Advertisement
Advertisement
A Holy conspiracy

গল্পকে ছাপিয়ে নজর কাড়লেন নাসিরুদ্দিন ও সৌমিত্র, পড়ুন ‘আ হোলি কনস্পিরেসি’ ছবির রিভিউ

মুগ্ধ করবেন অভিনেত্রী অমৃতা চট্টোপাধ্যায়ও।

Soumitra Chatterjee, Naseeruddin Shah make this legal drama engaging | Sangbad Pratidin
Published by: Akash Misra
  • Posted:July 30, 2022 9:36 am
  • Updated:July 30, 2022 1:32 pm  

চারুবাক: আমেরিকান নাট্যকার জেরোমে লরেন্স ও রবার্ট লীর লেখা নাটকটির চিত্রায়ন হলিউডে ঘটেছে দুবার। একজন মুক্তচিন্তার মানুষ, মানবিকতার পূজারি উকিল, বিপরীতে দাঁড়িয়ে আরেকজন উকিল – তিনি কিন্তু বাইবেল কথিত বিশ্বাসে অটল এবং চলতি রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত। হলিউড ছবিতে আগের দুবারই উকিল চরিত্রের অভিনেতা স্বীকৃতি পেয়েছেন। প্রথমবার ১৯৬০ সালে স্পেন্সার ট্রেসি, দ্বিতীয়বার ১৯৯০ সালে জর্জ স্কট।

অসাধারণ দক্ষতায় সেই একই কাহিনির শুধু বঙ্গিকরণ নয়, সাম্প্রতিক ভারতীয় রাজনীতির মোড়ক দিয়ে ” আ হোলি কনস্পিরেসি” নামে শৈবাল মিত্র যে ছবিটি বানিয়েছেন, সেখানেও ভারতের দুই দুঁদে অভিনেতা সৌমিত্র (Soumitra Chatterjee) এবং নাসিরউদ্দিনকে (Naseeruddin Shah) এক কথায় লড়িয়ে দিয়েছেন। যে কয়েকবার একই ফ্রেমে দুজনে ধরা পড়েছেন, দর্শক কার দিকে নজর দেবেন সেটা স্থির করতেই অন্তত দুবার ছবিটি দেখতে হবে! মাঝে মাঝে নাসিরের আগুন ঝরানো লুক, আর প্রায় হারতে বসা সৌমিত্রর ক্লান্ত অবসন্ন ক্লোজআপ দেখলে বিশ্বাস করতেই হবে একে অন্যকে টেক্কা দিতে কেউই পিছপা হননি। ফলে দৃশ্যগুলি একেবারে জমে ক্ষীর, এবং অভিনয় শিক্ষার্থীর কাছে এক বর্ণ পরিচয় হয়ে ওঠে! প্রাণবন্ত, তেজী ও বুদ্ধি মাখানো অভিনয়ের এমন যুগলবন্দি বাংলা সিনেমায় খুব কমই দেখেছি! একজন হিন্দি – ইংরেজিতে (নাসির), অন্যজন বাংলা – ইংরেজিতে টক্কর দিয়ে দর্শকের চোখ ও মন ভরিয়ে দিয়েছেন।

Advertisement

[আরও পড়ুন উচ্চাকাঙ্ক্ষাই কি বদলে দিচ্ছে সম্পর্কের সমীকরণ? ‘সহবাসে’ ছবিতে মিলল উত্তর, পড়ুন রিভিউ ]

 তবে ছবির গল্প যেন ওদের অভিনয়ের জোরে ঢাকা পড়ে যায়নি। সে রকমটা অবশ্য পরিচালক শৈবাল ঘটতে দেননি। বার বার মনে করিয়ে দিয়েছেন সারা দেশ জুড়ে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিকরা ইতিহাস – বিজ্ঞানকে সরিয়ে বৈদিক ভাবনার সময়কে ফিরিয়ে আনতে চাইছে ।

স্কুলের কিশোর ছাত্রদের ডারউইনের বিবর্তনবাদের পরিবর্তে পড়াতে চাইছে উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণ্যবাদীর ভাবনাপ্রসুত এক নব ইতিহাস ও বিজ্ঞান। আর এটা নিয়েই এক তরুণ শিক্ষকের সঙ্গে বিরোধ খ্রিস্টিয়ান স্কুলের কর্তা, অঞ্চল প্রধান, গির্জার পাদরির। তরুণ শিক্ষককে জেলে পাঠানো হয় সাজানো অপরাধে। সেই মামলার আইনজীবী হয়ে আদালত ঘরে উপস্থিত হন অন্তন ডিসুজা (গোয়ানিজ খ্রিস্টিয়ান) এবং রেভারেন্ড বসন্ত (বাঙালি খ্রিস্টিয়ান) নামের দুই মহারথী! শৈবালের চিত্রনাট্য মফস্বল শহরের পরিবেশ, কূট রাজনীতির অন্দরমহলকে শুধু আঁচড় দিয়েই বুঝিয়ে দিয়েছেন।

তাঁর নির্দেশনার কাজ বেশ পটু হাতেই! নাটক তৈরি এবং তাকে ভেঙে ফেলার কাজটি সুচারুভাবে সম্পন্ন করেছেন শৈবাল। ঘটনার শেষটুকু বিয়োগান্তক হলেও, আশার আলোর আভাস থেকেই যায়। এটাই তো একজন বিচক্ষণ ও সমাজ সচেতন পরিচালকের কাছ থেকে প্রত্যাশা। লিওনার্ড কোহেনের গান দিয়ে ছবির সমাপ্তি তাই জানিয়ে দেয় সব শেষ হয়নি এখনও, হবেও না।

শুধু দুই জাত অভিনেতার উল্লেখ করলে অন্যায় হবে, কারণ সাংবাদিক চরিত্রে কৌশিক সেন, রেশমীর চরিত্রে অমৃতা চট্টোপাধ্যায়, সাঁওতাল তরুণ শিক্ষক হেমন্তের চরিত্র স্মরণ চট্টোপাধ্যায়, বিজয়ার চরিত্র অনসূয়া মজুমদার, সহকারি উকিলের চরিত্রে বিপ্লব দাশগুপ্ত – প্রত্যেকেই স্বচ্ছন্দ, স্বাভাবিক, সাবলীল। একটু বাড়তি নম্বর পাবে অমৃতা – কারণ দুটি ইমোশনাল দৃশ্যে সত্যিই দারুন অভিনয় করেছেন, বিশেষ করে সৌমিত্রর মুখোমুখি হয়ে! দুর্ভাগ্য আমাদের, এমন একটি অত্যন্ত জরুরি ভাবনার ছবি কত দর্শক পাবে সেটা নিয়ে চিন্তা করতে হয় নির্মাতাদের।

[আরও পড়ুন: শাশ্বতর হাত ধরে ‘অচেনা উত্তম’ ছবিতে মহানায়ককে কতটা ফিরে পেলেন দর্শক? পড়ুন রিভিউ ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement