বিশাখা পাল: ‘পাঙ্গা’ নিলেন কঙ্গনা, আর জিতলেনও। কঙ্গনা রানাউত মানেই বোধহয় তাই। বাস্তবে যতই ঠোঁটকাটা হোক না কেন, কঙ্গনার অভিনয়ের ধার কিন্তু সব কিছুকে ঢেকে দেয়। এই ছবিও তার ব্যতিক্রম নয়। এই ছবিটিও আদ্যোপান্ত কঙ্গনার ছবি। কঙ্গনার অভিনয়ের ছটায় রিচা চাড্ডা যেন কিয়দাংশে ম্লান।
‘পাঙ্গা’ ছবিটি আদতে এক কবাডি খেলোয়াড়ের। বিয়ের পর খেলার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু যে জাত খেলোয়াড়, কবাডি কোর্টের সঙ্গে তো তার সম্পর্ক চুকে যেতে পারে না। খেলা যে ভালবাসে তার চোখে একটাই স্বপ্ন থাকে। আন্তর্জাতিক স্তরে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা। জয়ার (কঙ্গনার অভিনীত চরিত্র) চোখেও সেই একই স্বপ্ন ছিল। কিন্তু সেই শিখরে সে পৌঁছতে পারেনি। চাকরি একটা সে করে। সাত বছরের এক ছেলেও রয়েছে তার। স্বামী তাকে ভালবাসে। শুধু ভালবাসে বললে ভুল হবে, বোঝে। সে জানে সংসারের জন্য স্ত্রীকে নিজের স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিতে হয়েছে। একসময় কবাডি কোর্ট যার ধ্যানজ্ঞান ছিল, আজ সেই মেয়েটিই কীভাবে ঠিকমতো রান্না করবে, তা নিয়ে ভাবে। কিন্তু সুযোগ আসে। নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়িক করার সুযোগ পায় জয়া। শুরু হয় তার জার্নি।
জয়ার পাশাপাশি উঠে এসেছে আরও একটি মেয়ের গল্প। তার নাম মিতু। এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন রিচা চাড্ডা। জয়ার একেবারে বিপরীত চরিত্র মিতু। সে অবিবাহিত। কোনও সন্তান নেই তার। একেবারে ঝাড়া হাত-পা বলতে যা বোঝায়, মিতু হল তাই। মেয়েদের কবাডি কোচ সে। ভোপালের মতো ছোট শহরের মেয়েদের সে ট্রেনিং দেয়। জয়া ও মিতুর এই গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘পাঙ্গা’।
‘নীল বট্টে সান্নাটা’ ও ‘বরেলি কি বরফি’ ছবির পরিচালক অশ্বিনী আইয়ার তিওয়ারি এই ছবিতেও নিজের পরিচানার ধার দেখিয়েছেন। জয়া ও প্রশান্ত মধ্যবিত্ত দম্পতি। তাদের রসায়ন ও সামাজিক অবস্থান যেমন ভালভাবে তিনি তুলে ধরেছেন, সেভাবেই রিচা চাড্ডার চরিত্রাঙ্কনও সুন্দরভাবে করেছেন তিনি। একটি দৃশ্যে পরিচালক দেখিয়েছেম জয়ার শারীরিক শক্তি বাড়বে বলে ছোট ছেলে তাঁকে এক গ্লাস দুধ এনে দেয়। এমন ছোট ছোট জিনিসের দিকেও খেয়াল রেখেছেন পরিচালক। তবে দোসর অবশ্যই কঙ্গনা রানাউত। এই ছবিতে তিনি আরও একবার প্রমাণ করে দিয়েছেন গড়পড়তা ছবি তাঁর জন্য নয়। ভাল চিত্রনাট্য পেলে তিনি এখনও ছক্কা হাঁকাতে প্রস্তুত। তবে নীনা গুপ্তকে ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারেননি অশ্বিনী। তাঁর স্ক্রিন প্রেজেন্স খুবই কম। দ্বিতীয়ার্ধে কঙ্গনা ও রিচার সমানে সমানে টক্কর চলেছে। নজর কেড়েছেন শিশুশিল্পী যজ্ঞ ভাসিন।
‘পাঙ্গা’ আসলে সেইসব মায়েদের গল্প যারা সংসারের বেড়াজালে নিজের স্বপ্নের কথা ভুলে গিয়েছেন। মায়েদের নতুনভাবে ফিরে আসার গল্প এই ছবি। সেরেনা উইলিয়ামস মা হওয়ার পর গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছিলেন। মা হওয়ার পর খেতাব জিতেছিলেন সানিয়া মির্জাও। সেভাবেই সমাজের বাকি মহিলারাও সংসারের টানাপোড়েনে হারিয়ে না গিয়ে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে পারেন। ‘পাঙ্গা’ সেই বার্তাই দেয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.