Advertisement
Advertisement

Breaking News

Haami 2

ফের বাজিমাত নন্দিতা-শিবপ্রসাদ জুটির, মন ছুঁয়ে যাবে ‘হামি টু’, পড়ুন রিভিউ

ছোটদের সঙ্গে বড়দের মনেও ধাক্কা দেবে।

Haami 2 movie by Nandita Roy and Shiboprosad mukherjee is a must watch | Sangbad Pratidin
Published by: Akash Misra
  • Posted:December 23, 2022 10:08 am
  • Updated:December 23, 2022 10:08 am  

শম্পালী মৌলিক: ২০১৪ সালে ‘রামধনু’ ছবিতে লাল্টু-মিতালি জুটি তৈরি হয়েছিল। তাদের জীবনের লক্ষ‌্য ছিল সন্তানকে ভাল স্কুলে ভর্তি করানো। ২০১৮ সালে ‘হামি’-তে লাল্টু-মিতালি জুটি ফেরত আসে। সেখানে ছোটদের মিষ্টি বন্ধুত্বের গল্প আর আধুনিক অভিভাবকত্বের প্রসঙ্গ নিয়ে এসেছিলেন নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ‌্যায়। ‘হামি টু’ ছবিতে তৃতীয় বারের জন‌্য লাল্টু-মিতালির প্রত‌্যাবর্তন ঘটেছে। সিকুয়েল বলা হলেও, এই জুটির ফেরত আসা ছাড়া প্রথম ছবির কাহিনির সঙ্গে ‘হামি টু’-র কোনও মিল নেই। রিয়‌্যালিটি শোয়ের চরম বাস্তব, ছোটদের বন্ধুত্ব, বাবা-মায়ের ইচ্ছাপূরণের চাপ, মধ‌্যবিত্ত পরিবারে এক বিস্ময় শিশুর বেড়ে ওঠা নিয়ে এই ছবির কাহিনি আবর্তিত হয়েছে। খুব জরুরি বার্তা রয়েছে চিত্রনাট্যে, যা নন্দিতা-শিবপ্রসাদ জুটির ট্রেড মার্ক।

ছবিতে মিতালির একটি সংলাপ এইরকম, ‘সাতবার স্কুলের চাকরির পরীক্ষা দিয়েও তো লিস্টে নাম ওঠেনি… ছোটবেলায় ইচ্ছে ছিল স্কুল মাস্টার হবে আর এখন স্টুল মাস্টার’। এর থেকেই লাল্টু মণ্ডলের আর্থ-সামাজিক অবস্থান পরিষ্কার হয়ে যায়। সে এখন কমোড টুল বিক্রি করে। আর ভাল সরকারি চাকরির চিঠি বা ফোনের অপেক্ষায় থাকে। ভেঁপু (ঋতদীপ) আর চিনুকে (শ্রেয়ান) নিয়ে তাদের ছোট্ট সংসার। মা মিতালি (গার্গী রায়চৌধুরি) তাদের বিস্ময় বালক ভেঁপুকে নিয়ে অতিরিক্ত প্রত‌্যাশা লালন করে। বাবা লাল্টু (শিবপ্রসাদ মুখোপাধ‌্যায়) তুলনায় কম, বরং ভাবে, ছেলে যেন খেলার সময় পায়। কিন্তু কচি বাচ্চা তো ৪৩-এর নামতা গড়গড়িয়ে বলে! দীর্ঘতম যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ ফটাস করে বলে দেয়। মহাকাব্যের গল্প-চরিত্র, দেশনায়কদের ঠিকুজি কোষ্ঠী তার ঠোঁটস্থ। জহুরি যেমন জহর চেনে, চাইল্ড আর্টিস্ট এজেন্ট প্রশান্ত চক্রবর্তীও (খরাজ মুখোপাধ‌্যায়) এসে যায় বিস্ময় শিশুর টানে। এজেন্ট একহাতে ‘জুনিয়র সারদা’, অন‌্য হাতে ‘ছোট রাসমণি’-র ভিড় সামলায় দক্ষতার সঙ্গে। মিতালি বিশ্বাস করে এ-ই পারবে ভেঁপু-র ‘ফেমাস’ হওয়াকে ‘ভাইরাল’ করতে। রিয়‌্যালিটি শোয়ে নাম লেখাতেই হবে ভেঁপুকে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: প্রথম পর্বে ছিল চমক, দ্বিতীয় পর্বে কি প্রত্যাশা পূরণ করতে পারল কারাগার ২? পড়ুন রিভিউ ]

লাল্টুবাবুর বাংলা স্কুলের প্রবীণ মাস্টারমশাই, যাঁকে সবাই নিতাই জ‌্যাঠা (অঞ্জন দত্ত) বলে ডাকে, তিনিও অবাক শিশুর প্রতিভায়। মাস্টারমশাই স্নেহাশিসে ভরিয়ে দেন ছোট্ট সিদ্ধার্থকে। মনে করিয়ে দেন, ‘বিস্ময় হতে যেও না, একদিন তুমি বিস্মিত হয়ে যাবে।’ ধুর, যে ছেলে ৩০ সেকেন্ডে প্রতিভার ঝলকানিতে চোখ ধাঁধিয়ে দিতে পারে, তার থামলে চলবে? চুলোয় যাক শৈশব, বন্ধুত্ব, খেলাঘর। সামনে কম্পিটিশন, রিয়‌্যালিটির ঠান্ডাঘর। ভাই চিনু দাদাকে টিভিতে দেখছে, রাস্তায় কাট আউটে দেখছে, শুধু তারা একসঙ্গে খেলার সময় পাচ্ছে না। ভেঁপু হাঁপায়। এজেন্টের খপ্পরে পড়ে মা কিন্তু বুঝে গেছে ছেলের হারা চলবে না। রিয়‌্যালিটি শোতে গিয়েই প্রতিভাধর ছোট্ট রুকসানার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় ভেঁপুর। কেবল অভিভাবকরা তাদের বন্ধুত্বে প্রতিযোগিতার বিষ ঢেলে চলে। যে সন্তান একসময় ছিল স্পেশাল এবং দুনিয়ার কাছে তার বিশেষত্ব প্রমাণের জন‌্য মরিয়া ছিল বাবা-মা, সেই সন্তান-ই তাদের উপার্জনের অস্ত্র হয়ে ওঠে। ততদিনে শিশুটি রিয়‌্যালিটি শোয়ের টিআরপির নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছে। প্রতিভাধরের গুণ অন্বেষণ সম্পন্ন হলে, খেঁাজা শুরু হয় তাকে বিক্রির অন‌্য কোনও পন্থা। সেই বিপণনের মাপকাঠি হতে পারে দারিদ্র‌, অসুস্থতা বা অন‌্য কোনও বিপন্নতা। যেমনটা এখন অনেক শিশুর জীবনেই ঘটে চলেছে। ‘হামি টু’ প্রতিযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। হিট মেকার পরিচালক জুটি মনে করিয়ে দেন, শিশুর মনের অবস্থা বোঝার দায়িত্ব অভিভাবকদের।
ছবিতে দেখি লাল্টু প্রতিযোগিতার দৌড়ে থামার কথা বলে। আর বলে নিতাই জ‌্যাঠা– পরবর্তীকালে নতুন বিস্ময় এসে একদিন তো চিনুর জায়গা দখল করে নেবে। এই পর্বে অঞ্জন দত্তর অভিনয় চোখে জল আনে। বলা যায় তিনি-ই ‘শো-স্টিলার’। কোনও কিছু শেখা বা সৃজনশীল হওয়ার থেকেও কি কম্পিটিশনে জেতা বড় হতে পারে? ‘হামি টু’ ছোটদের প্রতিযোগিতার ভালমন্দের কথা তুলে ধরে। চিত্রনাট্যে সম্প্রীতির বার্তাও বুনে দিয়েছেন পরিচালক জুটি। কেবল কোনও কোনও অংশে কমেডির ছোঁয়া দিতে গিয়ে বড্ড মেলোড্রামার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে, তা না হলে ষোলোআনা পূর্ণ হত।

Nandita roy and Shiboprosad Mukherjee's new movie Haami 2 trailer out

দ্বিতীয়ার্ধের অনেকটা জুড়ে ‘জুনিয়র পণ্ডিত’ শো চলে। এখানেই টান টান ক্লাইম‌্যাক্স পর্বে দেখার যে, ভেঁপু শেষপর্যন্ত সকলের প্রত‌্যাশা পূরণ করতে পারে কি না। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ‌্যায় সঞ্চালকের ভূমিকায় নিজের চরিত্রে খুব স্মার্ট। ছাপোষা মধ‌্যবিত্ত বাবার ভূমিকায় শিবপ্রসাদ সাবলীল অভিনয় করেছেন। গার্গী স্বপ্নপূরণে মরিয়া মায়ের চরিত্রের চাহিদা পূরণ করেছেন। তিন খুদে অভিনেতা ঋতদীপ সেনগুপ্ত, শ্রেয়ান সাহা, আরিত্রিকা চৌধুরিকে পর্দায় দেখলে আদর করতে ইচ্ছে করে। ভাল লাগে ছোটদের গান। মিউজিক করেছেন অনিন্দ‌্য চট্টোপাধ‌্যায় এবং আবহসংগীতে প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ‌্যায়। তবে ছবির দৈর্ঘ‌্য কম হতে পারত। আসলে প্রথম ‘হামি’ ভোলার নয়, দ্বিতীয়র চ‌্যালেঞ্জ তাকে অতিক্রম করার। প্রতিযোগিতার জটিল মানচিত্রে বন্ধুত্বের রামধনু দেখানো এ ছবির সেরা প্রাপ্তি। ছোটদের সঙ্গে বড়দেরও মনেও ধাক্কা দেবে।

[আরও পড়ুন: দুর্বল চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় ভরাডুবি ভিকি-ভূমি-কিয়ারার ‘গোবিন্দা নাম মেরা’ ছবির]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement