চারুবাক: ছবির প্রধান নারী চরিত্রের নাম বিজয়া। আর তরুণী নায়িকার নাম দেওয়া হয়েছে উমা। সুতরাং ‘শুভ বিজয়া’ (Subho Bijoya) নামের ছবিটি যে মা দুর্গার একচালায় আটকে থাকা সংসারের মতো সন্তানসন্ততি সমেত একটি সুন্দর পারিবারিক ছবি হবে এটা আশা করতে পারেন দর্শক।
না, পরিচালক রোহন সেন এবং তাঁর চিত্রনাট্যকার সেই একচালাকে ভেঙে আজকের স্টাইলে থিমের ঠাকুরের মতো একটি সংসার দেখিয়েছেন। যেখানে অসুস্থ বিজয়া (চূর্ণী) তাঁর বয়স্ক স্বামীকে (কৌশিক) নিয়ে বিশাল এক প্রাসাদোপম বাড়িতে প্রায় একাই থাকেন। তার একটা বড় কারণ বাড়ির মালিকের দোর্দণ্ড প্রতাপ, ব্যক্তিত্ব এবং যথেষ্ট সম্ভ্রম উদ্রেককারী ব্যবহার। ছোট ভাই (খরাজ) ‘দুনম্বরি কন্ট্রাক্টারি’র ব্যবসা করে, সেজন্য বাড়িছাড়া। ছোট ছেলে ফিল্মে নায়ক হবে বলে মুম্বই পালিয়েছে। বড় ছেলে সুপ্রতিষ্ঠিত এবং বিয়ে করে প্রবাসী। বড় মেয়ের বিয়ে হলেও, এখন সে সিঙ্গল মাদার।
কিন্তু বাড়িতে দুর্গাপুজোর (Durga Puja) সময় প্রায় সকলেই একত্রিত হয়। ছবির শুরুতেই দেখানো হয় পুজো আসন্ন। বাড়ির পুজো দালানে খড়ের কাঠামো তৈরি হচ্ছে। বৃদ্ধা বিজয়া খুবই অসুস্থ। ডাক্তার ক্যানসার সন্দেহে বায়োপসি করতে বলেছেন। স্বামী ফোন করে বড় বউমা উমাকে (কৌশানি) বিজয়ার অসুস্থতার খবর জানিয়ে বলে দেন এবছর পুজো হবে না।
কিন্তু মাতৃহারা উমা সিদ্ধান্ত নেয়, বনেদি বাড়ির এতদিনের পুরনো পুজো বন্ধ করবে না। তাঁরই উদ্যোগে সবাই এসে উপস্থিত হয় বাড়িতে। যতটা না অসুস্থ মাকে দেখার জন্য, তার চাইতে বেশি পরিবারের বার্ষিক মিলনমেলা ও পারিবারিক পুজোয় মেতে উঠতে।
একা উমাই দশভূজা হয়ে পুজোর প্রস্তুতি নেয়। বাকি সবাইও তার সঙ্গে হাত লাগায়। চিত্রনাট্যে টুকরো টুকরো ভাবে ঢুকে পড়ে ছেলে-মেয়ে ও ভাইদের অতীত। পঞ্চমী থেকে দশমী পর্যন্ত ছবির বিস্তার।পুজোর নানা অনুষ্ঠানের মাঝে মাঝে দর্শক মনোরঞ্জনের জন্য ঢুকে পরে “কেন দূরে যাস…” ও “জয় জয় দুর্গা মা…”র মতো গান এবং নাচ। তবে এটা স্বীকার করতেই হবে ছবির কাঠামো ফর্মুলা মেনে ব্যবসায়িক হলেও পরিচ্ছন্ন রুচির ছাপ রয়েছে। আর সেটাই ‘শুভ বিজয়া’র ইউএসপি।
ছবির শিরদাঁড়াটি শক্ত হাতে ধরে রাখার কাজটি করেছেন বাড়ির বর্ষীয়ান দম্পতির চরিত্রে অভিনয় করা কৌশিক (Kaushik Ganguly) ও চূর্ণী গাঙ্গুলি (Churni Ganguly)। তাঁদের স্বাভাবিক স্বচ্ছন্দ অভিনয় চারিত্র দু’টিকে বিশ্বাস্য করে তুলেছে। অন্যদেরও সমান প্রশংসা পাওনা। বিশেষ করে কৌশানি (Koushani Mukherjee) এবং বনি (Bonny Sengupta)। দু’জনেই বাণিজ্যিক ঘরানা ছেড়ে অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছেন। প্রবীণ খরাজ, মানসী সিনহার সঙ্গে সমানতালে অভিনয় করেছেন তরুণের দলে থাকা দেবতনু, সায়নিমা, অমৃতা, শ্বেতা। আর শেষ দৃশ্যে অতিথি শিল্পী হয়ে গায়ক সুরকার অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের বেশ সংযত উপস্থিতি চোখ কাড়ে।
ছবি – শুভ বিজয়া
অভিনয়ে – কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়, বনি সেনগুপ্ত, কৌশানি মুখোপাধ্যায়, খরাজ মুখোপাধ্যায়, মানসী সিনহা, সায়নিমা রায়, অমৃতা দে, শ্বেতা মিশ্র।
পরিচালনায় – রোহন সেন
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.