চারুবাক: ‘কপি অ্যান্ড পেস্ট’ পরিচালক বলে একসময় তাঁর খ্যাতি হয়েছিল। কিন্তু প্রযোজক পেলে এবং ইচ্ছে করলে সেই রাজ চক্রবর্তী যে অন্যরকম এবং মৌলিক ছবিও বানাতে পারেন তার প্রমাণ আগেও দু’একবার মিলেছে। এবারও মিলল ‘পরিণীতা’য়। তবে এই সাফল্যের অর্ধেক ভাগীদার অবশ্যই চিত্রনাট্যকার পদ্মনাভ দাশগুপ্ত।
ছাত্রী-শিক্ষকের রোম্যান্স নিয়ে বাংলায় একাধিক ছবি হয়েছে তার বেশিরভাগই মিলনান্তক। কিন্তু এবার রাজ-পদ্মনাভ জুটি দেখিয়ে দিল দু’টি মানুষের মিলন সব সময় শারীরিক নাও হতে পারে। আত্মিক মিলনও তো এক ধরনের মিলনই। এই ‘পরিণীতা’ ছবির স্কুলপড়ুয়া (উচ্চমাধ্যমিক) মেহুল, প্রতিবেশি তরুণ বাবাইদার কাছে টিউশন নেয়। আদর, আবদারে, খুনসুটিতে ছাত্রী-শিক্ষকের সম্পর্কে যে কখন রং লেগে যায়, সেটা মেহুল বুঝতে পারলেও বোঝে না শিক্ষক। এক হোলির দিনে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে বাবাইদা মেহুলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় তাঁর প্রেমিকার। নীরব অভিমানে ক্ষোভে রাগে নিজেকে সরিয়ে নেয় মেহুল। পরীক্ষার আগেও সে টিউশন নিতে যায় না। ফোন থাকে উত্তরহীন। এরপর পরীক্ষার রেজাল্ট বেরনোর দিনই বজ্রপাতের মতো খবর আসে তার প্রিয় বাবাইদা আত্মহত্যা করেছে।
রোম্যান্সের শেষে এবার রহস্যের শুরু। সেই রহস্যটুকু হলে গিয়ে দেখাই ভাল। কারণ এরপর সাদাসিধে মেহুল গুটিপোকা থেকে প্রজাপতি হয়ে যাবে। কর্পোরেট সংস্থায় চাকরি পাবে। বস রণদেবকে তার ডানার রঙে রাঙিয়ে তুলবে কি কোনও উদ্দেশ্য ছাড়াই? বাবাইদার আত্মহত্যার প্রতিশোধ নিতে হবে না? এইখানে নাটক এবং ঘটনা দুই-ই জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে জমজমাট। হ্যাঁ। যুক্তি-বুদ্ধি, কার্য-কারণ যে সমান তালে চলেছে, এমনটা নয়। কিন্তু রাজ চক্রবর্তীর চটকদারি প্রয়োগশৈলীতে দর্শক থ হয়ে হাততালি দিতে বাধ্য।
এছাড়াও দুটি পাশাপাশি বাড়ির পরিবেশ রচনায় উত্তর কলকাতার মেজাজটি এসেছে সুন্দর। মা-ছেলে-মেয়ে-বাবার সম্পর্কগুলো একটু কমেডির ছোঁয়া দিয়ে ভাল করেছেন। সেজন্য সত্যি বলতে শিল্পীদের অভিনয়ও অনেক জায়গায় স্বতঃস্ফূর্ত লেগেছে। ঋত্বিক চক্রবর্তীকে নিয়ে প্রশংসা আর প্রয়োজন নেই। তিনি একেবারে তাঁর মতোই। অনেকদিন পর ক্যামেরার সামনে এসে শুভশ্রী টমবয়িশ স্কুলছাত্রী হয়ে যেমন সাবলীল, প্রয়োজনে লাজুক নিজের মনোভাব গোপন করায়। আবার চাকরিজীবনে গিয়ে প্রজাপতি হওয়ার পর তেমনই স্বচ্ছন্দ্য এবং ব্যক্তিত্বময়ী। প্রয়াত বাবাইদার প্রতি গোপন ভালবাসা নিয়েই বাঁচে নীরবে, নিঃশব্দে। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া সহকর্মী আনন্দর (অদ্রিত রায়) সহচর্য হয়ে থাকে শুধু সহকর্মীরই। নতুন মুখ অদ্রিত কিন্তু মন্দ করেননি। বিগ বসের চরিত্রে গৌরব চক্রবর্তী মনে দাগ কাটতে পারলেন না। দুই মায়ের চরিত্রে লাবণী সরকার ও তুলিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘরোয়া ভঙ্গিতে মধ্যবিত্ত গিন্নির মেজাজটি তুলে এনেছেন।
ব্যবসায়ীক ঘরানায় রাজের এই ছবির পরিণতি কী ঘটবে বলা মুশকিল। তবে তাঁকে একটাই অনুরোধ। প্রেম-রহস্যের পাশাপাশি আজকের অস্থির সময়টার প্রতিও একটু দয়া করে নজর দিন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.