Advertisement
Advertisement

Breaking News

Kaun Pravin Tambe?

ক্রিকেটের প্রতি পবিত্র ভালবাসাই ‘কৌন প্রবীণ তাম্বে’র নায়ক, তাম্বের লড়াই মন জয় করল দর্শকের?

তথাকথিত বীরগাথা নয়, ব্যর্থতাই এছবির ব্যাকবোন।

shreyas-talpades-sports-film-kaun-pravin-tambe-is-a real life emotional-drama | Sangbad Pratidin
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:April 2, 2022 7:35 pm
  • Updated:April 2, 2022 10:04 pm  

কিশোর ঘোষ: ‘কৌন প্রবীণ তাম্বে’তে একটা ‘পয়সা উসুল’ দৃশ্য আছে। সিনেমা যার জন্য দেখা, সেই সিনেম্যাটিক দৃশ্য। যেখানে সংলাপ লাগেনি, কারণ চলমান চিত্রই সংলাপ হয়ে উঠেছে। ওই দৃশ্যে বারবার রঞ্জি খেলার স্বপ্ন চুরমার হয়ে যাওয়া তাম্বে রূপী শ্রেয়স তলপড়ে (Shreyas Talpade) অস্থির মধ্যরাতে বিছানা ছেড়ে চলে যায় তাঁর প্রিয় বাইশগজের কাছে! শূন্য সবুজ মাঠের নির্জন পিচে শুয়ে পড়ে সে। হাউহাউ করে কাঁদতে থাকে। হাওয়ায় ওড়ে তাম্বের চুল। ঝড়ের গতির হাওয়া! যে ঝড় ক্রিকেটকে ভালবাসার ‘দোষে’ তাম্বের জীবনে অব্যাহত তখনও। ওই দৃশ্যে খেলার সঙ্গে ওই হার না মানা খেলোয়াড়ের সম্পর্ককে অনুভব করে দর্শক। বুঝতে পারে তাম্বের অভিমান আর ভালবাসার যুদ্ধের আশ্চর্য পবিত্রতা।

এইখানেই দর্শকের মন জিতে নিয়েছে জয়প্রদ দেশাই পরিচালিত ‘কৌন প্রবীণ তাম্বে? (Kaun PravinTambe?)। কাহিনির আবেগই মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। দর্শককে নড়তে দেয়নি সিনেমা ছেড়ে। যাঁরা জানতেন না প্রবীণ কৌন বা কে, তাঁরা জেনেছেন এবং এই ‘অনামি’ ক্রিকেটারকে ভালবেসে ফেলেছেন, যাঁরা জানতেন তাঁরা আরও প্রেমে পড়েছেন।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ঋষি-নীতুর বিয়ের স্মৃতি ফেরাবেন রণবীর কাপুর , পৈতৃক বাড়িতে আলিয়ার সঙ্গে মালাবদল]

এ যদিও নতুন কিছু না, কারণ আবেগই অধিকাংশ বলি ছবির ব্যাকবোন। ওই জিনিস বেঁচেই ইন্ডাস্ট্রি বড়লোক। বলি আবেগে চালিত হয়ে এদেশের তরুণরা গরিব বাপ-মাকে চাপে ফেলে বাইক কেনে, সানগ্লাস কেনে, পাড়ার হিরো হয়। কিন্তু তাম্বের আবেগ আলাদা। এই আবেগ বারপুজো টাইপ! ভেবে দেখেছেন কখনও ফুটবল মাঠের গোলপোস্টের বার কেমন ধারা দেবতা! বেদে, পুরাণে বার ঠাকুরের উল্লেখ থাকার কথা না, নেইও। তবু বার পুজো হয়। গোলপোস্টের প্রণাম করে খেলা শুরু করেন ভাষ্কর গাঙ্গুলির উত্তরসূরিরা। কারণ ফুটবলের প্রতি ভালবাসা ও শ্রদ্ধা। তেমনই ক্রিকেটের প্রতি নিখাদ ভালবাসা তথা শ্রদ্ধাই প্রবীণ তাম্বের জীবনের আদত গল্প।

গল্পের অধিকাংশই হারানোর, ক্রমাগত ব্যর্থতার। যদিও ছোট থেকেই ফাস্ট বোলার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন প্রবীণ। প্রতিভার প্রমাণও রেখেছিলেন। মিডিয়াম পেসের সঙ্গে প্রয়োজনের ব্যাটটাও করতে পারতেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক হার্ডেল টপকে পেশাদার ক্রিকেটার। ঘর ভরতি ট্রফি। কিন্তু কিছুতেই স্বপ্ন সত্যি হচ্ছিল না। মুম্বইয়ের হয়ে রঞ্জি খেলার স্বপ্ন অধরাই থেকে যাচ্ছিল। অথচ ওরিয়েন্ট শিপিংয়ের মতো দলে খেলছেন, মুম্বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টে ভাল পারফর্ম করছেন। কিন্তু রঞ্জি টিমে ঠাঁই হচ্ছে কই! অথচ প্রত্যেকবারই সম্ভাব্য রঞ্জি দলে নাম ওঠে তাঁর। বস্তুত তাম্বের বয়স তাঁর জন্ম তারিখের দিনে বাড়ে না, বাড়ে যেদিন রঞ্জি দলের তালিকা প্রকাশিত হয় সংবাদপত্রে।

[আরও পড়ুন: ‘ভোট দিলেই নগ্ন হব’, দর্শকদের নজর কাড়তে নতুন ছক পুনম পাণ্ডের!]

নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। পরিবার চায় ক্রিকেটের ভূত ঝেড়ে উপার্জন করুক ছেলে। শুরুতে ক্রিকেট থেকে উপার্জন করলেও বাইশগজের ভালবাসাকে বাঁচাতে ওয়েটারের কাজও করতে হয় তাম্বেকে। এর মধ্যে বিয়ে। দুই সন্তানের বাপ। ঘটনাক্রমে ওরিয়েন্ট শিপিং দলের কোচের পরামর্শে মিডিয়াম পেশার তাম্বে লেগস্পিন শুরু করেন। এরপরেই বাঁক খাওয়ানো দুরন্ত লেগ স্পিনের মতো মোড় ঘুরে যায় তাম্বের জীবনে। আইপিএল-এ রাজস্থান রয়েলস দলে ডাক পান। যা প্রায় সকলেরই জানা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রঞ্জি দলে জায়গা হয়? একসঙ্গে ঘর আর বাইশ গজ কীভাবে সামলান তাম্বে?

উত্তর পেতে জয়প্রদ দেশাই পরিচালিত ‘কৌন প্রবীণ তাম্বে’ দেখা উচিত আমাদের। এই জন্য নয় যে এ জয়প্রদর ছবি অসাধারণ, বরং এইজন্যে যে ছকে বাঁধা বীরগাথা বোনেননি পরিচালক। যাঁরা ঝকঝকে ‘ধোনি’, ‘৮৩’ কিংবা ‘দঙ্গল’ দেখেছেন, তাঁদের খানিক হতাশই করবেন হয়তো জয়প্রদ। আসলে ব্যর্থতাই যে এ ছবির হিরো, যা প্রবীণ তাম্বের জীবনের কঠিন সত্য। সেই তাম্বের সঙ্গে ন্যায় করেছেন পরিচালক।

তাম্বের চরিত্রে মাননসই মুম্বইকর শ্রেয়স তলপাড়ে। ছবিতে রয়েছে প্রচুর মারাঠি ভাষার সংলাপ। সেখানে ভালই করেন তিনি। তবে এই ছবিতে সুযোগ পেয়েও ‘ইকবাল’ই তাঁর সেরা কাজ। কোচের চরিত্রে আশিস বিদ্যার্থী মানানসই, দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র তথা সিনেমার কথক ক্রীড়া সাংবাদিকের চরিত্রে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ঠিকঠাক।

[আরও পড়ুন: ‘পুষ্পা’ খ্যাত রশ্মিকা এবার রণবীর কাপুরের নায়িকা, কোন ছবিতে জুটি বাঁধলেন দুই তারকা?]

সব মিলিয়ে মাঝারি মানের অভিনয় এই ছবিকে উপযুক্ত উড়ান দিল না বলেই মনে হয় (তার মধ্যেই নজর কাড়েন তাম্বের স্ত্রীর ভৃমিকায় অঞ্জলি পাটিল)। তার জন্য দায়ী ছবির চিত্রনাট্যের স্লথতাও এবং পরিচালনার কতিপয় ত্রুটি। তবু কৌন প্রবীণ তাম্বে অনুপ্রাণিত করবে বহু মানুষকে। এ ছবির পবিত্র আবেগ, তাম্বের ক্রিকেটের প্রতি নিখাদ ভালবাসাকে অস্বীকার করা কঠিন। আসলে ভালবাসার যুদ্ধে হার-জিত বলে কিছু হয় না। সেই কারণেই তো যুক্তিহীন বারপুজো সম্ভব। সেই কারণেই তো গোলপোস্টে প্রণাম সেরে তবেই খেলা শুরু করেন ময়দানের জনৈক তরুণ গোলকিপার। আর প্রবীণ তাম্বে অস্থির মধ্যরাতে প্রিয় বাইশ গজের কাছে সেই প্রশ্নের উত্তর চান, যা তিনি কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিলেন না।

সিনেমা – কৌন হ্যায় প্রবীণ তাম্বে
অভিনয়ে – শ্রেয়স তলপড়ে, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, আশিস বিদ্যার্থী, অঞ্জলি পাটিল প্রমুখ।
পরিচালনায় – জয়প্রদ দেশাই

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement