চারুবাক: দেশের চারদিকে সমস্যা অন্তহীন। সব চাইতে বড় সমস্যা চাকরি হারানো, নতুন কোনও চাকরির পথ খুঁজে না পাওয়া! অথচ এখন নাকি বিশ্বের বাজার আমাদের সামনে খোলা। বিশ্বায়নের ফলে সারা পৃথিবী এখন সবার জন্য উন্মুক্ত। সত্যিই কি বাস্তব তাই? এ রাজ্যে নতুন কোনও শিল্প আসছে না, পুরনো কলকারখানা একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নিম্নবিত্ত মানুষ গৃহহারা হচ্ছে প্রতিদিন। অবশ্যই এই ঘটনা আজকের নতুন কিছু নয়, ঘটে চলেছে বহু বছর হল। দেশের প্রধানমন্ত্রী বুলেট ট্রেনের ঘোষণা করছেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শিল্প সম্মেলনের ঘোষণা করছেন। কিন্তু বাস্তব অবস্থার পরিবর্তন তো দূরের কথা, হতাশা আর অভাবে ডুবছে সাধারণ মানুষ।
না, এই অবস্থা নিয়ে তরুণ পরিচালক জয়দীপ মুখোপাধ্যায় কোনও নিরাশার কথা শেষ পর্যন্ত বলেননি তাঁর প্রথম ও নতুন ছবি “আকাশ অংশত মেঘলা”য়। তিনি শুধু বাস্তব চিত্রটি তুলে এনেছেন দর্শকের সামনে, যা আজকের প্রায় কোনও পরিচালকের ছবিতে দেখা যায় না। সকলেই নিশ্চিত ব্যবসার আশায় বাস্তব থেকে চোখ ঘুরিয়ে গোয়েন্দা গপ্পো, ছেঁদো সংসারিক পাঁচালী, হাস্যকর অ্যাডভেঞ্চার কাহিনীর আড়ালে নিজেদের কালো মুখ ঢাকতে ব্যস্ত। বাস্তবকে অস্বীকার করলেই যেন বাস্তব আর থাকে না। জয়দীপ সেই একঘেয়ে পুরনো বাস্তবকে নিয়েই গল্প গেঁথে একটি সুন্দর নিটোল, অতিনাটকিয়তাহীন ছবি তৈরি করেছেন, যেখানে দর্শক শহুরে ঝলকানির তলায় অন্য এক শহরের অন্ধকার রূপটি দেখতে পাবে। কিঞ্চিৎ ভাবতেও পারে।
ভাবনার রসদ তিনি রেখেওছেন। এমন করুণ অবস্থার জন্য কোনও দেউলিয়া রাজনীতি ও নেতারা দায়ী তার ইঙ্গিতও রেখেছেন তিনি। ছবির দুই নায়ক – একজন মাঝবয়সী রাসু (রুদ্রনীল), যে লকডাউনের কারণে কারখানার চাকরি হারিয়ে মাঝারি এক নেতার (কৌশিক কর) সাহায্যে তেলেভাজার দোকান দিয়ে কোনওমতে দিন কাটাচ্ছে। অথচ সে স্ত্রীকে (অঙ্কিতা) নিয়ে গ্রাম থেকে শহরে এসেছিল একবুক স্বপ্ন নিয়ে। দ্বিতীয় নায়ক শিক্ষিত বেকার যুবক (রাহুল), বাবা বয়স্ক। বাড়িতে অবিবাহিত দিদি(দামিনী), ছোট বোন। সংসার চলে টিউশনি করে। এক প্রেমিকা (বাসবদত্তা) আছে, তাদের অবস্থাও সঙ্গীন,বাড়ি থেকে উৎখাতের মুখে। তিনটি কাহিনীর বেশ মসৃণ এক গাথা তৈরি করেছেন জয়দীপ, যেখানে জীবন ও বাস্তব এক রেখায় চলেছে, ব্যালেন্স হারায়নি কোথাও। ন্যারেটিভ ভাঙার ব্যাপারটাও কোনওভাবেই জটিল নয়। অতীত বর্তমান এমনভাবে পাশাপাশি রয়েছে যে সামাজিক অবস্থার ধারাবাহিকতা স্পষ্ট বোঝা যায়। জয়দীপ জানিয়ে এবং বুঝিয়ে দিলেন দেশের আকাশ অংশত কেনও পুরো মেঘে ঢাকা থাকলেও, সেই মেঘের আড়ালে সূর্যের আলো আছেই। ছবির শেষ গানটি সেই প্রত্যয়ের কথাই শুনিয়ে দেয়। এই ছবির চিত্রগ্রহণ, আবহর ব্যবহার খুবই সাধারণ মানের। বিষয়কে উজ্জ্বল করে না, বরং ধূসর বিষণ্ণ এক সুরের প্রলেপ দেয়। আর রুদ্রনীল, রাহুল, অঙ্কিতা, শংকর, দামিনী, কৌশিক, দেবদূত সক্কলেই চরিত্রকে মাথায় ও মনে রেখে যথাযথ অভিনয় করেছেন। তাঁরাই জয়দীপের আসল হাতিয়ার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.