শহরে এসে খোলামেলা মেজাজে অকপট শাহরুখ খান। মুখোমুখি বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
২০১৩ সালে ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’-এর চূড়ান্ত সাফল্যের পর ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’, ‘দিলওয়ালে’, ‘ফ্যান’, ‘ডিয়ার জিন্দেগি’ বা ‘রইস’ সেই সাফল্য পায়নি। তাই ‘জিরো’ এখন পাখির চোখ কিং খানের। লক্ষ্যভেদ করতেই হবে। ২৪তম আন্তর্জাতিক কলকাতা ফিল্মোৎসবের উদ্বোধনে এসে নিজের ছবি ট্রেলার দেখাতেও পিছপা হচ্ছেন না। নেতাজি ইন্ডোর থেকে ফিরে এসেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন শাহরুখ। কালো স্যুট ছেড়ে সাদা শার্টের উপর চাপালেন গ্রিন জ্যাকেট। বাদশাহকে একটু ক্লান্ত দেখালেও ‘জিরো’র জন্য সিক্সার পেটাতে তৈরি তিনি।
বিলেটেড হ্যাপি বার্থডে শাহরুখ। আপনি সদ্য তিপ্পান্ন পূর্ণ করলেন। কী মনে হয় অর্ধেক জীবন কেটে গিয়েছে, না কি ‘জিরো’ থেকে আবার নতুন জীবন শুরু করছেন?
শাহরুখ: ওহ, থ্যাংক ইউ! হ্যাঁ, আপনি একেবারে ঠিক বলেছেন। এগজ্যাক্টলি অর্ধেক জীবন কেটেছে। কারণ, আমি তো ১০৬ বছর বয়সে মারা যাব। সিরিয়াসলি, বিশ্বাস করুন! আমি তো আমার ছেলেমেয়েকেও বলেছি যে ঠিক অর্ধেক জীবন বাকি আমার। ১০৬ ইজ এ গুড এজ টু ডাই। আপনাদের আরও অনেক বছর সহ্য করতে হবে আমাকে (হাসি)।
আপনি কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনে মজা করে হলেও আক্ষেপের সুরে বলেছেন যে আপনার ছবি ফেস্টিভ্যালে সুযোগ পায় না! আর্ট হাউস সিনেমা, কমার্শিয়াল সিনেমার বিভাজনটা কীভাবে দ্যাখেন আপনি?
শাহরুখ: অভিনেতা হিসাবে ফেস্টিভ্যাল সিনেমা বা কমার্শিয়াল সিনেমাকে আলাদা করে দেখি না। আমি মনে করি বিভিন্ন স্কেপ বা প্ল্যাটফর্মের জন্য ছবির ধরন আলাদা হয়। নবতম সংযোজন মোবাইল ফোন। তো ফোন হোক বা ফেস্টিভ্যাল, সিনেমা হল, থ্রি-ডি বা ফোর-ডি যাই হোক না কেন, ছবির বিষয় এবং ভাষাকে সেই প্ল্যাটফর্মের পরিপূরক হতে হবে। ফেস্টিভ্যাল সিনেমাস্কেপ ইজ ভেরি ডিফারেন্ট স্কেপ, যে ধরনের ছবি আমি করি তার থেকে। এটা নিয়ে আমার খারাপলাগাও নেই, ভাললাগাও নেই। আমার কাছে প্রথমত যেটা গুরুত্বপূর্ণ, কাজটা করে আমার ভাল লাগছে কি না! দ্বিতীয়ত যদি আমাকে এমন কিছু অফার করা হয় যা আমি আগে করিনি- তা সে নেটফ্লিক্সের জন্য হোক ফেস্টিভ্যালে পাঠানোর ছবি হোক বা বিগেস্ট কমার্শিয়াল ছবি, আমি করব। কারণ অভিনেতা হিসাবে সেটাই আমার কাজ। কেনই বা আমি কোনও কিছু নিয়ে দুঃখ বা খুব আনন্দ পাব। বিকজ মাইন ইজ দ্য মোস্ট কমপ্লিট লাইফ ইন দ্য হিস্ট্রি অফ ম্যানকাইন্ড। অ্যান্ড ওনলি হাফ ইজ ওভার।
[ ‘কেদারনাথ’-এর মুক্তি আটকাতে সেন্সর বোর্ডকে চিঠি বিজেপি নেতার ]
আপনার ছেলেমেয়ের ‘জিরো’-র ট্রেলার কেমন লাগছে?
শাহরুখ: আরিয়ান আমেরিকা থেকে ফোন করে বলেছিল, ইটস এ ডিজনি লাইক ফিল্ম, ভেরি ম্যাজিকাল। সুহানারও খুব ভাল লেগেছে। আর ছোট ছেলেকে জিগ্যেস করায় খুব ব্যস্ত হয়ে বলেছে, ‘টু গুড, টু গুড’।
ইদানীংকালে আপনি এবং সলমন পরস্পরের ছবিতে ক্যামিও করেছেন। আপনি ‘টিউবলাইট’-এ, সলমনকে দেখা যাবে ‘জিরো’-তে। এটা কেবলমাত্র শুধুই প্রফেশনাল সিদ্ধান্ত। নাকি আপনাদের সম্পর্ক?
শাহরুখ: ‘জিরো’-র ক্ষেত্রে কী হয়েছিল সেটা বলছি। শুটিয়ের ফার্স্ট শিডিউল শেষ হওয়ার পর আমি আনন্দ স্যার আর হিমাংশু আমার বাড়িতে রাতে পুল খেলছি। তখন একটা গানের প্ল্যান হচ্ছে, আনন্দ স্যর সলমনের নাম বলল। তার ঠিক একটু পরেই কাকতালীয়ভাবে সলমনের ফোন। আরিয়ান আর সুহানার জন্য গিফ্ট নিয়ে বাড়িতে হাজির। আমি ক্যাজুয়ালি গানের কথাটা বলেছি। তখন কিছু গানের ‘গ’ও রেডি হয়নি। শুনেই সলমন বলল, ‘ডেট বতাদো। মেরি পিকচার রিলিজ হ্যায়। তিনদিন ফ্রি হু ম্যায়। দো, তিন, চার। ম্যায় ইয়ে গানা কর রহা হু।’ এভাবেই হয়েছিল। তারপর আগে সেট তৈরি হল। তারপর গান লেখা, সুর করা হল।
আপনার সঙ্গে সলমন খানের সম্পর্কটা কীভাবে দ্যাখেন। অনেকদিন ধরে আপনারা ইন্ডাস্ট্রিতে আছেন…
শাহরুখ: আই হ্যাভ ইম্মেন্স রেসপেক্ট ফর হিম অ্যান্ড হিজ ফ্যামিলি। শ্রদ্ধার চেয়ে বড় সম্পর্ক আর হয় না। একই কথা বলব আমির প্রসঙ্গেও। আমি যখন ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছিলাম তখন নিউকামার ছিলাম। ওরা দু’জনেই আমার চেয়ে দুই-তিন বছরের সিনিয়র ছিল কাজের দিক থেকে। আমি সবেমাত্র কলেজ থেকে বেরিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় স্টারের সঙ্গে আলাপ করতে গিয়ে দেখলাম যে তারা আমাকে খুব সহজভাবে আপন করে নিল। আমার ছবি নিয়ে খুব প্রশংসা বা সেসব কিছু নয়। একেবারে বন্ধুর মতো মিশেছিল। আমি আমার কেরিয়ারের শুরুতেই দেখেছিলাম, এত বড় দু’জন স্টারের, মানবিক দিকটা। এটা আমাকে ইন্সপায়ার করে। তারপর কাগজে আমাদের ঝগড়া নিয়ে কত লেখালিখি। সলমন, আমিরের সঙ্গে দেখা হলে আমরা সেসব নিয়ে কথা বলে মোটেই সময় নষ্ট করতাম না। উই হ্যাভ এ ভেরি ডিফারেন্ট রিলেশনশিপ। আর পরস্পরের প্রতি এই শ্রদ্ধা সবকিছুকে ছাপিয়ে যাবে বলেই আমি মনে করি।
ম্যানারিজম থেকে বেরিয়ে নিজেকে পুনরাবিষ্কার করতে হবে এই কথাটা আপনাকে প্রায়ই শুনতে হয়েছে। যেটা শুনতে আপনার অবাক লাগে। এর মধ্যেই ‘স্বদেশ’, ‘চক দে’, ‘ডিয়ার জিন্দেগি’ করেছেন। ‘জিরো’ কি তেমন ছবি?
শাহরুখ: পুনরাবিষ্কার শব্দটা ঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয় না। এটা অনেক বড় ব্যাপার। আমি এত কিছু ভাবি না। যেটা মন থেকে ভাল লাগে সেটাই করি, এটাই সবচেয়ে পুরনো ফর্মুলা। অনেক সময় হৃদয় দিয়ে তৈরি করা জিনিস সফল নাও হতে পারে। কিন্তু সেটা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সাহস থাকতে হবে। নিজেকে ডিসকভার করেছি, এই ভাবনাতে মেতে থাকাটা খুব আত্মকেন্দ্রিক। আমরা নিজেদের ডিসকভার করার কে? উই আর হিয়ার টু এক্সপোজ আওয়ারসেল্ভস টু অল অফ ইউ। আপনারা আমার অভিনয়ের মধ্যে নিজেদের ডিসকভার করুন। আই অ্যাম সার্ভিং ইউ।
[ নিক-প্রিয়াঙ্কার বিয়েতে বরযাত্রী কারা জানেন? ]
শাহরুখ আপনি বাংলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর, নবাগত অভিনেতাদের রোল মডেল। এই রোল মডেল হওয়ার চাপ কতটা?
শাহরুখ: আমি খুব অনেস্টলি বলছি, আমি আমার ছেলে-মেয়েদের বলেছি, ডোন্ট বি লাইক মি। এবং আশা করি এই কথাটা গণমাধ্যমের দ্বারা সবাই শুনেছেন। এটা শোনার পরও যদি তারা আমাকে রোল মডেল করতে চায়, তাহলে তাদের রিস্কে করুক। আই অ্যাম নো রোল মডেল।
আপনি আপনার সন্তানদের এই কথা বলেছেন কেন?
শাহরুখ: ইয়ার, দে শুড হ্যাভ দেয়ার ওন লাইফ। আমার মতো নয়। আমি যা করি বা না করি সেটা একান্তই আমার। তাছাড়া আমার অনেক বাজে অভ্যেস আছে, ইমোশনাল ইস্যু আছে। ওদের নিজেদের ইমোশনাল জার্নি তৈরি হোক। কেন আমার মতো হতে হবে! আই অ্যাম দ্য বেস্ট ফাদার। কিন্তু বেস্ট রোল মডেল নই। আমি যদি নিজের সন্তানের বেস্ট রোল মডেল না হতে পারি, তাহলে অন্য কারও রোল মডেল হওয়ার যোগ্যতাও আমার নেই।
তবু আপনার দিকে তাকিয়ে গোটা ভারত। একটা প্রসঙ্গ উত্থাপন করতে চাই। আমাদের দেশে বর্ণবৈষম্য রয়েছে। সেখানে আপনি ফেয়ারনেস ক্রিমের বিজ্ঞাপন করেন। কখনও আপনাকে এটা নিয়ে ক্রিটিসিজম শুনতে হয়নি? বা আপনি এটা নিয়ে নিজে কী ভাবেন?
শাহরুখ: আমি আপনাকে একটা কথা বলতে চাই। বা প্রশ্ন করতে চাই। আমার ব্র্যান্ড এন্ডর্সমেন্ট, কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আমার ভাষণ, আমার সিনেমা, টিভির শো বা আমার সম্পর্কে যা কিছু পাবলিক, সেটার ঊর্ধ্বে গিয়েও কি আমার অনেস্টি দেখতে পাওয়া যায়? যদি এইসব কিছুর পরেও আমার মধ্যে কিছু সততা খুঁজে পান তাহলে জেনুইনলি ফরগিভ মি যদি আমি কিছু ভুল করে থাকি। এটা লিগাল, মার্কেটে বিক্রি হয়। আপনার কি মনে হয় একটা মানুষের গায়ের রং দিয়ে তাকে আমি বিচার করব? হু অ্যাম আই? আমি যখন ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছিলাম, আমায় দারুণ দেখতে ছিল না। আমি লম্বা-চওড়া ছিলাম না। ভাল নাচতে পারতাম না। দুর্দান্ত অভিনেতা ছিলাম না। অ্যাক্টিং স্কুল থেকেও পাস করে আসিনি। দেয়ার মাস্ট বি সামথিং বিয়ন্ড দিস। আমি কী করে কাউকে ছোট করে দেখতে পারি! আমি মধ্যবিত্ত ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছি। আমার পরিবার আর পাঁচটা স্বাভাবিক মানুষের মতোই। ফিজিক্যাল অ্যাসপেক্টে কাউকে ছোট করলে নিজের পরিবারকেই ছোট করা হবে। আমার মেয়ে সুহানার গায়ের রং কালো। কিন্তু আমার কাছে ও সবচেয়ে সুন্দর। আমি কোনও কিছু নিয়েই অন্য মানুষ বা তার বিশ্বাসকে ছোট করে দেখি না। আর ‘জিরো’ ছবিতে আমরা অপূর্ণতা উদ্যাপন করছি এবং কারও থেকে সিমপ্যাথি চাইছি না। এখন হয়তো আমার সবকিছু নিয়েই প্রশ্ন করা হবে। যেহেতু কেউ কেউ ভাবে আমি রোল মডেল। কিন্তু এই সব কিছুর পরেও একবার নিজেদের প্রশ্ন করুন যে আমার খারাপ চরিত্রে অভিনয়, কিছু খারাপ ছবি, কিছু খুব ভাল ছবি, পাবলিক অ্যাপিয়ারেন্স, সেন্স অফ হিউমার- শুধু এই সবের জন্যই কি আমাকে আপনারা ভালবেসেছেন, নাকি দেয়ার ইজ সামথিং মোর বিয়ন্ড অল দিস! না আমি ফেয়ার, না আমি হ্যান্ডসাম! আমি কাউকে ছোট করার জন্য বিজ্ঞাপন করছি না। আই অ্যাম অ্যান অ্যাক্টর। আই ক্যান সেল এনিথিং। বাট ইফ ইউ ক্যান সি দ্য অনেস্টি, প্লিজ।
আপনি সবসময় নিজেকে খারাপ অভিনেতা হিসেবে তুলে ধরেন।
শাহরুখ: আমার মতে যদি কোনও অ্যাক্টর মনে করে সে ভাল, দেন দ্যাট ইজ দ্য এন্ড। ইন আর্ট দেয়ার ইজ নো ফাইনালিটি। অ্যান্ড ইয়ার, আই কাম ফ্রম কমার্শিয়াল সিনেমা, আই অ্যাম লার্জার দ্যান লাইফ নট বাই চয়েস, বাট হোয়াট হ্যাপেনস টু মি। আমার মধ্যে সেই সব গুণ আছে যেটা বলে দেয় আমি সিরিয়াস অ্যাক্টর নই। তাই আমাকেও সিরিয়াসলি নেওয়া উচিত নয়।
এটা কি আপনি ইচ্ছে করে করেন?
শাহরুখ: না, কারণ আমি মনে করি অ্যাক্টিং শুড নট বি টেকেন সিরিয়াসলি। অ্যাক্টিং শুড বি ‘র’, শুড বি চাইল্ডলাইক, শুড বি রিয়্যাল। ছোটরা ভাল বা খারাপের তফাত জানে না। তারা নিজেদের কাজটা খুব স্পনটেনিয়াসলি করে। প্রিটেনশন নেই। দ্যাটস হোয়াই উই অল লাভ চিলড্রেন। অ্যাক্টিং শুড বি চাইল্ডলাইক। আর এটাই আমার সার্চ বা জার্নি। ওই পিওরিটি, ‘র’নেস’ বা সারল্যের কাছে বারবার ফেরার চেষ্টা করি।
[ সিনেমা হলে কংগ্রেসের সভা, বাতিল ‘ঠাগস অফ হিন্দোস্তান’-এর শো ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.