উপাসনা সেন: প্রেমের ছবি হলেও, ছকে বাঁধা লাভ স্টোরি নয় ‘কুলপি’ (Kulpi)। বরং মানবিক গল্প নিয়ে চিত্রনাট্য বুনেছেন পরিচালক বর্ষালি চট্টোপাধ্যায়। বামন যাঁরা তাঁদের আমরা সমাজের মূলস্রোতে দেখতে পাই না, এই ২০২২-এ দাঁড়িয়েও। ছোটখাটো চেহারার এই সব মানুষ সংখ্যাগরিষ্ঠের কাছে এখনও ‘মজার’ বিষয়। অথচ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই মানুষগুলোর জীবনের চাহিদা তো আর পাঁচজন মানুষের মতোই। আমরা ক’জন বুঝি তাঁদের মন? আদৌ ভাবি তাঁদের কথা? নাকি এখনও আমাদের সমাজ মনে করে ‘ডোয়ার্ফ’ মানেই সে হবে সার্কাসের ক্লাউন কিংবা সিনেমার এক্সট্রা? খর্বকায় মানুষগুলোর জীবন-জীবিকা কি অন্যদিকে বাঁক নিতে পারে না? জন্মগত ভাবেই তো তাদের উচ্চতা বাড়েনি, সেখানে মানুষের নিজের কোনও হাত নেই। তার গুণগুলো, দক্ষতাগুলো জেনে কি জীবন বিকাশের সুযোগ আমরা করে দিতে পারি না? আর প্রেম-ভালবাসা? সেই অধিকারেই বা তারা বঞ্চিত থাকবে কেন! ‘কুলপি’ ছবিটা চেষ্টা করেছে বামন সন্তানকে নিয়ে তার বাবা-মা-ভাইয়ের বেঁচে থাকার লড়াই তুলে ধরার। ছবির মেকিং আহামরি কিছু না হলেও, ভাবনা সৎ।
গল্পটা কেমন? বছর পঁচিশের কুলদীপ ওরফে কুলপিকে (প্রত্যয় ঘোষ) তার সৎ মা (চুমকি চৌধুরি) মোটেই ভালবাসে না। বাবা (রজতাভ দত্ত) কালীপদবাবুই ছেলের সহায়। তার প্রথমপক্ষের সন্তান কুলপি। ভাই বিহু খুবই ভালবাসে কুলপিকে। খেলার সঙ্গী তারা। এক সময় ক্রিকেট খেলতে গিয়ে পাশের বাড়ির ভাড়াটে কঙ্কণার (পায়েল সরকার) সঙ্গে আলাপ হয় কুলপির। ভাল লেগে যায়। কিন্তু কুলপি জানে এ ভালবাসা সহজ নয়, অসম ভালবাসা। তবু বন্ধুত্ব হয়। দিন যায়, একদিন গ্রামে সার্কাস নিয়ে আসে হিলটন (বিশ্বনাথ বসু), তাঁর নজর পড়ে কুলপির ওপর। জোকারের দলে কুলপিকে দরকার যে! যেনতেন প্রকারেণ কুলপিকে চাই তার। এবারে গল্প এগলে দেখার হিলটনের নজর থেকে কুলপি রক্ষা পায় কীভাবে।
ছবিতে বিহু আর কুলপির সম্পর্ক খুব সুন্দর। পায়েলও যথাসাধ্য করেছেন কুলপির বান্ধবীর ভূমিকায়। রজতাভ দত্ত অসহায় বাবার ভূমিকায় বেশ ভাল। চুমকি চৌধুরি মায়ের ভূমিকায় মন্দ নন। চমৎকার লাগে পাশের বাড়ির দিদার চরিত্রে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়কে (Sabitri Chatterjee)। যে ক’টা সিন তিনি আছেন, পর্দাজুড়ে তিনি-ই। এখনও কী স্ক্রিন প্রেজেন্স! প্রত্যয় ঘোষ কুলপির চরিত্রে বেশ ভাল। বিশ্বনাথ বসু হিলটনের ভূমিকায় ঠিকঠাক।
বোঝাই যায়, বিনোদনের কথা ভেবে আইটেম ডান্স রাখা হয়েছে ছবিতে। যার কোনও প্রয়োজন ছিল না। কিছু কিছু দৃশ্য বড্ড চড়া দাগের, যেখানে নজর দেওয়া যেত। আর ছবির মেকিং আরও ভাল হতে পারত। তবে সব মিলিয়ে ছবির সামাজিক বার্তা দেওয়ার প্রচেষ্টা ভাল। ছবির শেষটা স্বপ্নের মতো। দেখতে গিয়ে মনে হয় সবার জীবনে এমন স্বপ্নপূরণ হয় না কেন!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.