তপন বকসি, মুম্বই: এই যুদ্ধটা কঠিন ছিল। হিন্দি সিনেমার দেওল পরিবারের নতুন প্রজন্মকে ঠিক কীভাবে বর্তমান সময়ের সামনে আনা যায়? এই কৌতূহলও স্বাভাবিক ছিল, ঠিক কীভাবে প্রজন্মের তৃতীয় প্রতিনিধিকে দেওল পরিবার সামনে আনলেন। কিছুটা আভাস হয়তো সচেতন দর্শক আগেই আন্দাজ করেছিলেন। ধর্মেন্দ্রর নাতি, সানি দেওলের ছেলের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রি-রিলিজ উপস্থিতি থেকে। তবু সিনেমার বড় পর্দায় শেষ হিসাব বুঝে নেওয়াটা শেষমেশ অপেক্ষায় থাকে। আমাদেরও ছিল।
বাবা হিসাবে ধর্মেন্দ্র সানিকে লঞ্চ করেছিলেন রাহুল রাওয়েলের হাতে ছেড়ে দিয়ে। সানি তা করেননি। করেননি, তার কারণ সানি নিজের ছেলেকে লঞ্চ করার আগে দু’দুটো ছবি নিজে পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা পেয়েছিলেন। তাই দেওল পরিবার থেকে তৃতীয় প্রজন্মকে ক্যামেরার সামনে আনার অত্যন্ত দায়িত্বের এবং কাজের ঝুঁকিটাও সানিকেই নিতে হয়েছে।
ছয়ের দশকে ধর্মেন্দ্র যেমন রোম্যান্সের সিনে নূতন, মীনাকুমারী, মালা সিনহা বা সুপ্রিয়া চৌধুরির মনচুরিতে সেটে তৈরি করা ল্যান্ডস্কেপ বা আউটডোরে প্রকৃতি পেয়েছেন, দেওল পরিবারের সেই ধারা এখনও থামেনি। এটা পুরনো হওয়ারও নয়। আটের দশকের শুরুতে সানির ‘বেতাব’-ও তাই। তাই ২০১৯-এ সানির ছেলে করণের ‘পল পল দিল কে পাস’-এর পটভূমিতে মানালির পাহাড় এসেছে স্বাভাবিকভাবে। সিনেমাটোগ্রাফার রাগুল ধারুমন নিজের দায়িত্বে সৎ ছিলেন বোঝা যায়। মানালির পটভূমিতে করণের ট্রেকিং রিসর্টে দিল্লির ট্রাভেল ব্লগ লেখা সাহের শেঠির দেখা হওয়ার দৃশ্যে আট কিম্বা নয়ের দশক হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকে পড়ে। যা চিরায়ত, তা পুরনো হওয়ার নয়। হয়ওনি। সত্য, শিব আর সুন্দরের মেলবন্ধন এখানেও ছিল। হিমালয়ের চড়াই উতরাই থেকে নিচ পর্যন্ত ট্রেকিংয়ের ভয়ঙ্কর সুন্দর অভিজ্ঞতায় করণের বিরুদ্ধাচরণ করে চলা সাহের (কেননা তিনি করণের ট্রেকিং রিসর্টে এক সপ্তাহের ট্রেকিংয়ের জন্য পাঁচ লাখ টাকার চার্জ বিশ্বাস করেন না। লোক ঠকানোর পর্দা নিজের ব্লগে ফাঁস করতে চান। পরে বোঝা যায় করণ ট্রেকারদের দরকারে চপারও আনেন) প্রেমের দীপশিখা জ্বালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।
আর সেখানেই বোঝা যায় করণ ছোটবেলায় অ্যাডভেঞ্চারাস। স্নো লেপার্ডের ছবি পেতে ব্যাকুল ফোটোগ্রাফার মা, আর বাবাকে হিমালয়ের কোলেই হারিয়েছেন। পাহাড়ের পরতে পরতে লুকিয়ে থাকা মোড়ের মতই নিজেদের জীবনের মোড়ের গল্প একজন আরেক জনকে করেছেন। দিল্লি শহরের এক গানের অনুষ্ঠানে গান গাইতে যাওয়া সাহেরকে অপমানিত হতে হয়েছিল নিজেরই প্রেমিকের কাছে। করণের আবেদনে সাহের নিজের প্রিয় একটি গান ধরেন করণ আর গহীন অরণ্যকে সাক্ষী রেখে। খালি গলায়। সেই গানটা হল, ‘পল পল দিল কে পাস’।
হিমালয়ের কোল থেকে নীচে নেমে আসা পর্যন্ত এই আপাত নিরিবিলি, কথা শুষে নেওয়া পরিবেশের সঙ্গে করণের দুখী দুখী নিপাট বেবি বয় ইমেজ চলে যায় বলেই বেশি কিছু ধরা পড়ে না। তার মধ্যেও ধরা পড়ে হাঁটার ধরণ। সবকিছুতেই একমাত্রিক হেসে সংলাপ বলা।
করণ ভাল মানুষ আর নিরীহ। বাস্তব আর সিনেমার পর্দা দু’জায়গাতেই। কিন্ত সিনেমায় অভিনয়ের অভিব্যক্তি না থাকলে সেই ভালমানুষীও অর্থহীন। তাই গল্প সমতলে নেমে আসার পর সেটাই প্রকট হয়ে ওঠে আরও। একী করেছেন সানি। কেন আরও কিছু সময় আর প্রথম পুত্রসন্তানকে নিয়ে আরও কিছু গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করলেন না? করণের মধ্যে বাবার ইনটেনসিটি নেই। হিন্দি সংলাপ বলাতে সড়গড় নন। সব পরিস্থিতেই একভাবে ডায়ালগ বলেন। মুখের এক্সপ্রেশন দুঃখে আর আনন্দে একইরকম। প্রবল রাগে, ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে বাবার পেটেন্ট সেই ‘ইয়ায়া…’ আওয়াজ মুখের এক্সপ্রেশনের সঙ্গে মেলে না। ডান্সে স্বাভাবিক হতে গিয়েও যেন আড়ষ্ট। হিন্দি ছবির সর্বভারতীয় বাজারে ভাল কাজ দেওয়ার প্রতিযোগিতা এখন যেখানে গেছে, সেই সময়ে দাঁড়িয়ে সানি দেওল ছেলেকে লঞ্চ করার আগে সেকথা সেভাবে ভেবেই দেখেননি। অথচ উনিশ বছর আগে রাকেশ রোশন ভেবেছিলেন। ছবির দ্বিতীয়ার্ধের গল্প প্রত্যাশিত পথে এগিয়েছে। এবং করণকে সিনেমায় লঞ্চ করার আগে বাবা সানির সিরিয়াসনেসের অভাবকে আরও প্রকট করেছে। উলটোদিকে সাহের বাম্বার ডেবিউকে অনেক প্রাণবন্ত লাগে। মনেই হয় না তিনি আর করণ একই সময় নিয়ে (দু’বছর) একই মানুষদের কাছে ওয়ার্কশপ করেছেন। সাহের বাম্বা নামে বলিউডে এক নতুন নায়িকার (তারকা?) জন্ম হল বলে দেওয়া যায়। দেওল পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের শুরুতে সানি দেওল লঞ্চ করলেন বড় ছেলে করণকে নয়। সাহের বাম্বাকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.