চারুবাক: অতীত প্রজন্মের সঙ্গে আগামী প্রজন্মের পার্থক্য তো থাকবেই। এমনকী, পুরনোদের সঙ্গে বর্তমানে সদ্য গোঁফ গজানো প্রজন্মের বিরোধ-সংকট-আকাঙ্খাও নতুন সমস্যা নয়। এই সমস্যা চিরকালের। এবং সুদূর ভবিষ্যতে থাকবে। সেদিক থেকে মৈনাক ভৌমিক ও তাঁর ছেলেদের তৈরি নতুন ছবি ‘জেনারেশন আমি’ বিষয়ের দিক থেকে অভিনব কিছু নয়। তপন সিংহ ‘আপনজন’ এবং ‘অসময়’ ছবি দু’টিতে প্রজন্ম বিরোধের যে বিবরণ দিয়ে গেছেন তাকে ডিঙিয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়।
আজকের নতুনতম প্রজন্ম বিশ্বায়নের ফলে অনেক বেশি খোলা চোখের তো বটেই, খোলা মনেরও। তাদের বিরোধ অনিবার্য। তার উপর রয়েছে অর্থনৈতি স্বাধীনতার করণে স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ পর্ব। বাবা মায়ের ডিভোর্স সন্তানের (একমাত্র সন্তান হলে তো বটেই) মনের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করে বইকি। এই প্রজন্ম কৈশোর ছাড়িয়ে তারুণ্যে পা ফেলার আগেই গুগল-ফেসবুক-টুইটার-ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে জীবনের জটিলতার অলিগলি জেনে ফেলে বইকি। তার উপর সন্তান যদি হয় সংস্কৃতিমনস্ক, গান পাগল কিংবা নম্র স্বভাবের, তবে বাবা মায়েদের অতিরিক্ত শাসন তখন তার শাস্তিই মনে হয়। অথচ বাবা-মা মনেপ্রাণেই চান সন্তানকে একটি স্বচ্ছ্বল সুখের জীবনের জন্য তৈরি করে দিতে। এমন পরিস্থিতিতে ছেলে যদি চায় আইআইটির পাশাপাশি গানওয়ালা হতে, বিরোধ বাধে তখনই।
[ শুধু মণ্ডপে নয়, পুজোয় ছোটদের দেখিয়ে আনতে পারেন ‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’ ]
মৈনাকদের চিত্রনাট্য অপু আর দুর্গা নামের ভাইবোনকে নিয়ে। দুর্গা বিচ্ছেদ হওয়া বাবা মায়ের সন্তান। ডিপ্রেশনের রোগী। আর খুড়তুতো ছোট ভাই অপুর স্বপ্ন গান গাওয়া। বাবা মায়ের অতিরিক্ত শাসনে তার স্যান্ডুইচ অবস্থা। পরিচালক মৈনাক এই প্রজন্মের কাছের জন। তাঁর কলমে ও ক্যামেরায় দুই ভাই বোনের বন্ধুর যেমন জায়গা পেয়েছে তেমনই স্পেস দিয়েছে বাবা মায়ের যুক্তি এবং ভালবাসাকেও। সবটাই বোঝাবুঝির ব্যাপার আর কি। ঝরঝরে আজকের কথ্যভাষার সংলাপ। গান, দৃশ্যের দ্রতলয়ের বিন্যাসে ছবিটিতে সাজিয়েছেন ভালই। এই প্রজন্মের মানসিক বিন্যাসটিও ধরেছেন সুন্দর। বাড়ির পরিবেশ, বন্ধুদের লুকনো আড্ডা, জমাটি খুনসুটি বা ভাইবোনের একে অপরকে বোঝার পর্বগুলো বেশ যত্ন করেই তৈরি এবং বাস্তবও। অভিনয়ে প্রধান চরিত্রটি শান্তিলাল (বাবা), অপরাজিতা (মা), ঋতব্রত (অপু) ও দুর্গা (সৌরসেনী) সকলেই চোখ কাড়েন। বিশেষ করে ঋতব্রতকে মনে হয়েছে অভিনয়ের কালিপটকা যেন। সৌরসেনীও তাঁর অভিনয়ের ছন্নছাড়া ভাবটিতে ডিপ্রেশনের চেহারাটি তুলে এনেছেন। একটাই প্রশ্ন, কোনও রিহার্সাল ছাড়াই গিটার বাজিয়ে অমন সুন্দর গান গাইল অপু? বাবাকে লুকিয়ে একটু মহড়া দিতেই পারত।
[ কতটা ‘আনলিমিটেড’ ‘হইচই’ করলেন দেব? হলে যাওয়ার আগে জেনে নিন ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.