চারুবাক: জয়দীপ মুখোপাধ্য়ায়ের এই ছবির নামকরণ সত্যিই সার্থক। প্রথম দৃশ্য থেকেই টান টান উত্তেজনা, রহস্যঘেরা ঘটনা, খাদ্যরসিক একেন বাবুর রসিকতা, হাসি মজা এবং জয়সলমীরের জাদুঘর থেকে একটি কোটি টাকা মূল্যের ষাঁড়ের মূর্তি চুরি হওয়ার ঘটনা নিয়ে চিত্রনাট্যকার পদ্মনাভ দাশগুপ্ত রহস্যের যে জটিল জাল বুনেছেন, তাকে আরও মনোগ্রাহী করে সাজিয়েছেন সম্পাদক রবিরঞ্জন মৈত্র। অধুনা দেখা একাধিক চেনা গোয়েন্দার চাইতে একেনবাবু সত্যিই মাগজাস্ত্রের ব্যবহারে সরলীকরণের যেমন কমিক ব্যবহার করেন, তেমনি তীক্ষ্ণ তাঁর অবজারভেশন! একেবারেই লালবাজারের গোয়েন্দা চেহারা তাঁর নয়, তিনি তো বলেনই মগজ মাথায়, উদরে নয়।
ছবির শুরুতেই দেখান হয় রাজস্থানের মাংলেওয়াল নামের পাকিস্তান সীমান্ত ঘেঁষা শহরে কোটি টাকায় একটি অ্যান্টিক মূর্তি রাতের অন্ধকারে হাত বদল হল। ভাগের বখরা নিয়ে ঝামেলা হতেই একজন খুন হয়ে যায়, দেহও পাওয়া যায় না। একেনবাবু যোধপুর হয়ে জয়সলমীরে যাচ্ছিলেন নেহাত ছুটি কাটাতে দুই শাকরেদ বাপি আর প্রনাথকে নিয়ে। “সোনার কেল্লা”র দুর্গ দেখবেন, সত্যজিৎ রায়ের কর্মক্ষেত্র ঘুরে দেখবেন, রাজস্থানি ভাষা শিখবেন, রসিয়ে খাবার খাবেন এটাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু গোয়েন্দা থাকবেন গল্পে অথচ রহস্য, খুন, একটু আধটু মারপিট, দৌড়ঝাঁপ থাকবে না, বা ভিলেনহীন গপ্পো হয় নাকি! সুতরাং ঢেঁকির স্বর্গে গিয়েও ধান ভাঙার কাজের মতো একেন বাবুর ঘাড়ে এসে পড়ে সেই খুন এবং মূর্তি চুরির তদন্তের ভার। তিনিও সহাস্য চিত্তে কাজটি নেনও। আর তিনি যে সরল বুদ্ধি দিয়ে প্যাঁচালো ঘটনার সমাধান করবেনই এটাও নির্ভেজাল সত্যি!
পরিচালক রাজদীপ মুখোপাধ্যায় কৃতিত্ব তিনি খুন এবং মূর্তি পাচারের প্রকৃত সত্যটি বেশ সুন্দর কৌশলে যেমন বিস্তৃত করেছেন অক্সফোর্ড থেকে আসা অধ্যাপক শতদ্রু ঘোষের উপস্থিতি দিয়ে, তেমনি জাদুঘরের প্রধান রাজ্যশ্রী ও সহকর্মীকে রেখে রহস্যটি আরও জমজমাট হয়েছে, ফলে আসল দোষীকে ধরতে একটু বেশিই মগজ খাটাতে হয়েছে একেন বাবুকে। তাঁর রহস্যানুসন্ধান যেমন বিজ্ঞান আশ্রিত, তেমনি বাংলা সংলাপের ব্যবহারে মজাদারও। তিনিই অর্থাৎ অনির্বাণ চক্রবর্তীই ছবির ইউএসপি। হ্যাঁ, সুদীপ মুখোপাধ্যায়, রজতাভ দত্ত, রাজেশ শর্মা, সুহত্রো, সোমক, সন্দিপ্তা সব বাঙালি মিলে জয়সলমীরে গুলজার মন্দ লাগবে না। আর শুধু সোনার কেল্লা তো নয়, যোধপুর সহ আশপাশের একাধিক টুরিস্ট স্পটেও শুটিং করেছেন জয়দীপ। উটের পিঠে চড়ে মরুভূমিতে চেজিং সিনও দেখিয়েছেন পরিচালক। শুভদীপ গুহর আবহ ছবির রহস্যটাকে আরও স্পষ্ট করেছে। ছবির টাইটেল সংটিও মুখে মুখে (সুরকার: অম্লান চক্রবর্তী) ফেরার মতো। তবে হ্যাঁ, এই ছবি দেখতে দেখতে “সোনার কেল্লা” কে মন থেকে সরিয়ে রাখা যাবে না। নির্মাতারা ছবিটি তাই উৎসর্গ করেছেন মহান চলচ্চিত্রকারের উদ্দেশ্যেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.