চারুবাক: ‘টোপর সাজাও, মুকুট পরাও…’ গানটা বিরসা দাশগুপ্তের ‘বিবাহ অভিযান’ ছবির টাইটেল সং ও থিম সং, দুটোই। শুরুতেই গানটা ছবির টোন এবং চরিত্র সেট করে দেয়। হলে ঢোকার আগেই দর্শক একটা কমেডি দেখতে যাচ্ছেন এটা তাঁদের জানা। তবে সেটা অতীতের ‘বসন্ত বিলাপ’, ‘বাই বাই ব্যাংকক’, ‘ছদ্মবেশী’ বা ‘ছুটির ফাঁদে’-র থেকে কতটা আলাদা হবে, সেটা অজানা।
টাইটেল সং শেষ হওয়ার পরই বাড়ির এক ছাদে দাঁড়িয়ে অঙ্কুশ আর রুদ্রনীলের সংলাপ বিনিময় এবং দুই বউ নুসরত ফারিয়া আর সোহিনী সরকারের সঙ্গে তাঁদের ফোনে হিজিবিজি মার্কা কথাবার্তাই বুঝিয়ে দেয় এতদিনের দেখা অতীতের ছবিগুলো থেকে ‘বিবাহ অভিযান’ আলাদা হতে চলেছে। রুদ্রনীল ঘোষ তাঁর গল্প ও চিত্রনাট্যে আজকের সময়ের ফ্লেভার সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন। সংলাপেও রয়েছে কবিতা-গানকে নিয়ে সময়োচিত প্যারোডির আভাস। বিশেষ করে গণশা ওরফে বুলেট সিং অর্থাৎ অনির্বাণ ভট্টাচার্যের মুখে ‘চাঁদ উঠেছে ফুল ফুটেছে’-র সঙ্গে মিলিয়ে ‘মালতী আমার বউ সেজেছে উলু দে না রে’-র মতো সংলাপ আজকের তরুণ দর্শকরা এনজয় করতেই পারে।
[ আরও পড়ুন: বাস্তবতার বড় অভাব, অভিনয়ের জোরেই ‘কবীর সিং’কে টেনে নিয়ে গেলেন শাহিদ ]
কমেডির প্রধান এলিমেন্ট যুক্তি-বুদ্ধির মিলমিশ না থাকা আর বাংলা সিরিয়ালপ্রিয় স্ত্রী মায়ার কুসংস্কারে তাবিজ-কবচে ঢাকা স্বামী রজত বিজ্ঞান ও তর্ক বিষয়টা ভুলেই গিয়েছে। আর আটপৌরে স্বাভাবিক চাকুরে তরুণ অনুপম আটকে পড়েছে বিপ্লব বিদ্রোহ করা বউ রিয়া ও শ্বশুর-শাশুড়ির পাল্লায়। দু’জনেই বউদের মিথ্যে কথা বলে ভুবনেশ্বর বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান করে। নানা ঘটনা অঘটনের পর তাঁদের ঠাঁই হয় আলহাবিবি নামে এক ডাকাত দলের সঙ্গে। তারাপীঠগামী বসকে কিডন্যাপ করে ডাকাত সর্দার বুলেট সিং কাগজে হেডলাইন হতে চায়। কারণ বিয়ের রাতেই নতুন বউ মালতী তাঁকে জানিয়েছে “সত্যিকারের পুরুষ হতে পারলেই আমি তোমার বউ হব।”
গল্পের এই জটিলতা না থাকলে সিচ্যুয়েশন তৈরি হয় না। সুতরাং বুদ্ধি সরিয়ে নির্বোধ নির্মল আনন্দের জন্য ‘বিবাহ অভিযান’ একবার দেখে নেওয়ার যায়। বিশেষ করে ঘটনা ও পরিবেশের বিন্যাসের জন্য। অনির্বাণ গল্পে ঢুকে পড়ার পর তিনিই প্রায় পুরো সিন হাতের মুঠোয় ধরে নেন। গ্রাম্য এবং ভুল উচ্চারণের বাংলা বলা সত্যিই দারুণ মজার। এমন ভেজালহীন পরিচ্ছন্ন কমেডি সত্যিই অতি সম্প্রতি বাংলায় খুব একটা নজরে পড়েনি। বিরসা দাশগুপ্ত তাঁর এই দশ নম্বর ছবিতে প্রমাণ করে দিলেন, পাতি রিভেঞ্জ অ্যাকশন নয়, তাঁর হাতে আরও অনেক কিছুই খুলবে ভাল। অভিনয়ে অনির্বাণের কথা তো আগেই বলেছি। অঙ্কুশ কিন্তু প্রমাণ করে দিলেন রোম্যান্টিক নায়কের চেয়ে কমেডিয়ান হিসেবে তিনি কোনও অংশে পিছিয়ে নেই। রুদ্রনীল তাঁর নিজস্ব ভঙ্গিতে লজিকহীন হয়েও লজিকের শ্রাদ্ধ করে ছেড়েছেন। রুদ্রর গল্পের আইডিয়ার চেয়ের হাসির মুহূর্তগুলো তৈরির কাজ বেশি ভাল লাগে। সোহিনী, নুসরত এবং প্রিয়াঙ্কা ছবির গতির সঙ্গেই হেঁটেছেন। একটু জোরেই হেঁটেছেন পুলিশ কমিশনারের চরিত্রে অম্বরীশ ভট্টাচার্য। কমেডির মোড়কে ওইটুকু ঝাঁজ দর্শক সহ্য করবেন।
[ আরও পড়ুন: চিত্রনাট্যের অতিনাটকীয়তায় তেমন উপভোগ্য হল না ‘শেষ থেকে শুরু’ ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.