‘মান্টো’ নিয়ে স্পেশাল স্ক্রিনিং-এ শহরে এলেন পরিচালক নন্দিতা দাস ও অভিনেতা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি। ছবি নিয়ে তাঁদের সঙ্গে জমজমাট আড্ডায় সোমনাথ লাহা।
নওয়াজ, ‘মান্টো’-র সুবাদে কলকাতায় এসে আপনার কী অনুভূতি?
নওয়াজ: আমি যখনই কলকাতায় আসি ভীষণই ভাল লাগে। অনেকবার এসেছি। অনেক ছবির শুটিংও করেছি এখানে। বিশেষ করে ‘মান্টো’-র জন্য কলকাতায় আসতে পেরে বেশ ভাল লাগছে। কলকাতায় আমি এই ছবির জন্য খুব আশাবাদী। ২১ সেপ্টেম্বর ছবিটা রিলিজ করছে। আমাদের ছবিটা যেহেতু খুব সংবেদনশীল ছবি একজন লেখকের উপর, তাই আমি ১০০ শতাংশ নিশ্চিত। এখানকার মানুষের বুদ্ধি, বিচক্ষণতা, বোঝার উপর আমার আস্থা রয়েছে। আমাদের ছবি খুব ভাল প্রতিক্রিয়া পাবে।
মান্টোর চরিত্রে অভিনয় করার জন্য কী ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?
নওয়াজ: (নন্দিতার দিকে ফিরে) আসলে উনি ৫-৬ বছর ধরে মান্টোকে নিয়ে রিসার্চ ওয়ার্কের কাজটা করে রেখেছিলেন। সেজন্য চিত্রনাট্য পড়ার দিন থেকে, কস্টিউম ট্রায়াল, ৪-৫ দিনের ওয়ার্কশপ যখন করেছি, ততদিনে উনি Lady manto (লেডি মান্টো) হয়ে গিয়েছিলেন (হাসি)। আমাদের ছবির সমস্ত অভিনেতা-অভিনেত্রীর কাছে কাজটা করা অনেক বেশি সহজ হয়ে গিয়েছিল। কেননা চরিত্রের খুঁটিনাটি, চলাফেরা যাবতীয় কিছুর খোঁজখবর উনি আগেই নিয়ে রেখেছিলেন। এমনকী মান্টোর মেয়েদের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের বাবার সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া অবধি। ওঁরাও নিজেদের বাবা সম্পর্কে অনেক তথ্য ও খবর দিয়েছিলেন। তাই কাজটা করতে বেশ সুবিধাই হয়েছে। দ্বিতীয়ত, মান্টোর যে চিন্তাভাবনা, সেটা পড়ে আমার মনে হয়েছিল এটা যেন আমারই চিন্তাভাবনা, নিজের কথা। তাই কাজটা করতেও বেশ ভাল লেগেছিল। তবে মান্টোর সততা, সেটার সঠিক বহিঃপ্রকাশ যাতে আমার মধে্য থেকে হয়, মানে কথাটা মান্টোর, পর্দায় আমি সেটা বলছি, এটা ফুটিয়ে তোলার জন্য পরিচালক যে পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছিলেন তাতে আমার মান্টোর চরিত্রে প্রবেশ করতে বা বলতে পারেন মান্টো হয়ে উঠতে কোনও সমস্যাই হয়নি।
[ ক্যানসার সারিয়ে নয়া ইনিংস শুরু লিজার, জন্ম দিলেন যমজ সন্তানের ]
আপনি কমার্শিয়াল, নন কমার্শিয়াল, দু’ ধরনের ছবিতেই ইউনিক কিছু চরিত্রে কাজ করেছেন। মান্টোর চরিত্রে কাজ করে আপনি কী শিখলেন?
নওয়াজ: আমি যে ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছি সেগুলির কোনওটাই টিপিক্যাল বলিউড হিরোদের মতো নয়। মানে বিগত ৬০ বছর ধরে যেটা আমাদের মাথায় বসে রয়েছে সেগুলি আমি করিনি। আর সেগুলি বাদ দিয়ে সব ধরনের চরিত্রই করেছি। আর এই ধরনের চরিত্র না করলে এই অভিনেতা এটা করে না বলে এর গায়ে স্ট্যাম্প পড়ে যায়। এজন্য একটা বিশেষ ক্যাটেগরিতেও ফেলে দেওয়া হয়। আমি বাংলা ছবি দেখে বড় হয়েছি। বাঙালি পরিচালকদের কাজ দেখেছি। এমনকী বাঙালি পরিচালকদের সঙ্গে কাজও করেছি। স্বর্ণযুগের বাংলা সিনেমার বিষয়ভাবনা এতটাই ভাল ছিল যে, সেটা তার নিজস্ব গণ্ডি ছাড়িয়ে সব সিনেমাকেই প্রভাবিত করেছিল। গোটা বিশ্বে তার সুনাম ছিল। সেসময়ের বাংলা ছবির গানে হিরোরা যেভাবে রি-অ্যাক্ট করতেন এখনকার বলিউড ছবির হিরোরা সেভাবেই করে থাকেন। আর এখন এখানকার মানে বাংলা ছবির হিরোরা বলিউড হিরোদের মতো হতে চাইছেন। দু’ জায়গার ক্ষেত্রেই বাংলা / হিন্দি এটাই প্রযোজ্য। আমি বলিউড হিরো হতে চাই না। আমি তিনটি ছবিতে গ্যাংস্টারের চরিত্র করার পর আজ মান্টোর মতো ছবি করছি বলে এই প্রশ্নটা আপনি জিজ্ঞাসা করলেন। তিনটি ছবিতে বলিউড হিরোর চরিত্রে অভিনয় করলে এই প্রশ্ন করতেন না।
নওয়াজ, আপনি একবার বলেছিলেন আপনি অভিনয় দেখাতে চান না। সেটাকে সেলিব্রেট করতে চান। একটু বুঝিয়ে বলবেন বিষয়টা।
নওয়াজ: এটা আমার নিজস্ব একটা ধারণা। এক-একজন অভিনেতার নিজের নিজের অভিনয় নিয়ে এক একধরনের ভাবনাচিন্তা থাকে। মাঝে মধ্যে আমিও এটা নিয়ে কনফিউজড হয়ে যাই। তবে একদিন অবশ্যই এটা করার চেষ্টা করব (হাসি)।
[ ‘স্যালুট’-এ শাহরুখের বিপরীতে দেখা যাবে ভূমিকে! ]
আপনি নন্দিতার পরিচালনায় কাজ করলেন। নন্দিতা একজন অভিনেত্রী। আপনার কাকে বেশি পছন্দ-অভিনেত্রী নন্দিতা নাকি পরিচালক নন্দিতা? কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
নওয়াজ: আমার দু’জনকেই ভাল লাগে। কাজের অভিজ্ঞতা বেশ ভাল। আমি ওনার ‘ফিরাক’-এ কাজ করেছি। এবার একসঙ্গে কোনও ছবিতে অভিনয় করতে চাই। ওঁর সঙ্গে শর্ট ফিল্ম করেছি। আসতে আসতে আমাদের কথা হচ্ছিল। ভুটানে লোকেশন প্ল্যান করেছে। পুরো ছবিতে দু’জন চরিত্র…
(হঠাৎ পাশ থেকে নন্দিতা): নওয়াজ, তুমি দেখছি সব বলে ফেলছ। এমনকী লোকেশনও (হাসি)।
নওয়াজ: সে না হয় লোকেশন বদলে নেওয়া যাবে (হাসি)।
নন্দিতা: এটা নিয়ে আর এখন কথা নয়। সিক্রেট থাক সবটা (হাসি)।
নওয়াজ, এটা আপনার অভিনীত তৃতীয় বায়োগ্রাফিক্যাল ছবি। ‘রমণ রাঘব’ ও ‘মাঝি’-র পর। কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল একজন লেখকের চরিত্র করা।
নওয়াজ: দু’টি ক্ষেত্রেই আলাদা অভিজ্ঞতা রয়েছে। আলাদা প্রস্তুতিও নিতে হয়েছে। তবে মান্টোর চিন্তাভাবনা আর আমার চিন্তাভাবনা যেহেতু একরকম ছিল, মানে আমি নিজে যদি সমাজ সম্পর্কে কিছু বলতে চাই তাহলে এটাই বলব। মান্টো সতি্য বলতে চেয়েছেন। সত্যিটা সবাই বলতে পারে না। আমরা অনেকেই ভয় পাই বলতে। তাই সমঝোতার পথটাই বেছে নিই। আজও যদি উনি বেঁচে থাকতেন তাহলে আজকের সময়ের মতো করে নিজের সংবেদনশীল মনোভাবকেই ব্যক্ত করতেন। একটা সামাজিক প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আমিও মনে করি সত্যটা সেভাবেই বলা উচিত। এখনও আমাদের সমাজের বিভিন্ন জায়গায় অনেক মান্টো রয়েছেন যাঁরা নিজের নিজের মতো করে সত্যিটা বলার চেষ্টা করেছেন। সকলের সামনে নিয়েও আসছেন।
[ মাঝরাতে পিঠে ম্যাসাজ করানোর প্রস্তাব পেয়েছিলেন রাধিকা! ]
নওয়াজ, আজকাল মেনস্ট্রিম কমার্শিয়াল ছবির অভিনেতারাও অন্যরকমের ছবিতে অভিনয় করছেন। এই ট্রেন্ডটাকে আপনি কীভাবে দেখেন।
নওয়াজ: করতে তো হবেই। তাই তারা করছেনও। আমরা যেরকম করতাম। প্রথমদিকে তো ছবিতে হিরো মানেই সে বিদেশ থেকে আসবে। মানে ইউরোপ, আমেরিকা। এখন কানপুর, কলকাতা থেকে আসছে। Thank god। এতটা তো হয়েছে এবার (হাসি)। আমরা যখন এই ধরনের ছবি করেছি তখন এইসব ছবির মার্কেটিং সেভাবে হত না।
কেউ দেখতও না। এখন সেই ছবিগুলিকেই সামান্য চাকচিক্যে মুড়ে, বাজেট বাড়িয়ে, ১০-১৫টা গান জুড়ে দর্শকের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে। দেখতে ভালই লাগছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.