বিশাখা পাল: ইতিহাস নির্ভর ছবি বলিউডে কম হয়নি। গত মাসেই এসেছিল ‘পানিপথ’। কিন্তু বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছিল ছবিটি। ‘তানহাজি’ বক্স অফিসে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, তার জন্য কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে মনের শান্তি আর ইতিহাস দেখতে চাইলে ‘তানহাজি’ আপনাকে নিরাশ করবে।
মারাঠা যোদ্ধাদের বীরগাথা বর্তমানে বলিউডের নতুন ট্রেন্ড। গত কয়েক বছরে মহারাষ্ট্রের মাটি ছেড়ে কোনও এক অজ্ঞাত কারণে পরিচালকরা বেরোতেই পারছেন না। ‘বাজিরাও মস্তানি’, ‘পানিপথ’-এর পর এবার তাই ‘তানহাজি’ উপহার দিল বলিউড। শিবাজির সুবেদার তানাজি মালুসারেকে নিয়ে ছবি বানিয়েছেন পরিচালক ওম রাউত। এটি তাঁর প্রথম হিন্দি ছবি পরিচালনা। কিন্তু প্রথম ছবিতেই হোঁচট খেলেন পরিচালক। চিত্রনাট্য যেন বড্ড বেশি নড়বড়ে। তবে অভিনয়ের গুণে ছবিকে অন্য মাত্রা দিতে পারতেন অজয় দেবগন, কাজল আর সইফ আলি খান। কিন্তু সে গুড়েও বালি। তবে সইফ কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজের কাজটি মন দিয়ে করে গিয়েছেন। তাই প্রায় আড়াই ঘণ্টার ছবি একমাত্র তাঁর জন্যই দেখা যায়।
মারাঠাদের সুবেদার ছিলেন তানাজি মালুসারে। সম্রাট ঔরঙ্গজেব একসময় আসমুদ্রহিমাচলে মুঘলদের ধ্বজা ওড়াতে চেয়েছিলেন। পুনের কাছে কোন্ডানা দুর্গকে কেন্দ্র করে দক্ষিণবিজয় করতে চেয়েছিলেন তিনি। মারাঠাদের বাঁচাতে একসময় ছত্রপতি শিবাজি ২৩টি দুর্গ মুঘলদের দিয়ে দিয়েছিলেন। কোন্ডানা তার মধ্যেই একটি ছিল। কিন্তু স্বরাজের স্বপ্ন যাঁর চোখে, তিনি তো ২৩টি দুর্গ দান করে চুপ করে বসে থাকতে পারেন না। শিবাজিও পারেননি। এর মধ্যে রাজপুত উদয়ভান সিং রাঠোরকে আলগমীর দুর্গ সুরক্ষিত রাখার কাজে পাঠান। শিবাজিও স্থির করেন উয়ভানকে কোনওভাবেই দুর্গে চেপে বসতে দেওয়া যাবে না। দুর্গ পুনরুদ্ধার করতে যুদ্ধে যান তানাজি। সুকৌশলী যুদ্ধে জয় হয় মারাঠাদের। কিন্তু শহিদ হন তানাজি। শেষ পর্যন্ত দুর্গ জয় করেছিলেন তানাজির ভাই সুরজ মালুসারে।
প্লট ভালই বেছেছিলেন পরিচালক। কিন্তু বুনতে পারলেন না। অজয় দেবগনকে ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ দেখাতে গিযে ইতিহাসটাকেই পুরো ওলটপালট করে দিলেন তিনি। ছবিতে তিনি সুরজকে মেরে ফেলে তানাজিকে বাঁচিয়ে রাখলেন। উদয়ভানের মৃত্যুটাও অত্যন্ত হাস্যকর। তবে ছবির উদয়ভান কিন্তু ফুল মার্কস পাবেন। শুধু সইফ আলি খানের জন্যই দেখা যায় ‘তানহাজি’। তিনি যে ভার্সেটাইল অভিনেতা, তা আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন তিনি। ‘ওমকারা’র ল্যাংড়া ত্যাগীর পর আরও একটি চরিত্রে তিনি অভিনয় করলেন যা মনে দাগ কেটে যায়। নেগেটিভ চরিত্রে পরিচালকরা সইফকে একবার ভেবে দেখতেই পারেন।
অপেক্ষাকৃত ম্রিয়মান অজয়। ছবিতে তিনি যেন সেযুগের ‘সিংঘম’। ছবিতে আগাগোড়া তর্জনগর্জনই সার। সংলাপ শুনেও মনে হবে না কোনও ইতিহাসনির্ভর সিনেমা চলছে। কাজলের এখানে বিশেষ কিছু করার ছিল না। কয়েকটি দৃশ্য ছাড়া তাঁর উপস্থিতিও নেই। ছবিতে আরও একজনের অভিনয় বেশ ভাল। তিনি শরদ কেলকর। শিবাজির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি।
তবে ওম রাউতের বিরুদ্ধে শুধু ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ উঠবে, এমন নয়। ছবিতে কমার্শিয়াল মালমশলা ঢোকাতে গিয়ে তিনি সিংহগড় দুর্গ জয়ের পাশাপাশি একটি প্রেমকাহিনিকেও স্থান দিয়েছেন। এই প্রেমকাহিনির ‘ব্যর্থ নায়ক’ উদয়ভান। তার প্রেমিকাও ছবির অন্যতম ‘চরিত্র’। শুধু আইটেম ডান্সটাই যা বাদ পড়েছে। বাকি মোটামুটি সবই মজুত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.