বিশাখা পাল: একটু ধাঁচ বদলাতে চেয়েছিলেন ভিকি কৌশল। বোধহয় রোম্যান্স আর বাস্তবধর্মী ছবির তাঁর একঘেয়ে লাগছিল। তাই ‘ভূত: দ্য হন্টেড শিপ’ ছবিতে অভিনয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু গবেষণা সফল হল না। চেষ্টা তিনি কম করেননি। কিন্তু একা ভিকি কি আর পারবেন? চিত্রনাট্য থেকে সাউন্ড মিক্সিং, গলদ যে অনেক কিছুতেই।
পৃথ্বী নামে এক যুবককে নিয়ে ছবির গল্প। দুর্ঘটনায় সে তার স্ত্রী ও মেয়েকে হারিয়েছে। তবে মাঝেমধ্যে তাদের দেখতে পায় পৃথ্বী। ডাক্তার বলে হ্যালোসিনেশন, আর ভূত বিশেষজ্ঞ বলে সত্যিই তার আশপাশে রয়েছে প্রয়াত স্ত্রী ও মেয়ে। এমন এক চরিত্র পৃথ্বী জাহাজে সার্ভে অফিসারের কাজ করে। পেশার খাতিরেই মুম্বই উপকূলে ভেড়া এক জাহাজের পরিদর্শনে পাঠানো হয় তাকে। জাহাজে তার সঙ্গে ঘটে অনেক অলৌকিক ঘটনা। এমনকী ভূত তো তার হ্যালোসিনেশনে ভর করে পিছু পিছু পৃথ্বীর বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়।
ভূতের ছবি মানেই সেখানে সাউন্ডের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। কিন্তু এই ছবিতে তার লেশমাত্র নেই। যেন মাঝেমধ্যে পিলে চমকানো আওয়াজ দিতে হবে, তাই দেওয়া। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক নিয়ে টিম ভানু প্রতাপ এক বিন্দুও রিসার্চ করেছে কিনা সন্দেহ। একটা ভূত থাকবে, তার চলন-বলন হবে ‘গ্রাজ’ ছবির ভূতের মতো, ইচ্ছেমতো সে হাত পা উলটো দিকে মুড়ে ফেলতে পারবে, এ যেন প্রথম থেকেই ধরে এগোচ্ছিলেন পরিচালক। তাই ওই একই ছবি থেকে ধার করেছেন সাউন্ড। কিন্তু মাথায় তো এটা রাখা উচিত কোনও মানুষ যদি জীবিত থাকে, তাহলে সে ওভাবে হাত-পা দুমড়াতে মুচকাতে পারে না। এখন এই ‘জীবিত মানুষ’ নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। এর জন্য অবশ্যই সিনেমাটা একবার দেখতে হবে। গোটা ছবিতে যেটুকু চমক, যেটুকু সাসপেন্স তা এখানেই।
এর পর চিত্রনাট্য। গল্পটা ভালই ফেঁদেছিলেন পরিচালক। কিন্তু পোক্ত নয়। ছবির প্রথমার্ধ অত্যন্ত শ্লথ। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে অবশ্য একটা টুইস্ট রেখেছেন পরিচালক। কিন্তু ওটুকুই। তারপর সেই একই। ধীর পদক্ষেপে ক্লাইম্যাক্সের দিকে এগিয়েছে ছবি। চিত্রনাট্য অনেক জায়গাতেই খাপছাড়া। কোথাও আবার অতিনাটকীয়তায় ভৌতিক আবহটাই মাটি হয়ে গিয়েছে।
আশুতোষ রানার ছবিতে বিশেষ কিছু করার নেই। তাঁর মতো অভিনেতাকে ব্যবহারই করতে পারলেন না পরিচালক। তিনি তো আর ভূমি পেডনেকরের মতো অতিথি শিল্পী নন। ভিকির উপর বেশি ফোকাস করতে গিয়ে পার্শ্বচরিত্রগুলোই জায়গা পায়নি। কিন্তু পরিচালক তো তাঁকেও ভালভাবে ব্যবহার করতে পারলেন না। বিপাশা বসুর ‘ক্রিয়েচার’ আর ‘রাজ’ ছবির সংমিশ্রণ যেন ‘ভূত: দ্য হন্টেড শিপ’। দেওয়ালে সরীসৃপের মতো ভূতের হেঁটে বেড়ানোর সঙ্গে যেমন ‘ক্রিয়েচার’-এর মিল রয়েছে, তেমনই ‘রাজ’ ছবির সঙ্গেও কিছুটা মিল রয়েছে ভূত ভাগানোর প্রক্রিয়ার। ‘গ্রাজ’, ‘ক্রিয়েচার’ আর ‘রাজ’-এর জগাখিচুড়ি ‘ভূত: দ্য হন্টেড শিপ’ দর্শকমনে কতটা প্রভাব ফেলতে পারবে, সন্দেহ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.