Advertisement
Advertisement

Breaking News

Ballabhpurer Roopkotha Review

‘বল্লভপুরের রূপকথা’র রিভিউ: মজাদার উপস্থাপনায় বাজিমাত পরিচালক অনির্বাণের

আগামী মঙ্গলবার সিনেমা হলে মুক্তি পাচ্ছে ছবিটি। তার আগে জেনে নিন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

Review Anirban Bhattacharya directed movie Ballabhpurer Roopkotha | Sangbad Pratidin
Published by: Suparna Majumder
  • Posted:October 23, 2022 5:01 pm
  • Updated:October 23, 2022 8:20 pm  

চারুবাক: পরিচালক হিসেবে ‘মন্দার’ (Mandaar) সিরিজে তৈরি করেই অনির্বাণ ভট্টাচার্য (Anirban Bhattacharya) বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি ভেতরে ভেতরে সিনেমা বানানোর চর্চা বেশ মন ও মাথা খাটিয়েই করছেন। বেশ পাকা হাতের কাজ ‘মন্দার’। তা সিরিজের ট্রিটমেন্টই বুঝিয়ে দিয়েছিল। বলতে গেলে পরিচালক অনির্বাণের প্রথম ফিচার ফিল্ম ‘বল্লভপুরের রূপকথা’ (Ballabhpurer Roopkotha)। ছবির ক্রেডিট টাইটেল শুরু হওয়ার আগেই ধূমপান-মদ্যপান নিয়ে বিধিসম্মত সতর্কীকরণ বিজ্ঞাপনটির হালকা মজাদার উপস্থাপনাতেই জানিয়ে দেন মূল ছবির মেজাজ কেমন হবে।

Ballabhpurer-Roopkotha-3

Advertisement

প্রথমেই কমেডির পরিবেশ তৈরির ভাবনা বুঝিয়ে দেয় অনির্বাণ সিনেমা নিয়ে কোনো হালকা ফুলকা ‘বই’ বানাবেন না। তা তিনি করেননি। বাদল সরকারের কলমে লেখা এই নাটক। যদিও তিনি ফরাসি পরিচালক রেনে ক্লেয়ারের ইংরাজি ছবি ‘ঘোস্ট গোজ ওয়েস্ট’ থেকে কাহিনির বীজ নিয়ে রূপকথার গাছটির জন্ম দিয়েছিলেন। অনির্বাণ প্রায় সত্তর বছর পেরিয়ে সেই নাটকের চিত্রায়ণে আজকের সময়কেও ছুঁয়ে ছুঁয়ে যান, এখানেই তাঁর মুন্সিয়ানা। বাজারে ‘খায়’ এমন উপাদান নিয়ে তিনি এই কমেডি সিনেমা করেননি। নির্মল আনন্দ ও বিনোদনের ঝুড়ি উপুড় করে তিনি সংলাপের জাদুকরি টানে ছবিকে তরতরিয়ে নিপুণ মাঝির মতো বিক্ষুব্ধ দর্শকের হৃদয়ের নদীতে বেয়ে গেছেন।

হ্যাঁ, অবশ্যই নাটকের কাঠামোতে যে গঠন ও গড়ন ছিল সেটাকে তিনি সিনেমার চিত্রনাট্যে একটু সিনেমাটিকভাবেই অনুবাদ করেছেন। আবার পুরোটাই যে মূলানুগ রয়েছে তেমনও নয়। করা সম্ভব ছিল না। ভেঙে পড়া বিশাল এক রাজবাড়ির তরুণতম বংশধর ভূপতি রায় ‘বাহাদুর’-এর অবস্থা এখন ঘটি না ডোবা পুকুরের মতো। চারশো বছরের বাড়ি বিক্রি করে ধার-দেনা মিটিয়ে কলকাতায় একটা ওকালতির চেম্বার করতে পারলেই তার জীবন বর্তে যায়।

Ballabhpurer-Roopkotha-2

[আরও পড়ুন: বাঙালিয়ানা ষোলোয়ানা! ময়দানে ছবির শুটিংয়ের ফাঁকে ঘুগনি-পাউরুটিতে মজলেন অনুষ্কা]

কিন্তু অমন পুরনো বাড়ি কিনবে কে? রাজবাড়ির ঠাটবাট বজায় রেখে খদ্দের টানতে সে এক মতলব ভাঁজে। বাড়ির পুরনো বৃদ্ধ চাকর মনোহরকে সাজায় খাস খানসামা। বন্ধু সঞ্জীবকে সাজায় নিজের এস্টেটের ম্যানেজার। উত্তমর্নদের ঋণ শোধের লোভ দেখিয়ে বাড়ির দারোয়ান, পাচক ইত্যাদি বানিয়ে এক এলাহি রাজসিক ব্যবস্থা করে ফেলে। হবু খদ্দের হয়ে হালদার দম্পতি তরুণী কন্যা ছন্দাকে নিয়ে রাজবাড়িতে এলে কেলেঙ্কারিয়াস পরিস্থিতি তৈরি
হয়। এর মধ্যেই আবার রায় বংশের এক পুরনো ভূত রঘু হাজির হয়ে জটিলতা বাড়ায়।

ছবির ক্লাইম্যাক্স মুহূর্তটি অনুক্তই থাক। তা সিনেমা হলে দেখে নেওয়াই ভাল। শুধু এটুকু জানিয়ে রাখি – নাটকের সমাপ্তির চাইতে অনেক অনেক বেশি একই সঙ্গে নাটকীয় এবং সিনেমাটিক। বাদল সরকারের জয়গান দিয়ে শুরু হয়ে সমাপ্তির ক্লাইম্যাক্স এমন হবে সেটা দর্শকের আন্দাজ করাও মুশকিল। সেই মুশকিল আসান অনির্বাণ করেছেন মূল নাট্যভাবনার সঙ্গে সিনেমার ব্যাকরণ ও যতি চিহ্নের সুষম এক সমীকরণ ঘটিয়ে।

‘মন্দার’ ছবির ডার্ক মেজাজ থেকে একেবারে যোজন দূরে সরে গিয়ে অনির্বাণ সাম্প্রতিক বাংলা সিনেমার কমেডি ঘরানায় এক নতুন ভাবনা উসকে দিলেন, একথা বলাটা অতিকথন বোধহয় হবে না। তাঁর সেট নির্মাণ এক কথায় অসাধারণ, সৌমিক হালদারের ক্যামেরা সাদা-কালো এবং রঙিন হয়ে হাসি ও ভূতুড়ে পরিবেশ তৈরি করে। শুভদীপ গুহর আবহ চলতি ভাবনার ব্যতিক্রম। প্রথম কিছুক্ষণ একটু লাউড লাগলেও পরবর্তী সময়ে ঘটনার সঙ্গে সুন্দর সঙ্গত করেছে তাঁর ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর। প্রযুক্তিগত বিভাগে তাঁর নজরদারির প্রমাণ পুরো ছবি জুড়েই। মাঝে মাঝে ‘পরশপাথর’ ছবির কথা মনে পড়ছিল।

Ballabhpurer-Roopkotha-1

শুভদীপকে প্রত্যেক শিল্পীই যে কীভাবে সহযোগিতা করেছেন, সেটা ছবি না দেখলে বোঝানো সম্ভব নয়। বিশেষ করে চারজনের নাম না করলেই নয়। এঁরা সকলেই বাংলা মঞ্চাভিনেতা। পুরো ছবিটাই কমিক অভিনয়ের আগল দিয়ে বেঁধে রেখেছেন সত্যম ভট্টাচার্য (ভূপতি), দেবরাজ ভট্টাচার্য (সঞ্জীব), শ্যামল চক্রবর্তী (মনোহর) এবং সন্দীপ ভট্টাচার্য (হালদার)। ছন্দার চরিত্রে সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছুটা চেনা মুখ, মা স্বপ্নার ভূমিকায় ঝুলন ভট্টাচার্যও দাপট কম দেখাননি।

তবে এঁদের দিয়ে চাহিদামাফিক অভিনয় করিয়ে নেওয়ার জন্য কৃতিত্ব কিছুটা অনির্বাণ দাবি করতেই পারেন, কারণ তিনিই তো কান্ডারি। তাঁর কণ্ঠে কালিদাসের নাটকের সংস্কৃত শ্লোক উচ্চারণ এক প্রবীণের কথা মনে করিয়ে দেয়। যাই হোক, অনির্বাণের এই ছবি গোয়েন্দা গল্প, রহস্যপ্রেমী দর্শকমহলে প্রশংসিত হবে কি হবে না সেটা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। তবে যাঁরা ভাল সিনেমা দেখতে ভালোবাসেন, তাঁদের কাছে আদৃত হবে বলেই বিশ্বাস রাখি। আর কে যেন বলেছিলেন, “মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ।” সেটা করতে চাই না।

সিনেমা – বল্লভপুরের রূপকথা
অভিনয়ে – সত্যম ভট্টাচার্য, দেবরাজ ভট্টাচার্য, শ্যামল চক্রবর্তী এবং সন্দীপ ভট্টাচার্য, সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায়, ঝুলন ভট্টাচার্য
পরিচালনায় – অনির্বাণ ভট্টাচার্য

[আরও পড়ুন: ‘দিওয়ালিতে কুকুরের লেজে বাজি ফাটালে ছেড়ে কথা বলব না’, হুঁশিয়ারি শ্রীলেখার]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement