Advertisement
Advertisement

Breaking News

সফল ‘উড়োজাহাজ’-এর উড়ান, রাজনীতি-স্বপ্নের যুগলবন্দিতে অন্য মাত্রা পেল বুদ্ধদেবের ছবি

বাস্তব এবং পরাবাস্তবের মধ্যে হাঁটাচলা করেছে ছবির চরিত্রগুলি।

Read the review of Buddhadeb Dasgupta's movie Urojahaj
Published by: Bishakha Pal
  • Posted:December 13, 2019 7:00 pm
  • Updated:December 13, 2019 8:44 pm  

চারুবাক: ফিল্ম পরিচালক বেসিক্যালি কবি। তাঁর পরিচয় প্রথমেও কবি, এবং শেষেও। ফিল্ম বানাতে শুরু করে তিনি তাঁর কবিমনকে সালোকসংশ্লেষের মতো করে জড়িয়ে নিয়েছেন। যত জীবনঋদ্ধ হয়েছেন, সমাজ সচেতনী মন তাঁর আরও সজাগ হয়েছে। একই স্বরে ও সুরে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের সিনেমা ও পারিপার্শিক অবস্থা, রাজনীতি, বিশেষ করে ক্ষমতার রাজনীতির দিকে আঙুল তুলেছে। হ্যাঁ, অবশ্যই। সেজন্য তিনি সিনেমাকে কবিতার চেহারা থেকে সরিয়ে নেননি। বরং ফরাসি গাভ্রাস এবং গ্রিক অ্যাঞ্জেলোপোলিসের যৌথ মিলনে এক কবিতা-রাজনীতির মেলবন্ধন ঘটিয়ে চলেছেন। প্যাম্ফলেট কখনওই হয়নি। তাঁর নতুন ছবি ‘উড়োজাহাজ’ বাচ্চু মণ্ডল নামে প্রায় অশিক্ষিত এক মোটর মেকানিকের স্বপ্ন উড়ানের কথা বলে। তাঁর উড়ান সত্যিই স্বপ্নই থেকে যায়।

গল্পের আপাত একটি সুপার স্ট্রাকচার থাকে তাঁর চিত্রনাট্যে। কিন্তু সেই সুপারের আড়ালে থেকে যায় আরও একটা ইনার স্ট্রাকচার। কেউ বলতে পারেন সুর বিন্যাস। এ ছবিতে সেটা আছে। বাস্তব এবং পরাবাস্তবের মধ্যে হাঁটাচলা করেছে বাচ্চু, তাঁর স্ত্রী, শিশুসন্তান, গ্যারেজ মালিক। একমাত্র বাচ্চুই জঙ্গলে দেখতে পাওয়া একটা পরিত্যক্ত ভাঙা যুদ্ধবিমান নিয়ে আকাশে ওড়ার অলীক স্বপ্ন দেখে। শুধু দেখে না, স্বপ্নকে বাস্তব করতে পুলিশের বন্দুকের সামনেও দাঁড়ায়। প্রশাসনও তাঁর স্বপ্নকে শুধু নস্যাৎ করে না। উন্মাদ, পাগল, এমনকী উগ্রপন্থী তকমা গায়ে সেঁটে দিতেও দ্বিধা করে না। পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর সিনেমা ভাষার সঙ্গে যাঁরা পরিচিত, তাঁরা খুব সহজেই সুপার স্ট্রাকচার সরিয়ে ইনার স্ট্রাকচারে পৌঁছতে পারবেন। কিন্তু যাঁরা বুঝবেন না, তাঁদের জন্য এই প্রথমবার তিনি সরল ন্যারেশনের ব্যবস্থা রেখেছেন। পরিত্যক্ত বিমানটি ঘিরে থাকা ‘মৃত’ মানুষের দল একে একে বাচ্চুকে জানিয়ে দেয় তাঁদের ক্ষোভ-দুঃখ অভিমানে মৃত্যুর কারণ। ছবির সমাপ্তের প্রিল্যুড হিসেবে ওই দৃশ্যগুলোর এক ধরনের স্বপ্নিল রোম্যান্টিক দৃশ্যগুলোও ধীরে ধীরে বদলে যায় খোলা প্রান্তর কিংবা দিঘির পাড়ে। কখনও জানালার পাশ দিয়ে যায় বাঁশিওয়ালা। তিনি স্পষ্ট করেই বুঝিয়ে দেন রিয়েল ও সুর রিয়েলের সীমানা।

Advertisement

[ আরও পড়ুন: টানটান উত্তেজনায় ভরপুর ‘মর্দানি ২’, রানিই ছবির নায়ক ]

আবার যখন তিনি অতি বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করেন ‘এই দেশ কার? জল-নদী-পাহাড়-জঙ্গল-আকাশটা কার? প্লেনটা তোর বাবার না কাকার?’ উত্তর আসে, ‘ক্ষমতা যার, প্লেনটা তার।’ বাস্তব তো এটাই। কিন্তু সরল অশিক্ষিত বাচ্চু সেটা বুঝলে তো! যেমন বুঝছে না এই দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষ। না বুঝেই স্বপ্ন দেখছে তারা। আর স্বপ্নের পরিণতি ঘটেছে শাসকের বন্দুকে।

প্রতীকী ভাবনায় ভরপুর হয়েও ‘উড়োজাহাজ’ সত্যি বলতে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের অনেক বেশি সহজ ছবি। সরলীকৃত। কিন্তু তাঁর কবিসত্ত্বা পুরো মাত্রায় হাজির। সেটা বোঝা যায় কাট শটের সিনেমাটোগ্রাফিতে (চিত্রগ্রহণ: অসীম বসু)। সম্পাদনার ছন্দে লয়ে। আর রয়েছে অলোকানন্দা দাশগুপ্তের পরিমিত আবহ। অভিনয়ে প্রধান চরিত্রে চন্দন রায় সান্যাল বাচ্চুর সারল্য সুন্দরভাবে ফুটিযে তুলেছেন। গ্রামীণ সহজতা রয়েছে তাঁর ব্যবহারেও। পার্নো মিত্রর স্ত্রীয়ের চরিত্রটির তেমন কিছু করণীয় ছিল না। আসলে এই ধরনের ছবিতে অভিনয়ের ক্ষেত্রে শিল্পীরা পরিচালকের পাপেট মাত্র। কিংবা বলা যেতে পারে ফিল্মের মতো শুধুই রসদের মেটিরিয়্যাল। পরিচালকের ইচ্ছেয় তাঁদের চলতে হয়। এই ছবি আদ্যোপান্ত পরিচালকেরই ছবি। তার আরও বড় প্রমাণ ছবির শেষ দৃশ্যটি। পুলিশের তাড়া খেয়ে দৌড়তে দৌড়তে বাচ্চু পৌঁছে যায় এক পরিত্যক্ত রানওয়েতে। শুরু হয় তাঁর স্বপ্নের উড়ান। যেমন থাকছে কোটি কোটি সাধারণ মানুষের।

[ আরও পড়ুন: মুচমুচে চিত্রনাট্য, ‘পতি পত্নী অউর উয়ো’র অনন্য আবিষ্কার অনন্যা ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement