বিশাখা পাল: কেমন হয়েছে ‘মোতিচুর চকনাচুর’? এই প্রশ্নটা করলেই একরাশ বিরক্তি ঝরে পড়ছে হলফেরত দর্শকদের গলায়। বেশিরভাগেরই একটাই মন্তব্য। কেন নওয়াজ? এইসব ছবির জন্য কি তৈরি হয়েছেন তিনি? এই চরিত্রটি তো টম-ডিক-হ্যারির মতো যে কোনও অভিনেতাই করে দিতে পারত। তাহলে হঠাৎ কেন মতিভ্রম হল নওয়াজের? গোটা সিনেমা দেখে অবশ্য আপনারও একই কথা মনে হবে। তার সঙ্গে এক্সট্রা পয়েন্ট হিসেবে জুড়ে দিতে পারেন ছবির বিষয়বস্তু আর চিত্রনাট্য।
ছবির গল্প নেহাতই সাদামাটা। হুবহু এই গল্প নিয়ে সিনেমা না হলেও এমন গল্প সিনেজগতে অপ্রতুল নয়। আগামুড়ো এক রেখে শুধু মাঝখানের গল্পটা নিয়ে খেলার চেষ্টা করেছেন পরিচালক। কিন্তু খুব একটা সফল যে হননি তা ছবি শেষ হওয়া মাত্রই বোঝা যায়। তার উপর কমেডি ঢোকাতে গিয়ে যেন আরও ঘেঁটে ফেলেছেন তিনি। অভিনয়ের অবস্থাও তথৈবচ। নওয়াজ আর বিভা ছিব্বর ছাড়া আর কেউ নজর কাড়তে পারলেন কই? আর আথিয়া শেট্টিকে দেখে সবার আগে মাথায় আসবে নেপোটিজমের কথা। বোধহয় সুনীল শেট্টির মেয়ে বলেই এ যাত্রায় উতরে গেলেন আথিয়া। তাই বোধহয় ২০১৫ সালে ডেবিউয়ের পর ২০১৯ সালে তৃতীয় ছবি জুটল তাঁর কপালে।
ছবিতে আথিয়ার চরিত্রের নাম অ্যানি, ওরফে অনিতা। জীবনে তার একটাই লক্ষ্য। বিয়ে করে বিদেশ যাবে। এর জন্য একটার পর একটা সম্বন্ধ বাতিল করে সে। শেষ পর্যন্ত যখন শিকে ছেঁড়ে না, তখন শিবরাত্রির সলতে পাশের বাড়ির পুষ্পেন্দর ত্যাগিকে পাকড়াও করে অ্যানি। বয়সের বেশ খানিকটা ফারাক থাকলেও শুধু দুবাই যাওয়ার কথা ভেবে পুষ্পেন্দরের গলায় ঝুলে পড়ে সে। তারপর মোহভঙ্গ হয়। কেন? কী এমন হয় অ্যানির জীবনে? এই নিয়েই গল্প।
গোটা ছবিতে জোর করে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে প্রেম মানেই অন্ধ। নওয়াজের চরিত্রটা মূলত বিয়ে পাগল এক গোবেচারা যুবকের। বলতে দ্বিধা নেই চরিত্রটি নওয়াজ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন। তবে ‘মান্টো’র অভিনেতাকে এমন চরিত্রে সত্যিই মেনে নেওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার। শুধু তাঁর অভিনয় দক্ষতার গুণেই চরিত্রটি অন্য মাত্রা পেয়েছে। তাঁর মায়ের চরিত্রে বিভা ছিব্বরও অসাধারণ। বলা যায় ‘মোতিচুর চাকনাচুর’ ছবিটিকে এই দুই অভিনেতা-অভিনেত্রীই বাঁচিয়ে দিয়েছেন।
পরিচালক দেবমিত্রা বিশাল নিশ্চয়ই চেষ্টার ত্রুটি করেননি। তা সত্ত্বেও ছবি তেমন জমল না। ছবির গল্পও তাঁর। ভূপেন্দর সিংয়ের সঙ্গে চিত্রনাট্য লেখার দায়িত্বটাও তিনিই নিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও সবের মধ্যেই আলগা বাঁধুনির প্রমাণ স্পষ্ট। হয়তো অভিজ্ঞতার কারণে, অথবা এমনও হতে পারে গল্পের মধ্যে এক্স-ফ্যাক্টর ছিল না বলেই সব মাঠে মারা গেল। নওয়াজের মতো পোড় খাওয়া অভিনেতাও বাঁচাতে পারলেন না ‘মোতিচুর চকনাচুর’কে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.