বিশাখা পাল: ইতিহাসের পাতা থেকে চিত্রনাট্য তৈরি আর তারপর তার চিত্রায়ণ, ব্যাপারটা খুব একটা সহজ কাজ নয়। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জটা হাতে নিয়েছেন অনেক পরিচালক। ইতিহাস নির্ভর ছবি করে প্রশংসাও কুড়িয়েছেন। আশুতোষ গোয়াড়িকর তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর আগের ছবি ‘মহেঞ্জোদারো’ বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়লেও ‘পানিপথ’ নিয়ে আগ্রহ ছিল অনেক। দর্শকের সেই প্রত্যাশা কতটা পূরণ করতে পারলেন পরিচালক?
আশুতোষের এই ছবির সঙ্গে সরাসরি যোগ রয়েছে সঞ্জয় লীলা বনশালির ‘বাজিরাও মস্তানি’র। পেশোয়া বাজিরাও ও মস্তানী বাঈয়ের ছেলে সমশের ছবির অন্যতম কাণ্ডারি। এছাড়া আছেন বাজিরাও ও কাশী বাঈয়ের ছেলে নানাসাহেব। এই ছবিতে তিনি পেশোয়া। এই ছবি যে সময়ের গল্প বলেছে, তখন মারাঠা সাম্রাজ্যের নিশান উড়ছে দক্ষিণ ভারতের প্রায় সর্বত্র। আর এই সাম্রাজ্যের অন্যতম ধারক সদাশিব রাও। সম্পর্কে তিনি বাজিরাওয়ের ভাইপো। এই ছবির গল্প মূলত তাঁকে নিয়েই। সমশের পার্শ্বচরিত্র। মূলত উত্তরে মারাঠাদের অভ্যুথান, দিল্লি জয় ও তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধ নিয়ে ছবিটি তৈরি। তিন ঘণ্টা ছুঁই ছুঁই এই ছবিতে চোরাস্রোতের মতো বিদ্যমান সদাশিব-পার্বতী বাঈয়ের প্রেমকথা। তবে পার্বতী ছবিতে শুধু শো-পিস হিসেবে উপস্থিত নেই। পানিপথের যুদ্ধে তাঁর বড় একটা ভূমিকা ছিল। কান্দাহারের সুলতান আহমেদ শাহ আবদালিকে হিন্দুস্তান বিজয়ে বাধা দিতে সদাশিব যখন দিল্লির দিকে ঘোড়া ছুটিয়েছিলেন, তখন মাঝপথে রসদ শেষ হয়ে গিয়েছিল তাঁর। তখন পার্বতীর প্রচেষ্টাতেই রসদ জোগাড় হয় ও লালকেল্লার মসনদ মারাঠাদের হাতে আসে। ফলে ইতিহাস পার্বতী বাঈয়ের অবদান কখনও অস্বীকার করতে পারে না। তবু ইতিহাস কিয়দাংশে হলেও মানেননি পরিচালক।
ছবিতে দেখানো হয়ে, সদাশিবের যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যুবরণের পর নানাসাহেবের কাছে আহমেদ শাহ একটি চিঠি লিখেছিলেন। সেখানে তিনি সদাশিবের প্রশংসা করে জানান যুদ্ধে তাঁর জয় হয়েছে। কিন্তু এটি তাঁর জীবনে সবচেয়ে কঠিন যুদ্ধ ছিল। এমন সেনাবাহিনী ও সেনা নায়কের সঙ্গে তাঁর মোলাকাত হয়নি। কিন্তু ইতিহাস এমন সাক্ষ্য বহন করে কি? কোথাও কি লেখা আছে আবদালি পুনেতে এমন চিঠি পাঠিয়েছিলেন? এছাড়া ছবির অন্যতম সমস্যা ভাষা। ‘বাজিরাও মস্তানি’ ছবিতে রণবীরের মারাঠি টানের সঙ্গে অর্জুন কাপুরের যথেষ্ট ফারাক। তাঁর মধ্যে থেকে শহুরে ছাপ মোছা সম্ভব হয়নি। চরিত্রে জন্য আরও হোমওয়ার্ক করা জরুরি ছিল অর্জুনের। তবে কৃতী স্যানন ‘বাজিরাও মস্তানি’র কাশী বাঈকে মনে করিয়েছে অনেক জায়গাতেই। বহুদিন পর বড়পর্দায় ফিরলেও পদ্মিনী কোলাপুরি তেমন নজর কাড়তে পারলেন না। সমশের বাহাদুর বা হায়দরাবাদের নিজামদের অনুগত ইব্রাহিম খান গার্দির দিকে আরও একটু নজর দিতে পারতেন পরিচালক।
তবে এই ছবির পাওনা সঞ্জয় দত্ত। ইতিহাস অনুসারে, আফগান সুলতানরা হন খুব নৃশংস ও বর্বর হন। আহমেদ শাহ আবদালির চরিত্রে তা সম্পূর্ণ ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম তিনি। সঞ্জয় দত্তকে দেখে ‘পদ্মাবত’ ছবির আলাউদ্দিন খিলজিকে মনে পড়বে। বিশেষ করে নিজের ভাইয়ের মাথার খুলি যখন তিনি থেঁতলে দেন, তখন বর্বরতা সঞ্জয়ের অভিনয়ে ফুটে বেরোয়। একইভাবে পানিপথ রণাঙ্গন ছেড়ে যখন সেনা পালাচ্ছিল, তখন তাদের আটকাতেও হত্যালীলা চালিয়েছিলেন আবদালি। সঞ্জয়ের অভিনয় সেখানেও অতুলনীয়। তাঁর অভিনয় ছবির পরম প্রাপ্তি। ছবিটি বানানোর ক্ষেত্রে আশুতোষ গোয়াড়িকর স্বকীয়তা বজায় রেখেছেন। তবে ছবিটি ‘মহেঞ্জোদারো’ থেকে ঢের ভাল। অসাধারণ না হলেও জঘন্য লাগবে না ‘পানিপথ’। সিনেমা হলে গিয়ে দেখে আসতেই পারেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.