Advertisement
Advertisement

Breaking News

Karagar 2

প্রথম পর্বে ছিল চমক, দ্বিতীয় পর্বে কি প্রত্যাশা পূরণ করতে পারল কারাগার ২? পড়ুন রিভিউ

কেমন চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত সিরিজটির অন্তিম পর্ব?

Review of web series Karagar 2। Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:December 22, 2022 8:02 pm
  • Updated:December 23, 2022 6:26 pm  

বিশ্বদীপ দে: চঞ্চল চৌধুরী (Chanchal Chowdhury)। বিখ্যাত পাখার বিজ্ঞাপন অনুসরণ করে বলা যায় এই মুহূর্তে যাঁর ‘সির্ফ নাম হি কাফি হ্যায়’। গত মাসে নন্দন চত্বরে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র উৎসবে তাঁর ‘হাওয়া’ ছবিটি দেখতে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়েও মানুষের শান্ত প্রতীক্ষা সকলেরই মনে আছে। ফলে তাঁর নতুন কাজ দেখতে আগ্রহ যে তুঙ্গে পৌঁছবে তা তো স্বাভাবিকই। তার উপর ‘কারাগার’ (Karagar) ওয়েব সিরিজকে ঘিরে বাড়তি আগ্রহও রয়েছে ব্যাপক ভাবে। প্রথম পর্বের টানটান রোমাঞ্চ শেষ হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছিল অপেক্ষা। অবশেষে বৃহস্পতিবার মুক্তি পেয়েছে ‘কারাগার ২’। ওটিটি মঞ্চের দর্শকদের মধ্যে কৌতূহল তুঙ্গে। কিন্তু প্রত্যাশা পূরণ করতে পারল কি সৈয়দ আহমেদ শওকি পরিচালিত সিরিজটি?

আকাশনগর জেলে আচমকাই ১৪৫ নম্বর সেলে আবির্ভূত হন এক আগন্তুক। তাঁর দাবি, ২৫০ বছর ধরেই তিনি জেলবন্দি! সেই পলাশীর যুদ্ধের সময় থেকেই! অপরাধ মীর জাফরের হত্যা! এভাবেই শুরু হয়েছিল গত আগস্টে মুক্তিপ্রাপ্ত সিরিজটির প্রথম পর্ব। কিন্তু গল্প যতই এগিয়েছে, দর্শকের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় রহস্যময় চরিত্রটি এই জেলে এসেছেন বিশেষ উদ্দেশ্যে। কী সেই উদ্দেশ্য? প্রথম পর্বের একেবারে শেষ এপিসোডে মাহা অর্থাৎ তাসনিয়া ফারিন জানতে পারেন চঞ্চল চৌধুরীর চরিত্রটির আসল নাম ডেভিড অ্যাডাম। এতক্ষণ তাকে মূক ও বধির বলে মনে হলেও তিনি আসলে কথা বলতে ও শুনতে দিব্যি পারেন।

Advertisement

Karagar web series catches attention

[আরও পড়ুন: ধর্মীয় পরিচয় লুকিয়ে বিয়ে করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ, নয়া আইন হরিয়ানায়]

আর এই জায়গা থেকেই শুরু নতুন পর্ব। জানা যায়, নির্দিষ্ট মিশনেই কারাগারে আগমন ডেভিডের। তবে দর্শকের মূল আগ্রহ চঞ্চল অভিনীত আগন্তুকের চরিত্রের দিকে থাকলেও বেশ কয়েকটি সাব প্লটও ছিল সিরিজে। সেগুলিকে ঘিরেও আগ্রহ ছিল। জেলার মোস্তাক থেকে মাহা নামের এক অন্তঃসত্ত্বা তরুণী, সংকটে ছিল অন্যান্য চরিত্ররাও। ফলে জট ভালমতোই পেকে গিয়েছিল। যেগুলি শওকি কীভাবে ছাড়ান, আগ্রহ ছিল সেদিকেও। আর এখানেই যেন হতাশ হতে হয় দর্শক হিসেবে। প্রথম পর্ব যেখানে আদ্যন্ত থ্রিলারধর্মী, সেখানে দ্বিতীয় পর্বে রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তা অনেকটাই কম। খামতি ধরা পড়ে চিত্রনাট্যে। আসলে চঞ্চল তথা ডেভিডকে জায়গা করে দিতে গিয়ে সাব প্লটগুলির প্রতি আর ততটা যত্ন নেওয়া সম্ভব হয়নি পরিচালকের পক্ষে। তাই শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশা পূরণ হতে হতেও হয় না।

মাহার চরিত্রে অসামান্য অভিনয় করেছেন তাসনিয়া ফারিন। প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বেও তিনি সাবলীল। কিন্তু তাঁর গল্পটি শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশিত ‘ইমপ্যাক্ট’ তৈরি করতে পারে না। একই ভাবে ইন্তেখাব দিনার অভিনীত মোস্তাক আহমেদের ছেলেকে জেল থেকে বের করে আনার বিষয়টি নিয়েও সাসপেন্স ছিল। সেই গল্পও শেষ করা হয়েছে কোনওমতে। সবথেকে অবাক লাগে মাহাকে চঞ্চল চৌধুরীর সামনে নিয়ে এসেছিলেন যে অফিসার, তাঁকে কোনও রকম গুরুত্বই দেওয়া হল না। কেন তিনি সারাক্ষণ তাঁর ঘরের দৃশ্য ফোনের সিসিটিভিতে দেখতেন, সেই প্রশ্নের উত্তর মেলে না।

Chanchal Chowdhury

[আরও পড়ুন: ইডির হয়ে সাফাই দিতে গিয়ে অর্পিতাকে ‘মন্ত্রী’ বানালেন নির্মলা! রাজ্যসভায় বিতর্ক]

আগেই বলা হয়েছে, পরিচালকের মূল লক্ষ্যই ছিল ডেভিডের ক্রাইসিসকে ফুটিয়ে তোলা। সেখানেও একটা সমস্যা আছে। কয়েকটি এপিসোড পরেই কিন্তু মোটামুটি আন্দাজ করা যাচ্ছিল, ক্লাইম্যাক্স নিয়ে। তাছাড়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এই সিরিজের চালচিত্র হিসেবে উপস্থিত থাকলেও সেই টালমাটাল সময়ের প্রোজেকশন আরও কিছুটা থাকা দরকার ছিল। কোথায় যেন সেই সময়ের বিপণ্ণতাকে ছুঁতে ছুঁতেও পুরোটা স্পর্শ করা যায় না।

তাহলে কি ‘কারাগার ২’ সিরিজটি দর্শকের মন জিততে পারেনি? তা কিন্তু নয়। এপ্রসঙ্গে বলাই যায়, থ্রিলার হিসেবে হয়তো প্রথম পর্বের উত্তেজনা অনুপস্থিত। তবুও মাতৃত্বের আখ্যান হিসেবে এই সিরিজ এক মায়া তৈরি করে। কেবল চঞ্চল চৌধুরীর উপাখ্যানই নয়, আরও কয়েকটি মা ও সন্তানের সম্পর্কের খতিয়ানও বারবার ফুটে উঠেছে। যার পিছনে আসল জোরের জায়গাটা হল অভিনয়। প্রত্যেকের অভিনয় অসাধারণ। তাসনিয়া ফারিন, ইন্তেখাব দিনারের কথা আগেই বলা হয়েছে। আলাদা করে বলতেই হয় রাজু চরিত্রটির কথা। অসাধারণ অভিনয় করেছেন ওই চরিত্রের অভিনেতা।

এবং চঞ্চল চৌধুরী। তাঁর কথা আলাদা করে আর কীই বা বলার! প্রথম পর্বে কেবল চোখের ভাষা ছিল তাঁর ‘অস্ত্র’। এই পর্বে তাঁর মুখে সংলাপ রয়েছে। কিন্তু চোখের আবেদনকে তিনি তা বলে পরিহার করেননি। মুখের পেশিকেও অভিনয়ে যেভাবে কাজে লাগান চঞ্চল তা বারবার তাঁর অভিনয়ের ‘রেঞ্জ’কে তুলে ধরে। দুই বাংলা জুড়ে তাঁর বাড়তে থাকা জনপ্রিয়তা যে অহেতুক নয়, তা আবারও পরিষ্কার হয়ে যায়।

ছবিতে ক্যামেরার ব্যবহার কিংবা আবহসংগীত- সবই অনবদ্য। ভাল লাগে (সামান্য সময়ের জন্য হলেও) বাংলাদেশের আদি ও অকৃত্রিম গ্রামবাংলার চোখজুড়নো দৃশ্য। সব মিলিয়ে আদ্যন্ত বাঙালিয়ানার ভরপুর ‘কারাগার’। প্রথম পর্বের প্রত্যাশা পূরণ না করেও শেষ পর্যন্ত এর আবেগময় কাহিনির সামনে দাঁড়িয়ে দর্শক হিসেবে প্রাপ্তির ভাঁড়ারে অনেক কিছুই যোগ হয়। অহেতুক যৌনতার নামে সুড়সুড়ি এবং গালাগালির অনর্থক প্রয়োগকে বাদ দিয়েও যে চমৎকার সিরিজ হতে পারে, নিঃসন্দেহে তার উদাহরণ হয়ে থাকবে সৈয়দ আহমেদ শওকির এই সিরিজ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement