. ফণীর কারণে ম্যাচটাকেই ড্র ঘোষণা করা হল। আমার বিশ্বাস ভবিষ্যতে ওরা আরও ভাল খেলবে।
শুনলাম, গায়িকা হিসেবে ডেবিউ করছেন?
– অতনু ঘোষের ‘বিনি সুতোয়’ ছবির জন্য গেয়েছি। দেবজ্যোতি মিশ্রর পরিচালনায় রবীন্দ্র সংগীত ‘সুখের মাঝে তোমায় দেখেছি’ গানটা। চরিত্রটা এতটাই ন্যাচরাল যে অন্য কাউকে দিয়ে গাওয়ালে হয়তো সেই আমজ থাকত না। আমার ‘কণ্ঠ’-ই ডিম্যান্ড করছিল। তাই পরিচালকের কথাতেই গানটা গাই। এটা আসলে অতনুদার নিজস্ব স্টাইল। ছবির চরিত্রকে দিয়েই গান গাওয়াবেন। এর আগে ওঁর ছবিতে সৌমিত্রকাকুও গেয়েছেন।
কী ধরনের চরিত্রে দেখা যাবে আপনাকে?
– ‘বিনি সুতোয়’ আমার চরিত্রটা একটু রহস্যজনক। দুটো অদ্ভুত চরিত্রের মানুষ। এক রিয়েলিটি শোয়ে দেখা হয়। তারপর…. আর বলব না! (হেসে)
পরবর্তী আর কী কী ছবি রয়েছে?
– ‘ফুরুৎ’-এর কাজ চলছে। ‘বিউটি সার্কাস’ রয়েছে। এছাড়া, কৌশিকদার একটা ছবির কথা চলছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.