চারুবাক: প্রায় দশখানা ছবি বানানোর পর মৈনাক ভৌমিক নিজেকে বদলালেন। এই ‘বদল’ তাঁর নিজের কাছে কেমন লাগছে জানি না। কিন্তু মৈনাকের বন্ধুদের তো ভাল লাগারই কথা। বাংলা ছবির আমবাঙালি দর্শক এখনও গোদা একটা গল্প দেখার জন্য হলে ঢোকে। গল্প বলা এবং শোনাই আমাদের সংস্কৃতি। রামায়ণ-মহাভারত-পালাগান-মনসামঙ্গল, সবই শ্রাব্য। সিনেমা নিয়ে গোদার তারকোভস্কি, আইজেনস্টাইন চটকাই না কেন, বাঙালির কাছে দিনের শেষে সিনেমার গপ্পোটাই জরুরি। তা অ্যাদ্দি মৈনাক সিনেমার চলতি ন্যারেটিভ ভেঙে, গল্পের ল্যাজা-মুড়ো এদিক সেদিক করে আমদর্শককে অনেকটাই বিভ্রান্ত করেছেন। এবার এসেছেন পথে! তবে এবারের পথটাও কিন্তু হাসির ছররায় চড়ানো।
মানুষের দুঃখ, অসন্তোষ, অসুখ, ডিপ্রেশন এগুলো কেন হয়? এর নিরাময় কী? ডাক্তারি পাশ না করা তরুণ সিদ্ধার্থ চৌধুরি সেই সুখের বড়ি (হ্যাপি পিল) আবিষ্কার করে, পাড়াতুতো বন্ধু মীরের সাহায্যে বাজারে ছাড়তেই সুপার-ডুপার হিট। শুধু জনগণ নয়, নিজের মা ও বোনকে সেই পিল খাইয়েও বদলে দেয়। মৈনাকের এই ছবির বড়গুণ হল সারল্য। হ্যাপি পিলের কৌটোয় গান শুনবেন, মজায় থাকবেন, জিম করবেন, এমন কতগুলো নির্দেশ থাকত। ওষুধের আসল ফর্মুলা তো ওগুলোই। জীবনকে সহজ-সরল গতিতে এগিয়ে নেওয়া, ডিপ্রেশনকে দূরে রাখা, জীবনের বাস্তব এই সমস্যা নিয়ে এমন স্যাটায়ার মাখানো ছবি বাংলায় এই প্রথম। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার লাইনকে ব্যঙ্গ করে এক ‘বিয়ার কবি’র উপস্থিতিত একটা থ্রিলারের মেজাজও এনেছে। মিথ্যা প্রেমের মৃত্যু এবং সত্যি প্রেমের জন্মও দেখিয়েছেন মৈনাক। কালো মেয়ে ফর্সা না হলে বিয়ে হবে না। কিংবা কাজের জায়গায় বসের বকুনি খেয়ে নার্ভাস হয়ে পড়া, কোনওটাই জীবনের সত্য নয়। সত্য হল বিশ্বাস। বিশেষ করে আত্মবিশ্বাস। এটাই জীবনের হ্যাপি পিল। এমন একটি সহজ সত্যকে কমেডির মোড়কে তুলে আনার জন্য ধন্যবাদ তাঁকে। ধন্যবাদ উইট মেশানো চটকদার সংলাপের জন্যও।
গান এই ছবিতে বাহুল্য, অপ্রয়োজনীয়। অভিনয়ে যখন ঋত্বিক, সোহিনী, মীর রয়েছেন, তখন এমন অনসম্বল কাস্ট নিয়ে কোনও চিন্তাই নেই। ফুরফুরে মেজাজে দু’ঘণ্টা কাটিয়েই আসতে পারেন হ্যাপি পিল-এর স্বাদ নিতে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.